কাছেপিঠে
সুভাষের খোঁজে সুভাষগ্রাম ও অন্যত্র
সাবমেরিন। সংজ্ঞা-সহ সাবমেরিনের ব্যাখ্যা বুঝতে বুঝতেই টের পেয়েছিলাম দেশনায়কের কলজের জোর। কতই বা বয়স তখন, মেরে কেটে বারো-তেরো, ষষ্ঠ শ্রেণির হাফপ্যান্ট-পরা ছাত্র। ক্লাসে দুলালবাবু বলে চলেন, “সাবমেরিন একটি জলযান, জলে ডুবে ডুবে যায়, ওপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না।” সেই সাবমেরিন চেপে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশান্তরী হন সুভাষ, মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ কবল থেকে মুক্ত […]


সাবমেরিন। সংজ্ঞা-সহ সাবমেরিনের ব্যাখ্যা বুঝতে বুঝতেই টের পেয়েছিলাম দেশনায়কের কলজের জোর। কতই বা বয়স তখন, মেরে কেটে বারো-তেরো, ষষ্ঠ শ্রেণির হাফপ্যান্ট-পরা ছাত্র। ক্লাসে দুলালবাবু বলে চলেন, “সাবমেরিন একটি জলযান, জলে ডুবে ডুবে যায়, ওপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না।” সেই সাবমেরিন চেপে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশান্তরী হন সুভাষ, মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ কবল থেকে মুক্ত করতে। মিঠুন-অমিতাভকে সরিয়ে সেই দিনই আমার বল্গা মনের নায়ক হয়ে বসেন সুভাষচন্দ্র। তার পর একটা একটা করে নতুন শ্রেণিতে উর্ত্তীর্ণ হই, আর একটু একটু করে হৃদয়াকাশে উদ্ভাসিত হতে থাকেন সুভাষচন্দ্র বোস। তাঁর ব্যাপকতা এবং দেশপ্রেম ছাড়িয়ে যায় বাকিদের। এর মধ্যেই একদিন শুনলাম, একবার বেলডাঙা এসেছিলেন তিনি। ঘটনা জানামাত্রই গর্বিত হলাম অতীতের সেই আগমনকে স্মরণ করে। শহরের নেতাজি পার্ক ও নেতাজি তরুণতীর্থের যৌথ উদ্যোগে জানুয়ারি মাসের সপ্তাহব্যাপী নেতাজি স্মরণোৎসবের তাৎপর্য ধরা দিল নব রূপে।
আরও পড়ুন নেতাজির বসার চেয়ার সামনে রেখেই স্মৃতি আঁকড়ে রয়েছে ঝাড়গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার!
গোটা শীত জুড়েই বঙ্গের এ-দিক ও-দিক চরকিপাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছি গরমের গুঁতো থাকাকালীনই। তাই মিলনদা কোদালিয়া যাওয়ার কথা বললে রাজি হলাম তৎক্ষণাৎ। ২০১৭’র শেষ দিনে যখন সবাই নতুন বছরকে আবাহনের প্রস্তুতিতে মগ্ন, আমি ছুটলাম সুভাষচন্দ্রের পিতৃদেব জানকীনাথের পৈতৃকভিটে দর্শনে। প্রথমে যাব কোদালিয়া, তার পর এলগিন রোডে নেতাজিভবন। সেইমতো কাউকে কিছু না বলে একা একাই বেরোলাম অমৃতপুত্রের সন্ধানে। ভাগীরথী এক্সপ্রেস দেরি করায় সুভাষগ্রাম যাওয়ার ট্রেন পেতে দেরি হল, তবে মধ্যবর্তী সময়টুকুর সদ্ব্যবহার হল ‘জনআহার’-এর চিকেন বিরিয়ানিতে। ৭৮ টাকায় বছরের শেষ লাঞ্চ। সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই শিয়ালদহে যাতায়াত আমার। হাতে সময় বা ট্রেনের দেরি থাকলে স্টেশনের ধাপিতে বসে বসে নানা কিসিমের লোকজন ও তাদের কাণ্ডকারখানা নাগাড়ে খেয়াল করা আমার খুব প্রিয় টাইমপাস। একটা করে ট্রেন ঢোকে আর মিছিলের মতো লোক গলগল করে বেরিয়ে হারিয়ে যায় মহানগরীর পথে পথে। এবং আশ্চর্য, নিজেরটা ছাড়া বাকিরা কোথায় কী কাজে যায় তা আমি একেবারেই জানি না।
