নয় মাস মহাকাশে কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীর মাটিতে ফিরতে চলেছেন নাসার দুই নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS) থেকে তাঁরা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে মঙ্গলবার (ভারতীয় সময় বুধবার ভোর) ফ্লোরিডার উপকূলে সমুদ্রে অবতরণ করবেন।
অপ্রত্যাশিত দীর্ঘ অভিযান
২০২৪ সালের জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়ে মাত্র আট দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন উইলিয়ামস ও উইলমোর। কিন্তু স্টারলাইনারের হিলিয়াম লিক ও থ্রাস্টারজনিত সমস্যার কারণে সেটি অনিরাপদ ঘোষণা করা হয়। ফলে তাঁদের মহাকাশে কাটাতে হয় দীর্ঘ নয় মাস। সেপ্টেম্বরে স্টারলাইনার খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয়, আর উইলিয়ামস ও উইলমোর আটকে থাকেন ISS-এ।
কীভাবে ফিরছেন তাঁরা?
নাসা অবশেষে তাঁদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং স্পেসএক্সের ক্রু-৯ মিশনের আওতায় ড্রাগন ক্যাপসুল পাঠানো হয়। এই ক্যাপসুলে তাঁরা ছাড়াও রয়েছেন নাসার নিক হেগ ও রাশিয়ার নভোচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৩:২৭ মিনিটে ফ্লোরিডার উপকূলে সমুদ্রে অবতরণ করবে ক্যাপসুলটি।
অবতরণের পর কী হবে?
প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা: মহাকাশে দীর্ঘদিন থাকার পর শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে। অবতরণের পর তাঁদের স্ট্রেচারে শুইয়ে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
জনসন স্পেস সেন্টারে স্থানান্তর: ফ্লোরিডা থেকে উইলিয়ামস ও উইলমোরকে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাঁদের আরও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং ফ্লাইট সার্জনদের অনুমোদন পাওয়ার পর তাঁরা পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন।
মিশনের অভিজ্ঞতা শেয়ার: নাসা তাঁদের কাছ থেকে এই দীর্ঘ অভিযানের অভিজ্ঞতা, মহাকাশযানের সমস্যাগুলি ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানে কী পরিবর্তন দরকার তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন: উইলিয়ামস নিজেই জানিয়েছেন, তিনি তাঁর দুই কুকুর ও পরিবারের কাছে ফেরার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।
দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার প্রভাব
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানো শরীরে নানা প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে—
পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়— প্রতিমাসে ১% হাড়ের ঘনত্ব হারানোর আশঙ্কা থাকে।
রক্তচাপ ও ভারসাম্যজনিত সমস্যা দেখা দেয়— পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ আবার অনুভব করতে গিয়ে মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো হতে পারে।
ত্বকের পরিবর্তন ঘটে— মহাকাশচারীদের পায়ের নিচের শক্ত ত্বক নরম হয়ে যায়, যাকে ‘বেবি ফুট’ বলা হয়।
রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন হয়— মহাকাশে রক্ত শরীরের উপরের অংশে জমতে থাকে, যা পৃথিবীতে ফেরার পর স্বাভাবিক হতে সময় নেয়।
কতদিন সময় লাগবে স্বাভাবিক হতে?
নাসা জানাচ্ছে, সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নভোচারীরা পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। তবে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে।
ইতিহাসে দীর্ঘতম মহাকাশ মিশন
উইলিয়ামস ও উইলমোরের এই নয় মাসের মহাকাশ যাত্রা আমেরিকার ইতিহাসে ষষ্ঠ দীর্ঘতম। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটানোর রেকর্ড রাশিয়ার নভোচারী ভ্যালেরি পলিয়াকভের, যিনি ৪৩৭ দিন মহাকাশে ছিলেন।
সারা বিশ্বের নজর এখন তাঁদের পৃথিবীতে নিরাপদে ফেরার দিকে।