অজন্তা চৌধুরী
সন্তানের প্রতি নারীর স্নেহ চিরন্তন। তাই পুত্র হোক কি কন্যাসন্তান, সবাই তার কাছে স্নেহের ধন। কিন্তু সমাজের চোখে নারীর অবস্থান কোথায়? সেই বাস্তব রূপ আরও একবার প্রকাশ্যে এল ক্রিয়েটিভ ডান্স ওয়ার্কশপের এক সাহসী প্রযোজনায়।
তাদের প্রযোজনায় ৮ মার্চ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রথীন্দ্র মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়ে গেল এক বিশেষ নৃত্য প্রযোজনা ‘কলাবতী আজও’। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা অবলম্বনে নির্মিত এই নৃত্য প্রযোজনা। এর ভাবনা ও বিন্যাসে ছিলেন শর্মিলা ব্যানার্জি। নাট্য নির্মাণে কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নৃত্য পরিকল্পনায় ড. শেলী পাল।
‘কলাবতী আজও’ ক্রিয়েটিভ ডান্স ওয়ার্কশপের একটি প্রাসঙ্গিক প্রযোজনা, যা আজও সমাজে নারীর অবস্থানকে চিহ্নিত করে। ‘কলাবতী’ এমন এক মায়ের কাহিনি, যাকে চোখের সামনে দেখতে হয়েছে তারই সদ্যোজাত কন্যাশিশুর হত্যা। একটি নয়, এক এক করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তার ৯টি কন্যাশিশুর প্রাণ। বংশরক্ষার্থে কাঙ্খিত পুত্রসন্তানের বদলে জন্ম নেওয়া কন্যাসন্তানদের হত্যা করতে হাত কাঁপেনি যাদের, সেই পরিবার, প্রিয় মানুষের মঙ্গল কামনায় প্রতিদিন সাঁঝবাতি জ্বালিয়েছেন সেই মা।

সেই মা তারই প্রিয় পুরুষের হাতে ধর্ষিতা হওয়ার পরেও বুকে পাথর চাপা দিয়ে আবার জন্ম দিয়েছেন এক শিশুকন্যার। সেই দশম কন্যাসন্তান রূপবতী, যাকে বাঁচাতে পালিয়েছেন এক অনিশ্চিতের পথে। কলাবতী – এক সাহসের নাম, কলাবতী এক স্বপ্নের নাম। এটি ছিল সত্যিই এক সাহসী প্রযোজনা। কারণ মঞ্চে বিভিন্ন নৃত্য আঙ্গিক, সংলাপ এবং অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটে ওঠে এই সম্পূর্ণ চালচিত্র।
মা কলাবতী চরিত্রের রূপদান করেন শেলী পাল, ছোট কলাবতী চরিত্রের শম্পা পাল, কলাবতীর স্বামীর চরিত্রের সম্পদ পারাল এবং অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন নবনীতা, রিজা, সুস্মিতা, সোহাগ, অনুষ্কা, সায়ন্তনী, অপু সিন্টু প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এই বিশেষ দিনে ক্রিয়েটিভ ডান্স ওয়ার্কশপের পক্ষ থেকে এ দিন সম্মাননা জানানো হয় নানান পেশার বিশিষ্ট নারীদের। সম্মাননা গ্রহণ করেন বিশিষ্ট ওড়িশি নৃত্যশিল্পী রিনা জানা, তথ্যচিত্র নির্মাতা অবন্তী সিনহা, নাট্যব্যক্তিত্ব সৌমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপিকা এবং কবি পায়েল রায় চৌধুরী। এ দিনের সমস্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অপরাজিতা পাল।