গড়িয়ায় বছর তিনেক ছিলাম আমি, তখন নিউ গড়িয়া স্টেশনটাই ছিল না, ছিল না মেট্রো রেলের বাহাদুরিও। বাঘাযতীন ছাড়ালেই তখনও তেপান্তরের মাঠঘাট চোখে পড়ত, অট্টালিকার বাড়বাড়ন্ত ছিল না। আর একটা ব্যাপারে অবাক হতাম, গড়িয়ার দুই দিকের সিগন্যালই সর্বদা হলুদ হয়েই থাকত, ট্রেন এসেই যেত, এসেই যেত। এখনও আমার বিশ্বাস, সোনারপুর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন ধরতে কেউই সময় দেখে না, জানে স্টেশনে গেলেই কোনো না কোনো লোকাল পেয়ে যাব ঠিক। ডায়মন্ড হারবার লোকাল গড়িয়া ঢুকতেই এ-দিক সে-দিক উঁকিঝুকি মারলাম, কিছুই ঠাহর হল না। মিলনদা বলে দিয়েছিল, সোনারপুরের পরই সুভাষগ্রাম। সেইমতো গুতোঁগুঁতি বাঁচিয়ে নিলাম নামার প্রস্তুতি। এত ভিড়ের মধ্যেও পল্টু ব্যাটার অস্থিরতা টের পাচ্ছি, সে বুঝি সেই সন্ধিক্ষণের নাগাল পেয়ে গিয়েছে, যার কারণে এখানে আসা। রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার অন্তর্গত সুভাষগ্রাম। রিকশায় উঠে দেখি, চালক পা তুলে হ্যান্ডেল পাকড়ে বসে রয়েছে আর রিকশা চলছে আপন গতিতে। সাধারণ রিকশার এই অসাধারণ আচরণ এর আগে দেখি নাই কখনও। হাঁটতেই চাইছিলাম, কিন্তু এক কাকাবাবুর খপ্পরে পড়েই এই রিকশাবিলাস, উনি লম্বা করে জানালেন চল্লিশ মিনিট হাঁটলে তবেই বোসবাড়ি, অগত্যা!
আরও পড়ুন মতাদর্শের বিভেদ ভুলে নেতাজি-শ্রদ্ধায় ঐক্যবদ্ধ মোদী-মমতা-রাহুল
নেতাজি সুভাষের সম্মানেই যে চাংড়িপোতা হয়েছে সুভাষগ্রাম, সে কথা না জানালেও চলে। রিকশা চড়ে রবিবারের সুভাষগ্রামের মহল্লা নজরে রাখতে রাখতেই এগিয়ে চলি হরনাথ বসুর বাড়ির দিকে, যাঁর নাতিকে আজও খুঁজে ফেরে বাঙালি, বিশ্বাস করে দেশের এই দুর্দশায় তিনি নিশ্চিত ভাবেই ফিরে আসবেন, মৃ্ত্যু-বিজ্ঞান হেরে যায় বাঙালি আবেগের কাছে, বারবার। তরুণ সংঘের মাঠ পার করে বাবুদাকে পাওয়া গেল। সৌম্যদর্শন ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলেন সেই ভিটেটিকে যার মাটি সৃষ্টি করেছিল এক আপসহীন অগ্নিপুত্রের যিনি অত্যাচারীর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানতেন। হলুদ রঙা দোতলা বাড়ি, বড়ো বারান্দা, বেশ কিছু ছাদের অংশ ভেঙে পড়েছে, ঘরগুলি তালাবন্ধ। খোলা জানলার ফাঁক দিয়ে কিছু আসবাবপত্রও চোখে পড়ে। বাড়ির সামনেও অনেকটা ফাঁকা জায়গা। ক্ষয়ে