দুর্গা পার্বণ
পশ্চিম বর্ধমানের খান্দরার বকশিবাড়ি বৈষ্ণবধারার হলেও পুজোয় বলিদান হয় দেবীরই আদেশে

শুভদীপ রায় চৌধুরী
দুর্গাপুজোয় নানা রীতি, নানা আচার পালন করা হয় বিভিন্ন বনেদিবাড়িতে। কোথাও দেবীর ভোগে অন্ন থাকে, আবার কোথাও দেবীকে লুচিভোগ দেওয়া হয়। মৃন্ময়ী মূর্তির ক্ষেত্রেও বিশেষত্ব দেখা যায়। যেমন, কোথাও তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী আবার কোথাও তিনি সিংহবাহিনী।
বঙ্গের পুজোয় কুলাচারের নিয়ম প্রতিটি বাড়িতেই বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এবং এটাই বঙ্গের সংস্কৃতি যা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অগণিত ভক্ত। তেমনই পশ্চিম বর্ধমানের বকশিবাড়িতে দেবীর পদতলে বিরাজ করেন সিংহের পরিবর্তে বাঘরাজ। এই বাড়ির পুজো প্রায় ২৬২ বছরের পুরোনো।
পশ্চিম বর্ধমানের খান্দরার বকশি বংশের আদিপুরুষ কিশোরীমোহন দাস ছিলেন বৈষ্ণবভক্ত। বর্ধমানের মহারাজাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। নানা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন কিশোরীবাবু। তাঁর সেই ক্ষমতা দেখে তাঁর সাধ্যমতো উপকার করার প্রতিশ্রুতিও দেন বর্ধমানের মহারাজা। এর পর কিশোরীমোহন দাস সস্ত্রীক বৃন্দাবনে যান এবং সেখানেই তাঁর স্ত্রী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। পুত্রের নাম রাখা হয় গোবর্ধন। এই গোবর্ধন দাস ছিলেন বীর যোদ্ধা এবং প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। বর্ধমানের মহারাজা তাঁর অসীম ক্ষমতা দেখে তাঁকে প্রধান সেনাপতির পদে নিযুক্ত করেন এবং তাঁকে বকশি উপাধি প্রদান করেন। গোবর্ধন দাসের সূত্রেই সূচনা হল বকশি বংশের।
১৭৫৭ সালের পরবর্তী সময়ে দেশীর রাজাদের সঙ্গে ইংরেজদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময় গোবর্ধন বকশি ছিলেন বর্ধমান মহারাজার প্রধান সেনাপতি। যুদ্ধ চলাকালীন গোবর্ধনবাবু একদিন মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। মা তাঁর মূর্তিপূজা শুরু করতে বলেন। মা বলেন, তাঁর মূর্তিপূজা করলে তিনি তাঁকে এবং তাঁর বংশকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। মা স্বপ্নাদেশেই জানিয়ে দেন, তাঁর যে মৃন্ময়ীরূপের পুজো হবে, সেই রূপ তিনি দাঁইহাটের এক শিল্পীকে স্বপ্নাদেশে বর্ণনা করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিজয়নগরের গাছতলায় তাঁর যে শিলামূর্তি রয়েছে, তা এনে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করারও আদেশ দেন মা।

