সাপের কামড়ের ঘটনা এবং মৃত্যুকে ‘নোটিফায়েবল’ রোগের তালিকাভুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সাপের কামড়ে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণের নীতিগুলি আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবের পক্ষ থেকে একটি চিঠি রাজ্যগুলিকে পাঠানো হয়েছে, যেখানে সাপের কামড়কে ‘নোটিফায়েবল’ রোগ হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে সাপের কামড় সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিতভাবে জানাতে হবে।
‘নোটিফায়েবল’ শব্দটি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিভাষায় একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। এটি এমন রোগ বা ঘটনা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, যেগুলি আইন বা সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক।
যদি কোনও রোগ ‘নোটিফায়েবল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তাহলে সেই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রকে তা সরকারের স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট করতে হয়। এর মাধ্যমে রোগের প্রকোপ, বিস্তার ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।
সাপের কামড়কে ‘নোটিফায়েবল’ করলে, প্রতিটি ঘটনা নথিভুক্ত হবে এবং এর ভিত্তিতে আরও কার্যকর চিকিৎসা ও সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনা, উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি অংশ সাপের কামড়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে নিউটাউন-রাজাহাট এলাকাতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাপের কামড়ের ঘটনা সামনে এসেছে।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের প্রাক্তন এমএসভিপি তথা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অশীষ মান্না বলেন, “সাপের কামড়ের ঘটনাগুলি নোটিফায়েবল হলে এই জনস্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়বে।”
স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা আরও জানান, বর্তমানে খুব কম সরকারি প্রতিষ্ঠান সাপের কামড় সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করে। অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্তরা হাসপাতালে না গিয়ে স্থানীয় বৈদ্য বা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেন, যা মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞ দয়াল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে সহজলভ্য অ্যান্টিভেনম সরবরাহের জন্য সর্বোত্তম নীতি গ্রহণ করেছে। তবে, সাপের কামড়ের ঘটনা এখনও যথেষ্ট কম রিপোর্ট করা হয়।”
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাত্র ২৯% এলাকার জনসংখ্যা নিয়ে করা একটি গবেষণায় তিন বছরে ৪,৮৭১টি সাপের কামড়ের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, রাজ্যে এক বছরে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ম্যালেরিয়ার তুলনায় বেশি ছিল, অথচ ম্যালেরিয়া নিয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সব খবর পড়ুন এখানে