যাওয়া ইটগুলিকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, কেমন ছিল বোসেদের ঘরকন্না? দাদুর বাড়ির ঘরময়, বারান্দা জুড়ে, বাগানে, হামাগুড়ি, দৌড়োদৌড়ি করেছে কি ছোট্ট সুভাষ? কটকে পড়াশোনার ফাঁকে, ছুটিছাটাতে বা বার্ষিক পরীক্ষার শেষে কখনও কি এসেছে দাদু-ঠাকুমার কাছে? কেমনধারা ছিল তার আবদার? কী ভাবে সে পেল এত সাহস? এত শৌর্য? এত তাপ? নিরুত্তর চুনসুরকি ধুলো হয়ে ঝরে পড়ে অবিরত, আমি বসে পড়ি বারান্দায়, ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করি সেই কালকে যা এখন মহাকালের কবলে।
শঙ্কর ঘোষ এ বাড়ির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক। বংশপরম্পরায় তাঁরা এই কাজ করে আসছেন। তিনিই জানালেন, রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে, সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজও শুরু হবে শীঘ্র। এ তথ্যে নিশ্চিন্ত হয়ে বেরিয়ে এলাম। (এই দু’ বছরে সেই ভবনের সংস্কার হয়েছে।) বাবুদা তখনও ওখানে বসেছিলেন, বললেন এত দূর থেকে এসেছেন বোসেদের পারিবারিক নারায়ণ মন্দির দেখে যান। তাঁর কথামতো ঠাকুরদালান দেখে নিলাম, দুর্গাপুজোও হয় সেখানে, বোস পরিবারের বর্তমান সন্তানসন্ততিরা নাকি এখনও একত্রিত হন পুজোর ক’টা দিন। নির্জন দালানচত্বরটি আমার বেশ লাগল, অনেকক্ষণ বসে রইলাম চুপচাপ, একা একাই। কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম হরনাথ বোস, জানকীনাথ বোস ও তাঁদের পরিবারবর্গের পুজোকালীন হইচই, হাঁকডাক, কলরব যা কালের অভিঘাতে হয়েছে নিরুদ্দেশ। মন্দিরের গেটটিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে হরনাথ লজ, পাশেই কোদালিয়া হরনাথ বীনাপাণি লাইব্রেরি, অগ্রদূত এবং কোদালিয়া ডাকঘর যার সামনে প্রশস্ত খেলার মাঠ। সম্পন্ন গৃহস্থ হরনাথ বোসই ছিলেন এ সবের মালিক। পাড়াটিও বেশ, ছিমছাম, কোলাহলমুক্ত, শরৎচন্দ্রের পল্লিসমাজের কথা মনে পড়ায়।
কবি সুভাষ থেকে নেতাজি ভবন মেট্রো স্টেশন। পুরো পথটিতেই কোদালিয়া আচ্ছন্ন করে রাখল আমায়। তবে শুধু নেতাজির দাদুর বাড়ি নয়, আরও এক বিখ্যাত বাঙালি সলিল চৌধুরীর মাতুতালয়ও নাকি কোদালিয়া। এ দিকে ট্রেনে উঠেই এক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি, যাব ‘নেতাজি ভবন’, টিকিট করেছি ‘নেতাজি’-এর। এই লাইনে প্রথম যাত্রা আমার, তাই ‘নেতাজি’ আর ‘নেতাজি ভবন’ গিয়েছে গুলিয়ে। ভাড়ায় পুরো পাঁচ টাকার ব্যবধান, বৈদ্যুতিক দরজা খুললে হয়! যা ভেবেছি তা-ই, যেখানে ভূতের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়, দরজার কাছে নীল পোশাকের নিরাপত্তারক্ষী আর প্লাস্টিকের গোল চাকতিটিকে অবলীলায় অস্বীকার করল