শনিবার সন্ধ্যা। ঘড়িতে তখন সাতটা পেরিয়েছে। হঠাৎই আগুন লেগে যায় বারাসতের বামুনমুড়া কদম্বগাছি এলাকার একটি কারখানায়। মুহূর্তে চারপাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়, শোনা যায় একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ। আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানার ভিতরে সিলিন্ডার ফেটে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অনুমান। তবে এখনও পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, দমকলের ১৮টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে, তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।
দমকলকর্মীর অসুস্থতা, স্থানীয়দের ক্ষোভ
অগ্নিনির্বাপণে নেমে এক জন দমকলকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আপাতত সুস্থ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দমকলে সময়ে খবর দিলেও তারা দেরিতে পৌঁছয়, যার জেরে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।
তাঁদের আরও দাবি, শুধু কারখানা নয়, পাশে থাকা গোডাউনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক মালপত্র পুড়ে যায়। সেখানে রঙের কারখানা ছাড়াও আরও এসি সহ কয়েকটি অন্যান্য পণ্যের গোডাউন রয়েছে বলে খবর।
কারখানায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না?
ঘটনাস্থলে রাত ১১টা নাগাদ পৌঁছন দমকলের ডিজি। তিনি বলেন, “আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এখন আর নেই। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে।”
তাঁর কথায়, প্রাথমিক তদন্তে কারখানায় কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না বলেই ধারণা। যদিও তিনি স্পষ্ট করেছেন, “সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আগুন নেভানোই আমাদের প্রথম লক্ষ্য, পরে তদন্ত করে দেখা হবে।”
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি দমকল এবং প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
উঠছে আরও প্রশ্ন
কারখানার লাইসেন্স, অগ্নিনির্বাপক নীতি মানা হয়েছিল কি না, সিলিন্ডার বা দাহ্য পদার্থ ঠিকভাবে সংরক্ষিত ছিল কি না—এই সমস্ত দিক এখন প্রশাসনের তদন্তের বিষয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, “এমন বিপজ্জনক বস্তু থাকা সত্ত্বেও কেন আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?”
এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
যদিও বড় কোনও প্রাণহানির খবর মেলেনি এখনও পর্যন্ত, কিন্তু একটি বিস্ফোরকভর্তি কারখানায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার ঘাটতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বারাসতের এই ঘটনা।