কলকাতা: শান্তি মিছিলের রেশ কাটতে না কাটতেই গত কাল ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। আর আজ বিকেলে সমস্ত সীমা অতিক্রম করল ভাঙড়ের দুষ্কৃতী দৌরাত্ম। প্রকাশ্য রাস্তায় হাতে বোমা-বন্দুক নিয়ে ছোটাছুটি থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর সবই দেখল পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনে উত্তাল ভাঙড়। যদিও পুলিশ ঘটনার কথা মানতে চায়নি।
গত কাল এক দিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কৃষকদের প্রশংসা করে তাঁদের পরিশ্রমের সার্থক স্বীকৃতি দিচ্ছেন তখনই অন্য আর দিকে চলছে কৃষি জমি রক্ষা ও শিল্প স্থাপনের চরম সংঘর্ষ। পুড়ছে সারি সারি গাড়ি, প্রায় ডজনখানেক বাড়ি। বোমার আঘাতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন পাঁচ জন।
পুরনো বছরে সৃষ্টি হওয়া ভাঙড়-ক্ষত সারাতে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনায় বসেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকী নিজের দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে এক জোট হয়ে শান্তি বজায় রাখার মিছিলেও নামিয়েছেন। তবুও থামছে না ভাঙড়ের তথাকথিত জীবন-জীবিকা ও জমি রক্ষার আন্দোলন। গত কালই দুষ্কৃতীদের আক্রমণে আহত হয়েছেন পাঁচ জন।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভাঙড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত পাওয়ার গ্রিড নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমেছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু বহিরাগত কিছু জমি আন্দোলন নেতার ইন্ধনে সেই ক্ষোভ পরিণত হয় বিক্ষোভ-মিছিলে। গত কাল বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রায় জনা পঞ্চাশের একটি সশস্ত্র বাহিনী ভাঙড়-২ ব্লকের খামারাইত ও পদ্মপুকুর গ্রামে হামলা চালায়। অভিযোগ উঠছে, শাসক দল তৃণমূলই এই আচমকা হানার নেপথ্যে রয়েছে।
আবার স্থানীয় বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা বলেছেন, তাঁরা যখন একটি মিছিলের আয়োজন করছিলেন তখন পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের কিছু লোকজন তাঁদের উপর আক্রমণ করে। বৃহস্পতিবার রয়েছে জমি কমিটির জনসভা আবার আগামী ৭ জানুয়ারি তৃণমূলের জনসভা। এর আগের সভাতেও দু পক্ষই নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আগামী সভাগুলিতেও তাই হবে।
অভিযোগ, জমি কমিটির সভাকে সামনে রেখেই আজ বিকেলে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাঙড়। তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। উল্টো দিকে জমি কমিটির লোকজন হামলার দায় তৃণমূলের উপরেই চাপাচ্ছে।
সব থেকে বড়ো কথা, প্রশাসনের তরফে স্থানীয় মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই আয়োজন যে পর্যাপ্ত নয়, সে কথা স্বীকার করে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হোক বলে দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর পুলিশ বলছে, ভাঙড়ের এই ছবি আজকের নয়। পুরনো ছবি দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।