কলকাতা: প্রয়াত হলেন সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
‘কেয়াপাতার নৌকো’-সহ দেড়শোর বেশি উপন্যাস-গল্পের স্রষ্টা প্রফুল্ল রায় গত কয়েক মাস ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটছিল বলে তাঁর আত্মীয়দের সূত্রে জানা যায়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেখানেই মারা গেলেন তিনি।
১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার ঢাকা-বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে জন্ম প্রফুল্ল রায়ের। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে চলে আসেন এপার বাংলা। কলকাতাই হয় তাঁর স্থায়ী বসত। শুরু হয় তাঁর সাহিত্যসাধনা। ১৯৫৪ সালে একটি সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প ‘মাঝি’। তার পর থেকে টানা ৬৬ বছর প্রফুল্ল রায় সাহিত্য সৃষ্টি করে এসেছেন। বেশ কিছু দিন নাগাল্যান্ডে ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’ প্রকাশিত হয়।
প্রফুল্ল রায়ের অমর সৃষ্টিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘কেয়াপাতার নৌকো’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘নোনা জল মিঠে মাটি’, ‘আকাশের নীচে মানুষ’, ‘রাজা আসে রাজা যায়’, ‘সিন্ধুপারের পাখি’, ‘একটা দেশ চাই’ ইত্যাদি। তাঁর লেখায় মূর্ত হয়ে উঠত দেশভাগের যন্ত্রণা, উদ্বাস্তুদের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। একাধিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে — সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, রামকুমার ভুয়ালকা পুরস্কার, শরৎ স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি।
প্রফুল্ল রায়ের বহু উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র হয়েছে। তাঁর উপন্যাস থেকে প্রথম ছবিই সুপারহিট। ‘এখানে পিঞ্জর’, যার নায়ক ছিলেন উত্তমকুমার। উত্তম অভিনয় করেছিলেন লেখক-সাহিত্যিকের ভূমিকায় । প্রফুল্ল’র ‘প্রথম তারার আলো’ উপন্যাসের নাম পাল্টে তৈরি হয় ‘বাঘবন্দি খেলা’। উত্তমকুমার সেই ছবিতে এক সাংঘাতিক চরিত্রে। প্রফুল্ল রায়ের কাহিনি থেকে ছবি তৈরি করেছেন তপন সিংহ থেকে গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত থেকে হরনাথ চক্রবর্তী, বীরেশ চট্টোপাধ্যায় থেকে রাজা সেন। তাঁর লেখা খানতিরিশেক উপন্যাস এবং ছোটো-বড়ো গোটাদশেক গল্প মিলিয়ে বাংলা, হিন্দি ও ওডিয়া ভাষায় চল্লিশের কাছাকাছি ছবি, টেলিফিল্ম, টেলি সিরিয়াল, সোপ হয়েছে। পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি প্রায় ২৫টি।