স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর এবার স্থলভাগের মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে চলেছে সাগরদ্বীপ। মুড়িগঙ্গা নদীর উপর চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের পূর্তদপ্তর জানিয়েছে, ২০২৯ সালের জানুয়ারি মাসে গঙ্গাসাগর মেলায় অংশগ্রহণকারী পুণ্যার্থীরা কলকাতা থেকে সরাসরি সেতু দিয়ে গাড়ি নিয়ে কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছে যেতে পারবেন। ভেসেলে নদী পার হওয়ার জন্য আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
প্রায় ১,৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করবে রাজ্য সরকার। পূর্তদপ্তর ইতিমধ্যেই এক হাজার ৪৬০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দরপত্র জারি করেছে। আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দরখাস্ত জমা দিতে হবে, এবং ৬ ফেব্রুয়ারি দরপত্র খোলা হবে।
কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতা ভেস্তে রাজ্যের উদ্যোগ
প্রসঙ্গত, এই সেতু তৈরির দায়িত্ব প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারের ছিল। প্রায় ছয় বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, তাজপুর বন্দরের অংশীদারিত্বের পরিবর্তে কেন্দ্র এই সেতুটি নির্মাণ করুক। যদিও কেন্দ্র প্রস্তাবে সম্মত হলেও শেষ পর্যন্ত কার্যকর করেনি বলে অভিযোগ। অবশেষে, সাগরদ্বীপের বাসিন্দা এবং গঙ্গাসাগর মেলায় আগত কোটি কোটি পুণ্যার্থীর কথা মাথায় রেখে রাজ্য নিজেই এই সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেতু নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন।
এ বার ‘যাত্রীসাথী’ অ্যাপে সরকারি বাসের টিকিট, এলইডি ডিসপ্লে বসছে কলকাতার বাস স্টপে
জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু
নতুন সেতুটি হবে চার লেনের এবং নির্মাণ শেষ হওয়ার পর টানা দশ বছর নির্মাণকারী সংস্থার উপরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে। ইতিমধ্যেই প্রায় দেড়শো বাসিন্দার কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) সংগ্রহ করেছে জেলা প্রশাসন। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজ্যের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প। তিনি আগামী গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি পরিদর্শনের সময় এর শিলান্যাসও করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গঙ্গাসাগর সেতুর প্রভাব
এই সেতু নির্মাণ হলে সাগরদ্বীপের বাসিন্দারা যেমন সহজে মূল ভুখণ্ডে পৌঁছাতে পারবেন, তেমনই গঙ্গাসাগর মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের ভ্রমণও অনেক স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাগরদ্বীপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতি অনেকটাই ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।