দীপঙ্কর ঘোষ
আদিগন্ত বিস্তৃত রেললাইন ধরে কিছু সারিবদ্ধ মানুষ এগিয়ে চলেছেন। কমবয়সি যুবক-যুবতী থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা বয়স্ক মানুষটাও চলছেন সমান তালে। না এঁরা অভিবাসী শ্রমিক নন, এঁরা স্বাস্থ্যকর্মী। চলেছেন বিদ্যাধরপুরের দিকে। পিঠে বাঁধা ওষুধপত্র-ভরতি ব্যাগ, মুখে মুখোশ। এঁরা মানুষ হওয়ার সাধনায় রত।

উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার (North 24 Paraganas, South 24 Paraganas) মানুষ প্রলয়-ঝড়ের পরে বড়ো দুঃখে আছে। রাস্তাও নেই যে অবরোধ করবে – রেলগাড়ি চলছে না – জল নেই – পুকুর প্লাবিত – বহু জায়গায় লকডাউনের (lockdown) সময় থেকেই রেশনের দোকান বন্ধ। আমাদের নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা এদের খোঁজ রাখেনি।
শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ (Shramajibi Swasthya Udyog) আর ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের (ডব্লিউবিডিএফ, WBDF) সামান্য প্রচেষ্টা চলছে এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার, পুকুরের জল পরিশ্রুত ও লবণমুক্ত করার।
আজ রবিবার স্বাস্থ্যসেবকদের গন্তব্য ছিল বিদ্যাধরপুর, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি আর পশ্চিম জয়গ্রাম ।
মিনাখাঁয় (Minakha) যে সব স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসক গিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁদের কথা তাঁদের জবানিতে শোনা যাক –
উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁর কাছে গ্রাম জয়পুর। ঘূর্ণিঝড় উম্পুনে বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই বিধ্বস্ত সিলিকোসিসে (সিলিকোসিস ফুসফুসে খাদানের ধুলোগুঁড়ো জমে হয়। এটা একটা অকুপেশনাল ডিজিজ)। ২০০৯-এর আয়লার পর কাজের খোঁজে এই গ্রামের অনেক পুরুষ, এমনকি কিছু নারীও বর্ধমান-বীরভূমে যান পাথর খাদানে, ফিরে আসেন শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চালানো খাদানের মিহি গুঁড়ো গুঁড়ো ধুলো ফুসফুসে জমে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে। এই রোগে ইতিমধ্যেই অনেকে মৃত, অনেকেই এগিয়ে চলেছেন মৃত্যুর দিকে।

এই গ্রামে আজ চিকিৎসা-ত্রাণ পৌঁছোতে গিয়েছিল শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম ও স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণ-এর চিকিৎসা-দল। মিনাখাঁয় প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা করেন তাঁরা।
শিবিরের আয়োজন করেন সিলিকোসিস ও অন্য পেশাগত রোগের বিরুদ্ধে কোঅর্ডিনেশন কমিটি।
(প্রতিবেদক একজন চিকিৎসক)
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।