কলকাতা: যথোপযুক্ত পরামর্শ না মেনে কোভিড-১৯ রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়ায় মহানগরের দু’টি হাসপাতালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্য়াল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) বা রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। তবে প্রশ্ন উঠছে, শীর্ষ আদালত থেকে শুরু করে কেন্দ্র-রাজ্য সরকার যে ভাবে মহামারি সংকটে চিকিৎসা পরিষেবায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে সেই সমস্ত নির্দেশকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে কী ভাবে এ ধরনের অমানবিক ঘটনাগুলি ঘটছে?
সোমবার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যাওয়া একজন কোভিড-১৯ (Covid-19) আক্রান্ত রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সেই ফেলে রাখার অভিযোগ ওঠে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তমলুকের ৬০ বছর বয়সি লায়লা বিবির পরিবারের অভিযোগ তাঁদের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা অগ্রিম চাওয়া হয়।
পরিবার জানায়, ওই বৃদ্ধাকে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেখানে তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ওই হাসপাতাল বৃদ্ধাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা জানালে তাঁকে বাইপাসের ধারের ওই হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে ভরতি গিয়েই জটিলতার সৃষ্টি হয়।
অথচ, কমিশন আগেই পরামর্শ জারি করেছে, কোনো ধরনের রোগীরই ভরতির সময় আনুমানিক চিকিৎসা ব্যয়ের ২০ শতাংশ অথবা ৫০ হাজার টাকার বেশি অগ্রিম নিতে পারবে না বেসরকারি হাসপাতাল। করোনাভাইরাস (Coronavirus) আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিসা শুরু করতে হবে। রোগীর পরিবার ১২ ঘণ্টার মধ্যে অগ্রিম মেটাবেন। অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে কমিশন। ২০১৭ সালে গঠিত হওয়ার পর, কমিশন প্রথমবার এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিল।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রিম জমা করতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করেন। অ্য়াম্বুলেন্সের ভিতরেই শায়িত রোগীর মৃত্যু হয় বিনা চিকিৎসায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, এই অভিযোগ সঠিক নয়। চিকিৎসকরা রোগীকে জরুরিকালীন পরিষেবা হিসেবে সিপিআর (Cardiopulmonary resuscitation) দেন, কিন্তু তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘আমি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে ঘটনাটি জেনেছি। এটা সত্যি, মিথ্যে যেটাই হোক না কেন, একটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অমানবিক ঘটনা। এ বিষয়ে আমরা স্বত:প্রণোদিত মামলা শুরু করেছি। দু’টি হাসপাতালকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে বক্তব্য জানাতে। যে হাসপাতালে রোগী ভরতি ছিলেন এবং যেখানে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, দু’টি হাসপাতালেরই বক্তব্য জানতে চেয়েছি”।
একই সঙ্গে তিনি জানান, এই মামলার শুনানি আগামী ১৯ আগস্ট হতে পারে। এটা ছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপে আরও দু’টি অভিযোগ পেয়েছে কমিশন।
অন্য একটি ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের পরিচিত চিকিৎসক প্রদীপকুমার ভট্টাচার্যের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। করোনা চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই এই চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই।
প্রদীপবাবুকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারকে ১৮ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার বিপুল অঙ্কের বিল ধরানো হয়। কয়েকটি সংগঠনের তরফে ওই বিল কমানোর অনুরোধও করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
এই ঘটনাটিতেও হস্তক্ষেপ করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, হাসপাতালকে ওই বিল রিভিউ করার কথা বলেছি। সে ক্ষেত্রে পরিবার যদি বিলের অঙ্ক মিটিয়েও দেন, তা হলেও তা পুনর্বিবেচনা করে বিলের অঙ্ক কমিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী, নির্মল মাজি ইতিমধ্যেই বলেছেন, আকাশছোঁয়া বিল এবং বিল না মেটালে অমানবিক আচরণ, বেসরকারি হাসপাতালের এহেন আচরণকে বরদাস্ত করবে না রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে গ্রেফতারির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শুনে নিন-
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।