নিজস্ব সংকলকাতা: ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য রুখতে এবার আরও কঠোর হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থার উপর ভরসা না করে, এবার রাজ্যের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা (ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক অফেন্সেস – ডিইও) নিজেদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে উদ্যোগী হয়েছে। এখন থেকে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্টান (NBFC) রাজ্যে ব্যবসা করতে চাইলে তাদের সমস্ত তথ্য রাজ্যের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে।
চিটফান্ড কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা, কড়া হচ্ছে রাজ্য
২০১৩ সালে সারদা, রোজভ্যালি-সহ একাধিক চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসে। কোটি কোটি আমানতকারী প্রতারিত হন। সেই সময় কেন্দ্রীয় সংস্থা সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল, আর রাজ্য প্রশাসন দায় চাপিয়েছিল কেন্দ্রের উপর। এবার সেই বিতর্ক এড়াতে রাজ্য নিজেই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা শক্তিশালী করছে।
কীভাবে নজরদারি চালাবে রাজ্য?
ডিইও এবার রাজ্যের মধ্যে থাকা সমস্ত এনবিএফসি সংস্থার তথ্য সংগ্রহ করছে। তাদের কোথায় শাখা বা হেড অফিস আছে, কতজন আমানতকারী রয়েছেন, কী শর্তে টাকা তোলা হয়েছে, টাকা ফেরানোর পরিকল্পনা কী—এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিশেষ ডেটাবেস তৈরি করা হচ্ছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী—
🔹 রাজ্যে ব্যবসা করতে হলে এনবিএফসিগুলিকে ডিইও-তে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
🔹 তিন মাস অন্তর আপডেট করতে হবে সম্পূর্ণ ব্যালান্স শিট।
🔹 ডিরেক্টরদের ঠিকানা ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের তথ্য জমা দিতে হবে।
🔹 কোনও কোম্পানি নাম নথিভুক্ত না করলে প্রথমে সতর্কবার্তা, তারপর জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, “এখন অনেক এনবিএফসি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ‘ম্যানেজ’ করে ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এবার রাজ্য নিজেই কঠোর নজরদারি চালাবে।”
নতুন এই পদক্ষেপে চিটফান্ড প্রতারণা বন্ধ হবে কি না, তা সময় বলবে। তবে রাজ্যের উদ্যোগের ফলে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির রমরমা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।