বারাসাত: সম্পত্তির বিবাদ এবং তালগাছের ফল ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদ জেরেই বালক ভাইপো খুন করেন জেঠু। ফারদিন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত জেঠু আঞ্জিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা তার পুরো পরিকল্পনা ফাঁস করেছেন।
ফারদিনের বাবা গোলামের সঙ্গে আঞ্জিবের দীর্ঘদিনের সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। ৭ জুন তালগাছের ফল ভাগাভাগি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেই সময় ফারদিন তার জেঠু আঞ্জিবের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় আঞ্জিব তার উপর রেগে যান এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আঞ্জিব তাঁর ভাইকে খুন করতে না পেরে ফারদিনকেই সহজ শিকার হিসেবে বেছে নেন।
পুলিশ সুপার জানান, আঞ্জিব ৮ জুন থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং একটি কাপড় সংগ্রহ করে নিজের ব্যাগে রেখে দেন। ৯ জুন আঞ্জিব ফারদিনকে বাড়ির পিছনে নিয়ে গলা টিপে খুন করেন এবং তার দেহ পাশের বাড়ির পরিত্যক্ত শৌচাগারে ঝুলিয়ে দেন, যাতে মনে হয় ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। ১০ জুন থেকেই আঞ্জিব ভুয়ো তথ্য ছড়াতে শুরু করেন।
আঞ্জিব মসজিদে আজান দেওয়ার কাজ করতেন। এই পেশার সুযোগ নিয়ে তিনি এলাকায় গুজব ছড়ান যে ছেলেধরা এসেছে এবং ফারদিনকে খুন করে তার কিডনি ও চোখ বার করে নিয়েছে দুই মহিলা, যারা সম্প্রতি কাজিপাড়ায় এসেছে। এই গুজবের ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে বারাসাত সহ আশেপাশের এলাকায় একাধিক গণপিটুনির ঘটনা ঘটে।
প্রথম থেকেই পুলিশ আঞ্জিবকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল। তার বারবার বয়ান বদলের কারণে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায়। ম্যারাথন জেরার মুখে আঞ্জিব ভেঙে পড়ে এবং তার দোষ কবুল করেন। পুলিশের এই তদন্তে ফারদিন হত্যা মামলার আসল ঘটনা উদ্ঘাটিত হয় এবং আঞ্জিবের ছড়ানো গুজবের জল কতদূর গড়িয়েছে তা স্পষ্ট হয়।
পুলিশের সক্রিয় তদন্তে ফারদিন হত্যা রহস্যের জট খুলেছে এবং দোষী আঞ্জিবকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। তবুও, এই ঘটনায় ছড়ানো গুজবের কারণে বারাসাত ও আশেপাশের এলাকায় যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা সামাল দেওয়াই পুলিশের অন্যতম কাজ।