নিজস্ব প্রতিনিধি: আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল রাজ্য। সেই আরজি কর প্রসঙ্গ থেকে দূরে থাকতে পারল না ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবও। এই কাণ্ডে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করা হল ক্লাবের ৪৬তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে।
রবিবার রবীন্দ্র সদনে কলকাতার সাংবাদিকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবের ৪৬তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কলকাতার মেয়র, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। কিন্তু ব্যক্তিগত জরুরি কাজে আটকে পড়ায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু ক্লাব এবং ক্লাবের অনুষ্ঠানের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে তিনি একটি অডিওবার্তা পাঠান। সেটি অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো হয়।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তার পর প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এর পর অতিথিবরণের পালা। এ দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আসন গ্রহণ করেন রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী আত্মবোধানন্দ। স্বামী আত্মবোধানন্দকে বরণ করে নেন ক্লাব সভাপতি প্রান্তিক সেন ও সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন।
স্বাগত ভাষণে ক্লাবের সভাপতি প্রান্তিক সেন ক্লাব গোড়াপত্তনের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করে সংগঠনের বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মের কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ক্লাব আয়োজিত বিভিন্ন বাৎসরিক অনুষ্ঠানের কথা। এর মধ্যে রয়েছে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি। ক্লাব আয়োজিত বাৎসরিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী যে এই মহানগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট সে কথা বুঝিয়ে বলেন প্রান্তিকবাবু।
ক্লাব সভাপতি প্রান্তিক সেন তাঁর ভাষণে বলেন, “আমার শহর কলকাতা আজ ভালো নেই। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য দেশ। আমরাও এই ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
ভাষণ দিচ্ছেন রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী আত্মবোধানন্দ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বামী আত্মবোধানন্দ ক্লাবের নানা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি সততা বজায় রেখে সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশনের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, দেশ ও দশের ভালোর জন্যই এটা দরকার। এ প্রসঙ্গে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলেন। ক্লাবের সর্বাঙ্গীণ কুশল কামনা করেন স্বামী আত্মবোধানন্দ।
ক্লাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্লাবের যে সব সদস্য সক্রিয় থাকেন তাঁদের নামোল্লেখ করে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন। ক্লাবের বিভিন্ন উদ্যোগে যে সব সংস্থা এবং ব্যক্তিবিশেষ নানা ভাবে পাশে থাকেন তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান ইমনবাবু।
ক্লাবের নতুন অফিসঘর পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন ইমনবাবু। তিনি জানান, একই ভবনের ষষ্ঠ তল থেকে দ্বিতীয় তলে সরে আসছে ক্লাবের কার্যালয়। নতুন কার্যালয়টি পুরোনোর চেয়ে আকারে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম চালাতে আরও বেশি সুবিধা হবে। ফের নতুন উদ্যমে চালু করা যাবে ক্লাবের লাইব্রেরি। তা ছাড়া লিফট অকেজো হয়ে গেলে অফিসঘরে পৌঁছোতে ক্লাব সদস্যদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, সেই সমস্যা আর থাকবে না।
স্বাভাবিকভাবে আরজি কর প্রসঙ্গ উঠে আসে সাধারণ সম্পাদকের ভাষণেও। তিনি বলেন, “অবিলম্বে এই ঘটনার অপরাধীদের চিহ্নিত করে এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে আগামী দিনে এ ধরনের ঘটনার শিকার আর কাউকে না হতে হয়। আমরা আরজি করের নিহত চিকিৎসকের ন্যায্য বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
বিশিষ্ট অতিথি, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এ দিন অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সহ-সভাপতি পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী ও নরেশ মণ্ডল, কোষাধ্যক্ষ সাধনা দাস বসু এবং দুই সহকারী সম্পাদক সঞ্জয় হাজরা ও অভিজিৎ ভট্টাচার্য। এ দিন ক্লাবের মুখপত্র ‘সাংবাদিক’-এর ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত হল ‘সাংবাদিক’-এর ৪৬তম বর্ষপূর্তি সংখ্যা।
পুরস্কার প্রদান
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী সায়ন্তিকা দত্তকে দেওয়া হয় সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার। ড. স্মরজিৎ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার পান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী সম্পূর্ণা সেনগুপ্ত।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী দেবাঙ্গনা গাঙ্গুলিকে নিরঞ্জন সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী পিউলি ভট্টাচার্যকে দেওয়া হয় বরুণ সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী দেবাঙ্গী যাদব পেলেন রাহুল গোস্বামী স্মৃতি পুরস্কার।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হাতে দক্ষিণারঞ্জন বসু স্মৃতি পুরস্কার তুলে দিলেন ক্লাব সভাপতি প্রান্তিক সেন এবং ক্লাব সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন।
ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য এবং প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় দক্ষিণারঞ্জন বসু স্মৃতি পুরস্কার। অমিত চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হল উদীয়মান অ্যাথলিট সাগর রায়কে।
এ ছাড়াও যে সব ক্লাব সদস্যের ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনি মাধ্যমিক বা সমতুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে তাদেরও হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পুরস্কৃত করা হল সিদ্ধার্থ দাস, অরমিতা ভট্টাচার্য, নিশান কর, প্রণিত অমর্ত্য ব্যানার্জি, চিরশ্রী সাধু, সৌজন্য মাট এবং শ্রীরঞ্জনী দেকে। এদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার জন্য অভীক বসু স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হল সিদ্ধার্থ দাসকে।
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পুরস্কৃত করা হল কৌস্তুভ ঘোষ, অরিত্র পাল, স্বর্ণাভ পাল, আহেলি দাস, মালিয়া গঙ্গোপাধ্যায় এবং শ্রেয়াঙ্কা দত্তকে। এদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার জন্য কৌস্তুভ ঘোষের হাতে তুলে দেওয়া হল হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার।
সংগীত পরিবেশন করলেন মনোময় ভট্টাচার্য।
দ্বিতীয় পর্বে মনোময় ভট্টাচার্য
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল মনোময় ভট্টাচার্যের সংগীত পরিবেশন। আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা তথা বাংলায় যে পরিস্থিতি চলছে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শুরুতেই মনোময় পরিবেশন করলেন ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। তার পর একে একে গাইলেন রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান, কাজী নজরুলের জন্মাষ্টমীর গান-সহ বেশ কিছু গান। এ ছাড়াও পরিবেশ করলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, মহম্মদ রফি প্রমুখের গাওয়া বিখ্যাত কিছু গান এবং নিজের গান তো বটেই। পৌনে দু’ঘণ্টায় ১৭টা নানা ধরনের গান পরিবেশন করে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মজিয়ে রাখেন মনোময় ও তাঁর সঙ্গতকারীরা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করেন নন্দিনী লাহা।
ছবি: গোপাল দেবনাথ ও মৃত্যুঞ্জয় সেন
আরও পড়ুন
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের