মাটিতে পড়ে থাকা রহস্যময় বস্তুটি কী? এই একটা প্রশ্নে সারাদিন বুঁদ হয়ে থাকল গোটা গ্রাম। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তর কিন্তু ঠিকঠাক মেলেনি।
জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি ব্লকের গোসাইহাট গ্রাম। সকালে হঠাৎই আকাশে একটি বস্তু উড়তে দেখেন গ্রামবাসীরা। কিছুক্ষণ পর সেটি মাটিতে পড়ে যায়। কৌতূহলে এগিয়ে যান অনেকে। দেখতে পান, সাদা প্যারাসুটে বাধা একটা চৌকো বাক্স, যার সঙ্গে অ্যান্টেনা ও তার জড়ানো। গ্রামীন নিস্তরঙ্গ জীবনে এর কথা ছড়িয়ে যেতে দেরি হয়নি। বাক্সটি সিনেমায় দেখা ভিন গ্রহের যান বা অন্য কোনো জিনিস হতেই পারে! এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু কৌতূহল থাকলেও বাক্সটির গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পাননি কেউ। না জানি কী হবে!
খবর পেয়ে ধুপগুড়ি থানার পুলিশ এসে বাক্সটি থানায় নিয়ে যায়। থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, বস্তুটি হাওয়া অফিসের বেলুন হতে পারে। স্বচক্ষে না দেখলেও বাক্সটির ছবি দেখে সন্দেহ উড়িয়ে দেননি জলপাইগুড়ি আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবপ্রিয় রায়। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে প্যারাসুটে বাঁধা একটি ‘রেডিও সনডি মেশিন’ হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই মেশিনটি ভার্টিক্যালি ১৮.৮ কিলোমিটার অবধি এলাকার আবহাওয়ার তাপ, আর্দ্রতা ও হাওয়ার গতির পরিমাপ করে জিপিআরএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। এরপর আর এই যন্ত্রটির কাজ থাকে না কোনো। সেটি যে কোনো জায়গায় পড়ে যেতে পারে। এই বস্তুটিও সেই ধরনের একটি যন্ত্র হতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তবে সেটিকে চাক্ষুষ করার জন্য পুলিশের কাছ থেকে জিনিসটি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। যদি এটি ‘রেডিও সনডি মেশিন’ হয় তাহলে এর থেকে ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন দেবপ্রিয়বাবু।
রহস্য মিটে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও খুব বেশি খুশি হননি গোসাইহাটের মানুষ। ইস! যদি অদ্ভুতদর্শন বস্তুটি সত্যি কোনো ভিন গ্রহের উড়ন্ত যান হত, আর তার মধ্য থেকে গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসত এক ভিন গ্রহের…। ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেওয়া রোমাঞ্চ অনুভব করছে গোসাইহাটের মানুষ। চায়ের ঠেক থেকে রান্নার হেঁসেল, সব জায়গাতেই এই একই ফিসফাস চলছে সারাদিন।