এর পর দেবীর আদেশানুসারে গোবর্ধন বকশি শিলামূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং দাঁইহাটের শিল্পীর সাহায্যে মূর্তি তৈরি করে শুরু করেন বংশের দুর্গাপুজো, যা আজও বংশপরম্পরায় চলে আসছে।
এই বাড়ির পুজো শুরু হয় রথের দিন মায়ের কাঠামোয় মাটি দিয়ে। এই বাড়ির মূর্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল দেবীর ডান পাশে থাকেন শ্রীলক্ষ্মী ও কার্তিক এবং বাঁ পাশে থাকেন দেবী সরস্বতী ও গণেশ। দেবীর দুর্গার আটটি হাত ছোটো, কাঁধে বসানো এবং বাকি দুটি হাত স্বাভাবিক। ছোটো আটটি হাতের অস্ত্র মাটির এবং ত্রিশূলটি রুপোর তৈরি। এই বকশিবাড়িতে মায়ের বাহন হলেন বাঘ।
বকশি পরিবার বৈষ্ণব হলেও দেবীর আদেশে বলিদান প্রথা পালন করা হয় বলে জানালেন পরিবারের সদস্য শুভদীপ বকশি। দুর্গাপুজোর সপ্তমী ও মহাষ্টমীতে একটি করে ছাগ এবং মহানবমীতে তিনটি ছাগ, একটি মহিষ, চালকুমড়ো এবং আখ বলিদান হয়। এই বাড়ির দেবীকে কোনো শাড়ি পরানো হয় না। পুরো সাজটাই হয় রাজস্থানী ঘাঘরা দিয়ে। মায়ের মন্দিরের ভেতরে কোনো বেদি নেই। দেবীর আদেশে মন্দিরের ভেতরের মেঝেটি পুরোটাই মাটির।
বকশিবাড়ির পুজোয় ১২০ জনেরও বেশি ঢাকি আসেন। ঢাকের লড়াই চলে গ্রামের সরকারবাড়ির সঙ্গে বকশিবাড়ির। এ এক চিরন্তন প্রথা। বকশিবাড়িতে পুজোর সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় – নাচ, নাটক, গান ইত্যাদি। বকশিবাড়ির খ্যাপা মাকে দর্শন করতে মানুষ ছুটে আসেন দূরদূরান্ত থেকে, জড়ো হন এ বাড়ির ঠাকুরদালানে। পুজোর চার দিন ঠাকুরদালানে ভক্তদের ভিড় দেখার মতন।
বকশিবাড়ির কুলদেবতা হলেন গোপাল। পুজোর সময় মায়ের সামনে গোপালকে রেখে তাঁর পুজো করা হয়। এই ভাবে পুজোর নানা প্রথা আঁকড়ে রেখে এবং সাবেক ঐতিহ্য মেনে আজও পুজো হয় বকশিবাড়ির খ্যাপা মায়ের।
খবর অনলাইনে আরও পড়তে পারেন
দঃ ২৪ পরগনা
মা ও শিশুসন্তানদের জন্য কাপড় ও খাবার নিয়ে হাওড়ার বালিতে ‘সহমর্মী’
মৃন্ময়ী ‘মা’ যখন মণ্ডপে ২৫ লক্ষ টাকার গয়নায় সুসজ্জিত, তখন তাঁর সন্তানেরা দু’ মুঠো অন্নের আশায় ঝাড়খণ্ড থেকে এসে বালির ইটভাটায় লড়াই করে চলেছে।

সুব্রত গোস্বামী
রাস্তায় একটা ব্যানারে হঠাৎ চোখ পড়ল। তাতে লেখা – ‘প্রতিমাতেই শুধু মা দুর্গা নন, প্রতি-মাতেই মা দুর্গা’। এই অনুভবেই বিশ্বাসী গড়িয়া সহমর্মী সোসাইটি (Garia Sahamarmi Society)।
পুজো উপলক্ষ্যে মায়েদের হাতে নতুন কাপড় তুলে দেওয়ার জন্য সহমর্মী হাজির হয়ে গিয়েছিল বালির কিছু ইটভাটা-সহ কাছাকাছি কয়েকটি অঞ্চলে। মৃন্ময়ী ‘মা’ যখন মণ্ডপে ২৫ লক্ষ টাকার গয়নায় সুসজ্জিত, তখন তাঁর সন্তানেরা দু’ মুঠো অন্নের আশায় ঝাড়খণ্ড থেকে এসে বালির ইটভাটায় লড়াই করে চলেছে।

ইটভাটায় গিয়ে যা দেখা গেল, তা কোনো ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ৬ ফুট বাই ৮ ফুট একটা ছোট্ট ঘরে কোনো রকমে এঁরা বাস করছেন। করোনাকালে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। শারীরিক দূরত্ববিধি মানা এঁদের কাছে বিলাসিতা।
সেই ছোট্ট ঘরে একটাও জানলা নেই। মেঝেতে পড়ে আছে ছোট্ট শিশুর দল। দেখলে মনে হয়, আফ্রিকার কোন দেশ থেকে এসেছে। এই আমাদের আধুনিক ভারত! চাঁদের মাটিতে আমরা যখন চন্দ্রযান পাঠাতে ব্যস্ত, তখন আমারই দেশের মানুষের এই চরম দুর্ভোগ।
বালির বিআইভিএ (BIVA), তার পর বিবিএ (BBA), বিএনএস (BNS) ও বিবিএ২ (BBA2) ইটভাটা এবং বিদ্যাসাগর কলোনিতে পৌঁছে গিয়েছিল ‘সহমর্মী’। ‘সহমর্মী’ পৌঁছে গিয়েছিল বেলানগরের ভগবানের ভাণ্ডারে।
বালির ওই সব জায়গায় ইটভাটায় ৫০ জন মহিলার হাতে শাড়ি ও খাবার এবং ১০০ জন শিশুর মুখে খাবার তুলে দেওয়া হল ‘সহমর্মী’র পক্ষ থেকে।

