উখড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয় পাঁঠাবলির কাহিনি বেশ সুখশ্রাব্য

0
Durgapuja of Mukherjee family of Ukhra

বনেদিয়ানা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য শারদীয়া উৎসবের অন্যতম মুখ্য বিষয় বলেই বিবেচ্য। বঙ্গের ইতিহাসেও তা-ই ঘটে এসেছে এত দিন এবং আজও ঘটছে। বনেদিবাড়ির ঠাকুরদালানের সেই ঝাড়বাতির আলো, ঢাকের বাদ্যি এবং সর্বোপরি যাঁকে ঘিরে থাকে এত উন্মাদনা সেই দশভূজার জ্যোতির্ময়ী রূপ শারদীয়ার আমেজকে আরও সমৃদ্ধ করে। তেমনই এক ঐতিহ্যমণ্ডিত বনেদিবাড়ি উখড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবার। এই বাড়ির দুর্গাপুজো ১৮১ বছরের পুরোনো।

durgapuja ukhra mukherjee 1 07.10
মায়ের মুখ।

এই মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায় বাংলার ১২৪৯ সনে। শম্ভুনাথবাবু ছিলেন সেবাপরায়ণ, পরের দুঃখে খুবই ব্যথিত হতেন এবং যথাসাধ্য সাহায্য করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন উদ্যোগী কর্মী এবং বৈষয়িক বিষয়ে অভিজ্ঞ। তাই তৎকালীন জমিদার শম্ভুনাথ লাল সিংহ হান্ডের আমলে কয়েক বছর উখড়ার জমিদারিতে কাজ করেছিলেন শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়।

সদাশয় জমিদার শম্ভুনাথ লাল সিংহ হান্ডে একদিন তাঁর কর্মচারী শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়কে বলেন, “আমি গত বছর দুর্গাপুজো শুরু করেছি। তোমার ও আমার দু’জনের নামের মিল আছে, তাই কাজেও মিল থাকা দরকার। তুমিও দুর্গাপুজো শুরু করো।” জমিদারবাবুর কথা সাধারণ কথা তো নয়, এ আদেশ। ফেলতে পারেন না শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়। নতুন মন্দির নির্মাণ করে শুরু করেন দুর্গাপুজো। জমিদারের উৎসাহে এই পুজোর সূচনা, তাই শুরু থেকে আজও পুজোর খরচ বাবদ ষোলোআনা ও এক সলি আতপচাল প্রণামী আসে তৎকালীন জমিদারবাড়ি থেকে।

এই বাড়ির পুজো শুরু হয় রথযাত্রার দিন। সে দিনই মৃন্ময়ী মূর্তির সূচনা হয়। মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজো বৈষ্ণব মতে হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের তরফে পুজোয় পাঁঠাবলি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই পাঁঠাবলি হয় অন্য পরিবারের মণ্ডপে। কেন এই প্রথা, তা নিয়ে একটা কাহিনি প্রচলিত আছে। সেই কাহিনি পরিবারের সকল সদস্য ও এলাকার প্রতিটি মানুষের কাছে বেশ সুখশ্রাব্য।

মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয় পাঁঠাবলি দেওয়া হত মাইথনের কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে। বলি দেওয়া হত নবমীর দিন। উখড়া থেকে মাইথন, বেশ খানিকটা দূরের পথ। একবার কোনো এক অতীতে এত দূর রাস্তা পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ে বলির পাঁঠা নিয়ে পৌঁছোনো সম্ভব হয়নি। বলিদানের সময় পেরিয়ে যায়। কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে আর বলিদান করা যায়নি। তখন পরিবারের এক সদস্য মায়ের কাছে বলি গ্রহণ করার প্রার্থনা নিয়ে ধরনায় বসে পড়েন। তিন দিন পর দেবীর স্বপ্নাদেশে বলি দেওয়া হয় স্থানীয় চক্রবর্তী পরিবারের দুর্গামন্দিরে এবং তখন থেকেই এই প্রথা চলে আসছে যা আজও বিদ্যমান।

এই ভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে বনেদিয়ানাকে ধরে রেখে দুর্গাপূজায় মেতে ওঠেন উখড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন