উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: এক পক্ষকালের মধ্যে সুন্দরবনে তিন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হল বাঘের কামড়ে।
এক দিকে লকডাউন, অন্য দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস শেষ করে দিয়ে গেছে মানুষের জীবন-জীবিকা। কাঁকড়া ধরে উপার্জনের টাকায় ঘর মেরামতের স্বপ্ন নিয়ে গোসাবার ঝিলার জঙ্গলে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের সুনীল সরদার। উপার্জন তো দূর, তাঁর আগেই বাঘের হামলায় প্রাণ গেল মৎস্যজীবীর।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সুন্দরবন উপকূল থানার কুমিরমারি গ্রামের বাসিন্দা সুনীল। ইয়াসের দাপটে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই সব এলাকায়। নোনাজল ঢুকে প্লাবিত হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুনীলের ঘরও। কিন্তু মেরামতির সামর্থ্য তাঁর কাছে ছিল না। ত্রাণ সামগ্রীতে দু’বেলা পেট ভরলেও ঘর মেরামত কী ভাবে করবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি।
এর পরই উপার্জনের জন্য কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো বুধবার সকালে সুনীল-সহ তিন জন মৎস্যজীবীর একটি দল সুন্দরবনের ঝিলার জঙ্গলে যায় কাঁকড়া ধরতে। জানা গেল, নৌকো নিয়ে তাঁরা খাড়িতে প্রবেশ করতেই জঙ্গল থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। প্রত্যক্ষদর্শী কার্তিক দাস বলেন, “নৌকোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সুনীলের ঘাড়ে কামড় বসায় বাঘ। এর পর মুখে করে ওকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা সকলেই চিৎকার করে বাঘের পিছু ধাওয়া করে মুখ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলেও বাঁচাতে পারিনি। জঙ্গল থেকে কুমিরমারি আসার পথেই মৃত্যু হয় সুনীলের”।
গত ১৫ দিনে এই নিয়ে ৩টি বাঘের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল সুন্দরবনে। ইয়াসের পরেই ভগবতী মণ্ডল নামে এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয় সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে। তাঁর বাড়ি সুন্দরবনের সাতজেলিয়া এলাকায়। ভগবতীর স্বামী কোনো রকমে দেহটি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
গত শনিবার বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় গোসাবার ছোটো মোল্লাখালি গ্রামের আনন্দ ধর নামের আরও এক মৎস্যজীবীর। নিহত ওই মৎস্যজীবী সুন্দরবনের কাঁকসার জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারান। বুধবার ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে বাঘের আক্রমণে নিহতের তালিকা। বন দফতর সূত্রে জানা গেল, মৃত মৎস্যজীবীর কোনো সরকারি অনুমতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়তে পারেন: লালারস সংগ্রহ করে বিনা টেস্টেই ভুয়ো রিপোর্টের ব্যবসা, শিলিগুড়িতে ধৃত ১
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।