
প্রকাশিত হল নতুন বাংলা বছর ১৪২৬-এর দেওয়ালপঞ্জি। আয়োজনে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ)। পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সারা দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হল এক অভিনব প্রয়াস – ভারতের গুহাশিল্প, যা চিরন্তন ঐতিহ্যের প্রতীক। দেওয়ালপঞ্জির বারোটি পাতায় নানা জায়গার গুহার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
নানা শিল্পকলার মধ্যে গুহাচিত্র মানুষের মননে অন্য মাত্রা বহন করে। ১৯৫৭ সালে মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকায় গুহাচিত্রের নিদর্শন মেলে। ভোপাল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ভীমবেটকায় যে একটি প্রস্তরক্ষেত্র আছে তা ১৮৮৮ সালে নিজের একটি লেখায় প্রথম উল্লেখ করেন ব্রিটিশ আধিকারিক ডব্লিউ কিন্সেড। এর দীর্ঘ প্রায় সাত দশক পরে ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্ত্ববিদ ড. বিষ্ণু শ্রীধর ওয়াকনকর ট্রেনে করে ভোপাল যাওয়ার পথে এই অঞ্চলে স্পেন ও ফ্রান্সে দেখা প্রস্তরক্ষেত্রের অনুরূপ গঠন দেখতে পান। ১৯৫৭-য় পুরাতাত্ত্বিকদের একটি দল নিয়ে তিনি ভীমবেটকায় আসেন এবং অনেক প্রাগৈতিহাসিক গুহা-বসতি আবিষ্কার করেন। উল্লেখ্য, এ বছরেই ড. ওয়াকনকরের জন্মশতবর্ষ। তিনি সংস্কার ভারতীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকও। গুহাচিত্র সংবলিত দেওয়ালপঞ্জি প্রকাশ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হল।
বাংলা দেওয়ালপঞ্জির একটি পাতা
শুধু ভীমবেটকাই নয়, দেওয়ালপঞ্জিতে স্থান পেয়েছে ভারতের আরও নানা জায়গার গুহা। ছত্তীসগঢ়ের সিংহনপুর গুহা ও যোগীমারা গুহা, মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সাতমালা রেঞ্জে পিতলখোরা গুহা, কর্নাটকের রায়চুর জেলায় পিকলিহাল গুহা, মধ্যপ্রদেশের বাঘ গুহা, ত্রিপুরার উনকোটি গুহা, তামিলনাড়ুর সিত্তানাভসাল গুহ-সহ নানা রাজ্যের নানা গুহার ছবিতে চিত্রিত হয়েছে দেওয়ালপঞ্জিটি।
সারা দিনের নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চেতন জোশির বাঁশি। জোশিজি বহু হাজার বছর আগের বাঁশির রূপ ও তথ্য শ্রোতা-দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবং সেই বাঁশি ছিল মানুষের পায়ের হাড়ের তৈরি। বাঁশির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা করলেন সে দিনের অনুষ্ঠানে। পরিশেষে শুনিয়েছেন তাঁর সুমধুর বংশীবাদনও।
বাংলা দেওয়ালপঞ্জির আরও একটি পাতা
শিল্পী রুমা মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে নানা শাখার সদস্যদের নিয়ে পরিবেশিত হয় সমবেত সংগীত। ‘নমামি গঙ্গে’ শীর্ষক নৃত্যগীতিআলেখ্য পরিবেশন করেন ‘আনন্দচন্দ্রিকা’, ‘শিঞ্জন নৃত্যালয়’, ‘কৌশিকী’ ও ‘গৌড়ীয় চারুকলা ভারতী’র নৃত্যশিল্পীরা। সংগীত পরিচালনা করেন ধ্রুবজিৎ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন বুকিং-এ এখনও অনলাইনের চেয়ে অফলাইনেই আস্থা পর্যটকদের : রিপোর্ট
ওই দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী শ্রী যোগেন্দ্র। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রী আমির চাঁদ, পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আধিকারিক গৌরী বসু, কত্থক নৃত্যশিল্পী অমিতা দত্ত, ওড়িশি নৃত্যশিল্পী অলকা কানুনগো, গৌড়ীয় নৃত্যশিল্পী মহুয়া মুখোপাধ্যায়। ভূ-অলংকরণ শিল্পী রঘুরাজ দেশপাণ্ডে এবং বিশিষ্ট লেখক চঞ্চল কুমার ঘোষও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীলাঞ্জনা রায়।