শুধুই বালির ইটভাটাই নয়, ‘সহমর্মী’-র আয়োজনে মহাষ্টমীর দিন গড়িয়া গড়াগাছায় ১৪০ জন শিশুর হাতে দুপুরের খাবার তুলে দেওয়া হল। এখানকার ছোট্ট দুগ্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশদের হাতে পুজোর নৈবেদ্য তুলে দিতে পেরে ‘সহমর্মী’ ধন্য ও ঋদ্ধ হল।
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
পিতৃমাতৃহীন শিশুদের নিয়ে পুজোর দিনে ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর অভিনব উদ্যোগ
কলকাতা
পিতৃমাতৃহীন শিশুদের নিয়ে পুজোর দিনে ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর অভিনব উদ্যোগ

খবরঅনলাইন ডেস্ক: উৎসব মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দ আরও জোরদার হয়ে ওঠে যখন সঙ্গে থাকে প্রিয়জনেরা! সেই প্রিয়জনদের খোঁজার প্রচেষ্টাতেই ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ (Durga and Friends) একত্রিত করেছে ছোটো ছোটো কিছু পিতৃমাতৃহীন শিশুকে, যারা এক সঙ্গে বড়ো হয়ে উঠছে এই হাউসে।
আর এই ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-কে সঙ্গ দিয়েছেন কিছু বন্ধু যাঁরা এই ছোট্ট বন্ধুদের তাঁদের মা-বাবার অভাব কোনো দিন বুঝতে দেননি।

এই মহৎ প্রচেষ্টার সঙ্গে যিনি নিজেকে প্রথম যুক্ত করেছেন তিনি শ্যামসুন্দর জুয়েলার্স-এর পরিচালক মাননীয় রূপক সাহা। এবং তাঁর সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন সত্যেন্দ্রনাথ মিশ্রা, সুরজিৎ কালা সোহো প্রমুখ।
প্রতি বছর এই খুদে বন্ধুদের সঙ্গে দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট দিন সকলে উপভোগ করেন অঞ্জলি দিয়ে, প্যান্ডেল ঘুরে এবং এক সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন করে।
কিন্তু এই বছরটা একটু আলাদা! করোনার কবল থেকে বাঁচাতে এই বার এগিয়ে এল লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস-এর (Loharuka Green Oasis) আবাসিকবৃন্দ। এই বছর ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর ছোট্ট বন্ধুরা আমন্ত্রিত হলেন লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস-এর আবাসিকদের সঙ্গে একটি দিন উপভোগ করার জন্য!

আবাসিক প্রাঙ্গণের দুর্গাপূজায় যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়ে খুব খুশি ছোট্ট শিশুরা। তারা আবাসিক প্রাঙ্গণের অন্য শিশুদের সঙ্গে দিনটা কাটাল অঞ্জলি, খেলাধুলা ও খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে।
আবাসিকদের তরফ থেকে সভাপতি দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী জানালেন, পরবর্তী সময়েও লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর পাশে থাকবে।
শারদোৎসব মানেই যে মেলবন্ধন, সেই সত্যি আরও প্রমাণ করে দিলেন লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস-এর আবাসিকরা এবং ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’।
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় সচেতনতার পরীক্ষায় উতরে গেল কলকাতা
কলকাতা
দুর্গাপুজোয় সচেতনতার পরীক্ষায় উতরে গেল কলকাতা
পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই, ঘরবন্দি থেকে বা নিদেনপক্ষে পাড়াবন্দি থেকে, এ বার দুর্গাপূজা উদযাপন করল কলকাতা

