উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে পুরুষানুক্রমে মাছ-কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে কুলতলি, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, ইদানীং লোথিয়ান ও শুশনি জঙ্গলের খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে গেলেই ভগবৎপুর ফরেস্ট রেঞ্জের বনকর্মী ও আধিকারিকরা মৎস্যজীবীদের নৌকা, জাল-সহ মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করছেন।
এ ব্যাপারে ভাগবতপুর বন দফতর সূত্রে জানা গেল, সুন্দরবনের কোনো নদী-খাঁড়ির কোন অংশে মাছ ধরা যাবে, কোথায় যাবে না, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। তা মেনেই কাজ করেন বনকর্মী ও আধিকারিকেরা। তা ছাড়া, নির্বিচার মাছ-কাঁকড়া ধরা হলে বাদাবনের জলজ বাস্তুতন্ত্রের গুরুতর ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা প্রবল।
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) মিলন মণ্ডল বলেন,লোথিয়ান অভয়ারণ্য এবং শুশনি সংরক্ষিত অরণ্যে ঢুকে মাছ-কাঁকড়া ধরা আইনত নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় সরকারি নির্দেশ ছাড়া সেখানে মাছ-কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই এই নিয়ম ভাঙলে জরিমানা তো থাকবেই।
স্থানীয় মৎস্যজীবিদের দাবি, “আমাদের নদীতে মাছ ধরার অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না। কেড়ে নিলে আমরা খাব কী করে”। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটি দাবি তুলেছে, সুন্দরবনে বনবাসী অধিকার আইন (২০০৬) কার্যকর করতে হবে। মৎস্য দফতরের ফিশিং লাইসেন্স ও নৌকার রেজিস্ট্রেশনকে মান্যতা দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দিতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালীন প্রত্যেক মৎস্যজীবীকে মাসিক আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি বাঘ, কুমিরের হামলায় নিহত মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যদের জন্য ভাতা চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিলন দাস বলেন, হতদরিদ্র মৎস্যজীবীরা বংশানুক্রমে নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরে আসছেন। সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং মৎস্যজীবীদেরকে হেনস্থা করা অনৈতিক। এমনকী সুন্দরবনের বাসিন্দাদের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ২০০৬-এর বনবাসী অধিকার আইনও কার্যকর করতে হবে।
আরও পড়তে পারেন: গাছের ডাল দিয়ে দাবানল নেভাচ্ছেন মন্ত্রী! ভিডিও ভাইরাল হতে হাসির রোল উঠল কেন?