২০২৪ সালে শরীরবিজ্ঞান তথা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন। ক্রোমোজ়োমের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদান মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার এবং জিনের নিয়মবিধির ক্ষেত্রে ট্রান্সক্রিপশন-পরবর্তী পর্যায়ে এই উপাদানের ভূমিকা প্রকাশ্যে আনার জন্য দুই বিজ্ঞানীকে এই সম্মানে সম্মানিত করা হল।
সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই দুই নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করে সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটুটেট-এর নোবেল অ্যাসেম্বলি। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রাক্তনী ভিক্টর অ্যামব্রোস পোলিশ বংশোদ্ভূত জীব রসায়নবিদ। তিনি মার্কিন নাগরিক। আর গ্যারি রুভকুন জিন বিশেষজ্ঞ। তিনি ম্যাসাচুসেটস হাসপাতালের জৈব অনুবিদ্যার গবেষক তথা বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের জিনবিদ্যার অধ্যাপক।
সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটুটেট-এর নোবেল অ্যাসেম্বলির ঘোষণা। ছবি ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
জিনের ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে সেই বিষয়টি যে মৌলিক নীতি ঠিক করে সেই নীতি আবিষ্কার করার জন্যই এ বছর দুই বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হল। সেই তথ্য নিহিত রয়েছে আমাদের ক্রোমোজ়োমে। এটা যেন আমাদের শরীরের সমস্ত কোষের জন্য একটা ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়াল (নির্দেশাবলির বই)। প্রত্যেকটা কোষে একই ধরনের ক্রোমোজ়োম রয়েছে। সুতরাং প্রতিটি কোষে জিনের একই সেট রয়েছে এবং নির্দেশের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তবু বিভিন্ন ধরনের কোষ, যেমন পেশি আর স্নায়ুর কোষের পরিষ্কার সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাহলে এই পার্থক্যটা কী করে হল? উত্তরটা লুকিয়ে রয়েছে জিনের নিয়মবিধির মধ্যে, যা প্রতিটি কোষকে তার প্রাসঙ্গিক নির্দেশটি বেছে নিতে অনুমতি দেয়। এর ফলে প্রতিটি ধরনের কোষে জিনের ঠিকঠাক সেটটির সক্রিয় থাকা সুনিশ্চিত হয়।
শরীরে বিভিন্ন ধরনের কোষ কীভাবে তৈরি হয় সে বিষয়ে আগ্রহ ছিল ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুনের। সেই আগ্রহ থেকেই তাঁরা ক্রোমোজ়োমের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদান মাইক্রো আরএনএ (microRNA) (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) আবিষ্কার করেন, জৈব রসায়নবিদ্যার জগতে যা এমআরএনএ নামে পরিচিত। জিনের নিয়মবিধির ক্ষেত্রে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আরএনএ অনু গুরুত্বপূর্ণ পালন করে। অ্যামব্রোস এবং রুভকুনের আবিষ্কারে জিনের নিয়মবিধি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্ব সামনে এল। এই তত্ত্ব মানুষ-সহ সব ধরনের বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবিটিস থেকে ক্যানসার পর্যন্ত নানা ধরনের রোগের পিছনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জিনই দায়ী। এবং সেই জিনের কাজের নিয়ন্ত্রক হিসেবে জুড়ে রয়েছে এক বা একাধিক এমআরএনএ।