বীথি কর
“জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না…” ভবাণীপ্রসাদ মজুমদারের বিখ্যাত কবিতাটা এখন যেন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বাবা-মায়েরা এখন যেন কিছুটা গর্ব নিয়েই বলেন যে তাঁদের সন্তানদের বাংলা চর্চা সে ভাবে হয় না।
রমরমিয়ে চলছে পানিহাটি উৎসব ও বইমেলা। সেই বইমেলাতেই স্থান পেয়েছে সাহিত্য পরিবার ‘বনপলাশি’। সবে মাত্র দু’ বছর হয়েছে পথ চলা শুরু করেছে। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলার সাহিত্যজগতে একটা জায়গা করে নিয়েছে তারা।
পানিহাটি উৎসবে স্টল দিয়েছে ‘বনপলাশি’। নিজেদের ত্রৈমাসিক মুখপত্র ছাড়াও রয়েছে সাহিত্যের হরেক সম্ভার। সপ্তাহান্তে মেলায় বেশ ভিড় হয়েছিল। পাঠকদের পা পড়ছিল ‘বনপলাশি’র স্টলেও। সেখানে একজন পাঠকের সঙ্গে কথা বলার পর কিছুটা ধাক্কা খেলাম।

নিজের সন্তানকে বাংলা বইমুখী করাতে রাজি নয় তার মা। সেটা তিনি বলেও দিলেন অকপটে। তাঁর কথায়, “আসলে আমাদেরও কিছু করার নেই। বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভরতি করাতেই হয়। ইংরেজী বই এখন সহজে পাওয়াও যায়। তাই বাংলা বইয়ের সঙ্গে সন্তানদের পরিচয় করানো যায় না।”
ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে পড়া যে এখন যুগের চাহিদা সে কথা স্বীকার করে নেন ‘বনপলাশি’র উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য সুশান্ত রায় কর্মকার। কিন্তু তিনি মনে করেন ইংরেজী চর্চার সঙ্গে নিজেদের মাতৃভাষাটার প্রতিও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত অভিভাবকদের। তাঁর কথায়, “বাংলার প্রতি ছোটোরা যদি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তা হলে এই ভাষাটা অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।”

পাঠকদের প্রতি সুশান্তবাবুর আবেদন, “বাংলায় প্রচুর সম্পদ আছে। প্রচুর সাহিত্য আছে, সেগুলির সঙ্গে ছোটোদের পরিচয় করাতে হবে। ছোটোরা ইংরেজী শিখুক, কিন্তু বাংলাকেও চর্চায় রাখতে হবে তো। তা হলেই তারা প্রকৃত শিক্ষা পাবে।”
ছোটোদের আকর্ষণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে ‘বনপলাশি।’ এটা এমনই এক পত্রিকা যেখানে সব প্রজন্মের সাহিত্য স্থান পায়। শুধুমাত্র শিশুদের কথা মাথায় রেখে এবং তাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য এই পত্রিকায় একটি বিভাগ রয়েছে, ‘ছোটোদের অমলতাস।’ খুদেদের লেখা গল্প, কবিতা, কমিক্স, নান্দনিক চিত্রকথা ফুটে ওঠে এখানে।
তবে সব ছবিই হতাশার নয়। অনেক ছবিই পাওয়া যায় যা যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। সাড়ে পাঁচ বছরের শিশু তৃণাভ বিশ্বাস। ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে পড়া শিশুটি তাঁর মায়ের হাত ধরে ‘বনপলাশি’র স্টলে পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁদের বাড়িতে বাংলার চর্চা যথেষ্ট এবং সেই কারণেই ছোট্ট ওই শিশুর বাংলা বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট, এমনই জানালেন ওর মা।

তৃণাভদের মতো শিশু আর তাঁদের অভিভাবকরা আছে বলেই হয়তো বাংলা ভাষাটা থেকে যাবে। অবলুপ্তি হবে না। ইংরেজি চর্চা আর বাংলা চর্চা, দু’টোকেই সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিনা কর্ষণে সূর্যমুখী চাষ, পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু সুন্দরবনের মথুরাপুরে
বিরতি কাটিয়ে ফিরবে কনকনে ঠাণ্ডা, কবে
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।