পাপিয়া মিত্র
বাদাবনের পাঠশালা, ড্রপ আউট ছাত্রছাত্রীদের স্কুল, অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, সুন্দরবনের ভয়ংকর পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভূমিপুত্রকে এইভাবে দেখতেই অভ্যস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষ। সম্প্রতি কলকাতার কৃষ্ণপদ মেমোরিয়াল হলে তাঁকে দেখা গেল অন্য রূপে, অন্য ভূমিকায়। তিনি জাতীয় শিক্ষক, কবি, সম্পাদক ও বাসন্তী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অমল নায়েক।
সে দিন কৃষ্ণপদ মেমোরিয়াল হলে ১১২ জন কবির কলমে উঠে এল নানা দৃষ্টিতে সুন্দরবন। ‘কবিতায় সুন্দরবন’ কাব্যগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনে উপস্থিত ছিলেন নানা স্তরের বিশিষ্টজনেরা। সংকলক ও সমাজসেবী অমল নায়েকের কথায় উঠে আসে সুন্দরবনের অস্তিত্বের সংকট, বাঘে-মানুষের লড়াই, নদীখাঁড়ি, বন্যপ্রাণ, জনজীবন তথা বাঘ-বিধবাদের কান্না।

বক্তৃতা করছেন অমল নায়েক (বাঁ দিকে)। (ডান দিকে) অনুষ্ঠানে বৃক্ষ-বন্দনা।
পাশাপাশি কবিদের কবিতার মধ্যে ধরা থাকল সুন্দরবনের প্রকৃতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঘাটকথা, লবণ-জীবন, নদী কথা নিয়ে সুন্দরবনের নানা তথ্য। কবিদের কবিতা যে ভাবে সাজানো হয়েছে তা এক কথায় প্রশংসনীয়। অতীতে সুন্দরবন নিয়ে অনেক বই প্রকাশিত হলেও কবিতা নিয়ে সম্ভবত এটি সর্ব প্রথম কাব্যগ্রন্থ যা এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ২টো বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সূচনাসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বৃক্ষ-বন্দনায় মিলিত হন প্রবীণ কবি দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন কবি সৌমিত বসু, অংশুমান চক্রবর্তী, বরুণ চক্রবর্তী, সাকিল আহমেদ, হাসি বসু, ড. নির্মল করণ, প্রলয় চৌধুরী, অবশেষ দাস, হরিশঙ্কর কুণ্ডু, স্বপন দাস প্রমুখ।

চৈত্রের উষ্ণতাকে পিছনে ফেলে যখন উত্তরবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গের কবিরা শুধুমাত্র কবিতাকে ভালোবেসে এক ছাদের তলায় আসর জমান তখন নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় বাংলা ভাষা হারিয়ে যায়নি। আর দর্শক আসনে যখন কবি ও বিশিষ্ট মানুষের ভিড় উপচে পড়ে তখন এই সংকলনটির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সুন্দরবনের ভূমিপুত্ররা। সকল অতিথিকে ‘সেভ সুন্দরবন’ লেখা রোদটুপি, উত্তরীয়, ব্যাচ, কাব্যগ্রন্থ ও মিষ্টি উপহার দেওয়া হয়।