বিশেষ প্রতিনিধি: ভালো ভাবেই পাশ করে গেল কলকাতা (Kolkata) । আশঙ্কা ছিল, বাঙালির সব চেয়ে প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোর টানে কোভিড সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ উড়িয়ে দিয়ে বেসামাল হয়ে যাবে মহানগর। ফলত আরও বাড়বে করোনা সংক্রমণ।
দুর্গাপুজোর এই পাঁচ-ছ’ দিনে করোনা সংক্রমণ বাড়ল কি না, তা বোঝা যাবে দিন কয়েক পর। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই, ঘরবন্দি থেকে বা নিদেনপক্ষে পাড়াবন্দি থেকে, এ বার দুর্গাপূজা (Durgapuja 2020) উদযাপন করল কলকাতা।

মহানবমীর বিকেলে আরও এক দফা নগর পরিক্রমায় বেরোনো হল। গন্তব্য ছিল উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেরে দক্ষিণের প্রান্তিক এলাকা।
কলকাতার অন্যতম প্রাচীন সর্বজনীন পুজো সিমলা ব্যায়াম সমিতি বিবেকানন্দ রোডে। এই পুজো ছাড়াও এই রাস্তায় রয়েছে বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, চালতাবাগান সর্বজনীনের মতো বেশ প্রাচীন বিখ্যাত সর্বজনীন পুজো।

মহানবমীর বিকেলে বিবেকানন্দ রোড আর পাঁচটা সাধারণ দিনের থেকেও শুনশান। সব মণ্ডপেই ঝুলছে প্রবেশ নিষেধ বোর্ড। হাতে গোনা কয়েক জন দর্শনার্থী মণ্ডপের বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শন করে চলে যাচ্ছেন। কোনো কোনো প্রতিমার দর্শন হচ্ছে গাড়িতে বসেই। যে হেতু রাস্তায় তেমন ট্রাফিক নেই, তাই পুলিশের বাধাও নেই।
মানিকতলা মোড় পেরিয়ে বাঁ হাতি রাস্তা রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট। একটু যেতেই ডান দিকে পড়ল লালাবাগান সর্বজনীন। গাড়িতে বসেই এমন সুন্দর প্রতিমা দর্শন হবে ভাবাই যায়নি। ওই ব্যস্ত রাস্তায় স্বচ্ছন্দে গাড়ি দাঁড় করানো হল, প্রতিমা দর্শন হল, ছবি তোলা হল অবাধে। ভাবা যায়?

একটু এগিয়ে লালাবাগান নবাঙ্কুর-এর পুজো, একটু ভিতরে। গাড়ির জন্য রাস্তা বন্ধ। গুটি গুটি পায়ে চলেছেন নামমাত্র দু’-চার জন দর্শনার্থী।
রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে ডান দিকের পথ ধরা হল উলটোডাঙা মোড়ের উদ্দেশে। বাঁ দিকে পড়ে থাকল গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন। অরবিন্দ সেতু পেরিয়ে উলটোডাঙা মোড়গামী এই রাস্তা পুজোয় অগম্য হয়ে যায়। গাড়ি তো দূরের কথা, পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে ওঠে।
এই রাস্তার আশেপাশের গলিতে বহু বিখ্যাত পুজো আয়োজিত হয় – কবিরাজ বাগান সর্বজনীন, করবাগান সর্বজনীন, উলটোডাঙা পল্লিশ্রী, তেলেঙ্গাবাগান, শুঁড়ির বাগান সর্বজনীন ইত্যাদি। এই পথ ধরে এই মহানবমীর বিকেলে একেবারে অবাধ যাত্রা। পথে নতুন পোশাক পরে কিছু মানুষ চলেছেন প্রতিমা দর্শনের উদ্দেশ্যে।

অন্যান্য বার এই বারোয়ারি পুজোগুলো দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় উলটোডাঙা মোড়গামী মূল সড়ক থেকেই। এক একটা পুজো দেখা সাঙ্গ করতে সময় লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর এ বার মণ্ডপের পথে ক’ জন হেঁটে চলেছেন, তা বোধহয় গুনে ফেলা সম্ভব।
উত্তরের পুজো কেমন হচ্ছে তার একটা আন্দাজ পাওয়া গেল। শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ফেরার পথে মনে হল একবার রাসবিহারী কানেক্টরে বোসপুকুর শীতলামন্দিরের পুজো দেখে আসা যাক। উনিশ বছর আগে মাটির ভাঁড়ের পুজো করে বিখ্যাত হয়েছিল বোসপুকুর। সেই খ্যাতি তারা আজও ধরে রেখেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এই প্রতিমা দর্শন করতে হয়।

