পশ্চিমবঙ্গে এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণের সুব্যবস্থা থাকায় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার কথা ছিল। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন রপ্তানি নীতির ফলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার: বাজারে প্রভাব পড়বে?
১ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ২০ শতাংশ শুল্ক তুলে নিচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ থাকলেও, ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের স্বার্থে এই শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। কিন্তু এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
রাজ্য সরকারের খাদ্যসামগ্রী সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, “রপ্তানি বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় বাজারে জোগান কমবে। এর ফলে আগামী মাসগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে।”
বাংলার পেঁয়াজ এবার বাংলাদেশে?
বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজের বিশাল চাহিদা রয়েছে। এতদিন সেখানে মূলত মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হতো। কিন্তু এবার রাজ্যে উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং পরিবহন খরচ কম পড়ায় বাংলার পেঁয়াজই বাংলাদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জানান, “মহারাষ্ট্র থেকে আমদানি করলে প্রতি কেজিতে ১০-১২ টাকা বেশি পড়ে। কিন্তু রাজ্যের পেঁয়াজ কম খরচে পাঠানো সম্ভব। তাই এবার অনেক রপ্তানিকারী পশ্চিমবঙ্গ থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন।”
সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ, তবু আশঙ্কা!
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ১৪০০ পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি হয়েছে, যেখানে ৫ লক্ষ টনের বেশি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। সরাসরি সরকারি উদ্যোগে ৯০০-র বেশি সংরক্ষণাগার তৈরি হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে এক পর্যালোচনা বৈঠকে মার্চের মধ্যেই সংরক্ষণাগারগুলি চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, এত সংরক্ষণ সুবিধা থাকার পরও কি দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? বিশ্লেষকদের মতে, যদি রপ্তানি ব্যাপক হারে বাড়ে, তবে স্থানীয় বাজারে সংকট তৈরি হতে পারে এবং এর ফলে খুচরো বাজারে দাম লাফিয়ে বাড়তে পারে।
এখন কত দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ?
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে স্থানীয় পেঁয়াজ খুচরোতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা প্রতি কেজি দরে, যেখানে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা কেজি।
কিন্তু যদি বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়ে এবং রাজ্যের বাজারে সরবরাহ কমে যায়, তবে এই দাম ৪০-৪৫ টাকা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
জনসাধারণের উদ্বেগ বাড়ছে
বাজারে এখনো পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, ভবিষ্যতে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে ক্রেতারা আশঙ্কা করছেন। একজন খুচরো ক্রেতা জানান, “আগের বছরগুলোর মতো যদি পেঁয়াজের দাম ৮০-১০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলে, তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।”
সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্য সরকার যদি অভ্যন্তরীণ বাজারে জোগান নিশ্চিত করতে কিছু পরিমাণ পেঁয়াজ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এই মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হতে পারে।
আগামী সপ্তাহগুলিতে রপ্তানি বাড়লে এবং সরবরাহ কমে গেলে, রাজ্যের পেঁয়াজের বাজারে বড়সড় মূল্যবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।