প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: তিন দিন বয়স থেকেই সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। মা-বাবা চাইতেন বড়ো মনের মানুষ হোক মেয়ে। স্টাইপেন্ডের জমানো টাকা সাধারণের জন্য তুলে দিয়ে তাঁদের সেই স্বপ্নই পূরণ করল দশম শ্রেণির ছাত্রী।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর চুনারিপাড়ার বাসিন্দা পরেশ দত্ত ছাত্র অবস্থা থেকেই বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। স্ত্রী বনানী কুন্ডু বর্ধমানের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাঁদের একমাত্র মেয়ে পূরবী ২০০৫ সালে জন্মানোর তিন দিন বাদেই সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত হয়। তার পর থেকে চিকিৎসা চলে নিয়মিত। কৃষ্ণনগর রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে!
অন্যান্য বন্ধুবান্ধবরা যখন দৌড়ে বেড়াত, তখন সে বন্ধুত্ব করত গাছের সঙ্গে, কথা বলত পাখিদের সঙ্গে, আর সেই বন্ধুত্ব রূপ নিত কবিতায়! এখন অবশ্য ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তাঁর পরিচিতির পরিধি অনেকটাই বেড়েছে, কবি হিসাবে।
সে জানায়, “সোশ্যাল মিডিয়ায় রেড ভলেন্টিয়ারদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হতো, ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করি, কিন্তু শারীরিক কারণে উপায় না থাকলেও, পড়াশোনা করার স্টাইপেন্ডের জমানো টাকা তাদের হাতে তুলে দিলাম। এ সময় সাধারণ মানুষের সমস্যার কিছুটা সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেছি”।
বাবা পরেশ দত্ত আক্ষেপের সুরে বলেন, “কবিতার জন্য সকলে সুখ্যাতি করলেও, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে দূষণ সংক্রান্ত ব্যাপারে, ওর একটি কবিতা নিয়েছিল নিজেদের আগ্রহেই, কিন্তু তার পরে ওকে অনুপ্রেরণা দেওয়া বা উৎসাহিত করার কোনো প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়নি! হয়তো আমার রাজনৈতিক কারণে”!
মা বনানী কুন্ডু জানান, “৩ দিন আগে রাতে শুয়ে ঘুমানোর সময় যখন আমায় প্রথম জানাল ওর সহযোগিতার ইচ্ছার কথা, নিজের মেয়ে বলে নয় গর্ব হচ্ছিল, ওর অনুভূতি এবং সহযোগিতার মানসিকতার জন্য। কারণ আমরা বাবা-মা হিসাবে বরাবরই চেয়েছি মেয়ে বড়ো মনের মানুষ হোক”।
‘রেড ভলেন্টিয়ার দাদা-দিদি’রা পূরবীকে রেড স্যালুট জানিয়ে বলে, “আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল, তবে আজ থেকে কাজের গতি বাড়বে আরও”।
আরও পড়তে পারেন: গোসাবায় আর্তের সেবায় এগিয়ে এলেন কচুয়া লোকনাথ মিশনের সদস্যরা
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।