সেই বোসপুকুর শীতলামন্দির অবাক করল। রাসবিহারী কানেক্টরের একেবারে মণ্ডপের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিমাদর্শন হল, ছবিও তোলা হল, পুলিশের নজরদারিতেই।
মহাসপ্তমী ও মহানবমীতে মহানগর পরিক্রমা করে বোঝা গেল হাতে গোনা কয়েকটি বিখ্যাত পুজো ছাড়া সর্বজনীন পুজোগুলো এ বার মোটামুটি ফাঁকাই থেকেছে। কলকাতাবাসী এ বার মোটামুটি ভাবে নিজের পাড়ার পুজোটিই দেখেছেন। পাড়ার চৌকাঠ পেরিয়ে দূরে পাড়ি জমাননি। আর যতটুকু অফিস-কাছারি চলছে, পুজোয় তা-ও বন্ধ। তাই এই আনলক পিরিয়ডেও বাস যে ভিড় দেখা যায়, দুর্গাপুজোর এ ক’ দিন তা-ও দেখা গেল না। সারা দিনই বাস একেবারেই ফাঁকা, তাই বেশি রাত পর্যন্ত বাসও চলেনি।
আনলক পিরিয়ডে নানা রকম বাধানিষেধের মধ্যে চলা মেট্রো রেল যত যাত্রী পরিবহণ করেছে, পুজোর দিনগুলোতে তার অর্ধেকও করেনি। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, সপ্তমীর দিন তাঁদের পরিষেবা ব্যবহার করেছেন ৩৪ হাজার যাত্রী। অথচ পঞ্চমীর দিন মেট্রোয় যাত্রীসংখ্যা ছিল ৮৪,৮০১ জন। মোটামুটি একই ছবি দেখা গিয়েছে, মহাষ্টমী ও মহানবমীতেও।

মেট্রো আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ট্রেনে বা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কোনো ভিড়ই ছিল না। তা ছাড়া অন্যান্য বারের মতো এ বারে বেশি রাত পর্যন্ত মেট্রো চালানোও হয়নি।
কলকাতার পুজো দর্শনার্থীদের একটা বড়ো অংশ আসেন কলকাতার আশেপাশের জেলা থেকে। এ বার লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁদেরও বেশির ভাগ মহানগরে আসেননি। পুজোর দিনগুলোতে শহর শুনশান থাকার এটা একটা বড়ো কারণ।
বনেদিবাড়ির পুজোও কলকাতার পুজোর একটা বড়ো আকর্ষণ। কিন্তু শহরের বেশির ভাগ বনেদিবাড়ির পুজোতেও এ বার সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বনেদিবাড়ির পুজো।
দশমীও ম্রিয়মাণ বেশির ভাগ মণ্ডপে। নেই সিঁদুরখেলা, নেই বিসর্জনের শোভাযাত্রাও। সোমবার সকাল থেকেই বিসর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও তো মণ্ডপচত্বরেই প্রতিমাকে গলিয়ে ফেলা হচ্ছে পাইপের জলের তোড়ে। কোনো কোনো বারোয়ারি কমিটি তো মণ্ডপের সামনেই জলের ব্যবস্থা করে সেখানে প্রতিমা বিসর্জন করছে।
ছবি: শ্রয়ণ সেন
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
নেই সিঁদুরখেলা, শোভাযাত্রা, কোভিডের আবহে রাজ্যে মনখারাপের দশমী
-
রাজ্য1 day ago
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে সিপিএমের লাইনেই খেলছেন শুভেন্দু অধিকারী
-
দেশ2 days ago
করোনার টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হলে দায় নেবে না কেন্দ্র
-
দেশ2 days ago
নবম দফার বৈঠকেও কাটল না জট, ফের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কেন্দ্র
-
প্রযুক্তি2 days ago
হোয়াটসঅ্যাপে এ ভাবে সেটিং করলে আপনার আলাপচারিতা কেউ দেখতে পাবে না এবং তথ্যও থাকবে নিরাপদে