খবর অনলাইন : এ যেন উলটপুরাণ। এ দেশের অধিকাংশ পরিবারই পুত্রসন্তান কামনা করে। কিন্তু রাজস্থানের এই গ্রামে কন্যাসন্তান জন্মালে তাকে বরণ করা হয় ধুমধাম সহকারে। শুধু তা-ই নয়, কন্যাসন্তান জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের সবুজ বাড়ানো হয়। অর্থাৎ তার শুভাগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১১১টি চারাগাছ লাগানো হয়। ব্যাপারটা প্রতীকী। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যাতে আরও সবুজ হয় তার জন্য এই অভিযান। আর শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত থাকেন না গ্রামবাসীরা, সেগুলির যথাযথ দেখভালও করেন তাঁরা। এই বিরল গ্রামটির নাম পিপলান্ত্রি, জেলা রাজসমন্দ।
সবুজের এই অভিযান শুরু হয় ২০০৬ সালে, গ্রামের প্রাক্তন সরপঞ্চ শ্যামসুন্দর পালিওয়ালের উদ্যোগে। অকাল মৃত্যু হয়েছিল তাঁর কন্যা কিরণের। তার স্মরণেই পিতার এই প্রচেষ্টার সূত্রপাত। মরু-রাজ্য রাজস্থানে পিপলান্ত্রি আজ এক মরুদ্যান। ১০ বছরে অন্তত আড়াই লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছে গ্রামে। সারা গ্রামে সবুজের সমারোহ – রয়েছে আম, নিম, আমলা, শিশম, আরও কত গাছ। আর এই গাছগুলোতে যাতে ঘুণপোকা না ধরে তার জন্য এদের ঘিরে লাগানো হয় অসংখ্য ঘৃতকুমারী গাছ। আর এর ফলে গ্রামের অর্থনীতিতেও জোয়ার এসেছে। গ্রামবাসীরা জানেন এই ঘৃতকুমারী একটি দামি ভেষজ উদ্ভিদ। এর রস, আঠা নানা কাজে লাগে। তাই গ্রামবাসীর আজ ঘৃতকুমারী থেকে পণ্য প্রস্তুত করার কাজ শিখে গিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছেন।
কিন্তু যে কন্যাসন্তানের জন্ম উপলক্ষে সবুজের এত বড় অভিযান তার সম্পর্কে গ্রাম কখনও নিস্পৃহ থাকে না। নবজাতিকার আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়, গ্রামবাসীরা দেন ২১ হাজার টাকা। এই ৩১ হাজার টাকা ওই নবজাতিকার নামে ফিক্সড্ ডিপোজিট করা হয়। মেয়ের বয়স ২০ হলে ওই টাকা তোলা হয়। মেয়ে যাতে যথাযথ শিক্ষা পায় তার জন্য গ্রামবাসীরা বাবা-মাকে দিয়ে একটি হলফনামায় সই করিয়ে নেন। বিয়ের আইনসম্মত বয়স হওয়ার আগেই যাতে তাঁরা মেয়ের বিয়ে না দিতে পারেন সেই ব্যাপারটিও সুনিশ্চিত করা হয় ওই হলফনামায়।
রাজস্থানের এক সময়ের অজ গাঁ পিপলান্ত্রি এ ভাবেই আজ সংবাদের শিরোনামে।
ছবি : www.folomojo.com
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।