বাঙালির বিজ্ঞান অন্বেষণের সাফল্যের মুকুটে যোগ হল নয়া পালক। জায়ান্ট মিটারওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে ৩৪টি নতুন জায়ান্ট রেডিও সোর্স আবিষ্কার করেছেন ৪ বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী। আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল সাপ্লিমেন্ট সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র।
পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক সুশান্ত কুমার মণ্ডল ও সেখানকার পিএইচডি ছাত্র সৌভিক মানিক এবং মেদিনীপুর সিটি কলেজের পিয়র অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সব্যসাচী পাল ও পিএইচডি ছাত্র নিতাই ভুক্তা দেশজ প্রযুক্তির সাহায্যে ৩৪টি বিশালাকৃতির রেডিও গ্যালাক্সি সোর্স আবিষ্কার করেছেন।
এই চার বিজ্ঞানী ৪৫ মিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট ৩০টি বিশেষ রকমের রেডিও টেলিস্কোপ ‘জায়ান্ট মিটারওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপ’-এর সাহায্যে রেডিও সোর্সের খোঁজ পেয়েছেন। চার বছর ধরে রেডিও সোর্স থেকে নির্গত রেডিওওয়েভ নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করেন বিজ্ঞানীরা। টেলিস্কোপ বসানো হয়েছিল টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের (টিআইএফআর, TIFR) ন্যাশনাল সেন্টার ফোর রেডিও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (এনসিআরএ, NCRA) নির্মিত ওই রেডিও টেলিস্কোপ বসানো হয়েছিল পুনে থেকে ৯০ কিমি দূরে খোড়াড় গ্রামে।
২০ বছর আগে শতাধিক জায়ান্ট রেডিও সোর্স ছিল। জায়ান্ট মিটারওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপের মতো লো ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও টেলিস্কোপের সৌজন্যে সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে বেড়েছে। তবে একসঙ্গে ৩৪টি নতুন জায়ান্ট রেডিও সোর্স আবিষ্কার নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ ঘটনা। লক্ষাধিক আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত রেডিও গ্যালাক্সি থেকে রেডিওওয়েভ নির্গত হয়। সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র ও চার্জ হওয়া পার্টিকেলের মধ্যে সম্পর্কের কারণে হয় রেডিও এমিশন বা নির্গমন।
প্রথম তথা সবচেয়ে উজ্জ্বল রেডিও গ্যালাক্সি হল সিগনাস এ (Cygnus A)। ১৯৩৯ সালে ৫০০ মিলিয়ন তথা ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এটির খোঁজ পান গ্রোট রেবার। তিরিশ ও চল্লিশের দশকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেডার অপারেটররা রেডিও গ্যালাক্সির খোঁজ পান। তবে পুরোপুরি বোঝা যায়নি কী আবিষ্কার হয়েছে। এটার জন্য আরও এক দশক অপেক্ষা করতে হয়েছিল। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের রেডিও গ্যালাক্সি হল ১২ মিলিয়ন তথা ১ কোটি ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত সেন্টাইউরাস (Centaurus A) নামক রেডিও গ্যালাক্সি।
২০২৩ সালের আগস্টে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল সেন্টার অফ রেডিও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ও ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকরা মৃতপ্রায় বহু রেডিও গ্যালাক্সির খোঁজ পেয়েছেন।
আরও পড়ুন
সুনীতা, বুচকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে রেখে খালিই ফিরল স্টারলাইনার