মেশিন বাবাজি, পর পর দু’ বার, চিচিং ফাঁকও হল না। ভয়ানক অপ্রস্তুত পরিস্থিতি, এমন সময় দেখা দিলেন স্বয়ং নারায়ণ, আমার পিছনের ভদ্রলোকটি চাকতিটি কুড়িয়ে মেশিনের ওপর রাখলেন, হাতে থাকা স্মার্ট কার্ডটি চেপে ধরতেই পাঁচ টাকার সীমান্ত খুলে গেল, উনি শুধু বললেন, চলুন চলুন। আপনাদের অনেক আগেই জানিয়েছি ভগবান আমার বখাটেপনা ভালোওবাসেন, প্রশ্রয়ও দেন, আজ আবার প্রমাণ হল।
নতুন নাম লালা লাজপৎ রায় সরণি হলেও আমার ভোট এলগিন রোডের তরে, কেননা এলগিন রোড উচ্চারিত হলেই সাথে সাথে সেই ইতিহাসও মনে এসে ভিড় করে যা নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ নেই। নেতাজিভবনের বিশালতা ও শৈলীতে গা ছম ছম শুরু হবে প্রবেশমাত্রই। প্রথমেই চোখ পড়বে সেই গাড়িটির দিকে যা দেশের স্বাধীনতায় দিকনির্ণয়ী ভূমিকা নিয়েছিল। ভাইপো শিশিরচন্দ্র বসু এই অডি করে কাকা সুভাষ বোসকে পৌঁছে দিয়েছিলেন গোমো। যা ইতিহাসের পাশাপাশি বাঙালিজীবনেও মহানিস্ক্রমণ বলে খ্যাত। এ ইতিহাস যদি আপনার জানা থাকে, তা হলে গাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ান, ষ্টিয়ারিং হাতে শিশিরচন্দ্র আর পেছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে রয়েছেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ – শুধু এই দৃশ্যটুকু কল্পনা করতে পারলেই মেরুদণ্ডের বৈদ্যুতিক শিরশরানি টের পাবেন নিশ্চিত। এ এমন একটা ঘটনা যা ছাপোষা, সাধারণ, ভীরু বাঙালিকেও আস্পর্ধার পাঠ দেয়, তাকেও বিশ্বাস করতে শেখায় হ্যাঁ বাঙালিও পারে।

এই গাড়িতে চাপিয়ে নেতাজিকে গোমো পৌঁছে দিয়েছিলেন ভাইপো শিশির।
নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর যত্নে জানকীনাথ, শরৎচন্দ্র ও সুভাষচন্দ্রের ব্যবহৃত ঘর, বিছানা-সহ আসবাবপত্র দেখানোর আন্তরিক ব্যবস্থাপনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এমন কিছু অনন্য অনুভূতি আপনার মনের দখল নেবে যার নাগাল কখনোই কোথাও বেড়াতে বেরিয়েই আপনি পাননি। মার্বেলপাথরে নির্মিত একজোড়া থালা ও বাটি যা দিয়ে এ বাড়িতে সুভাষের শেষ ডিনার সম্পন্ন হয়েছিল তা দেখে আপনার চোখ ভিজে যাওয়া স্বাভাবিক, যদি আপনি ভাবতে পারেন, এই থালায় খেয়েই ঘরের ছেলেটি দেশান্তরী হয়েছিল। জান্তে অজান্তে সুভাষকে তো আমরা ঘরের ছেলে বলেই মনে করি, তাই না? তাঁর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সংরক্ষিত পদচিহ্নে পা দেবেন না যেন, পারলে ওই মহামানবের পদচিহ্নেই প্রণাম করুন, পুণ্যি হবে। কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন যে ঘরে বসে কাজকর্ম এবং আগত লোকজনের সঙ্গে উনি দেখা করতেন, তার দেওয়াল ছিল ত্রিবর্ণরঞ্জিত, আজও সে ভাবে রাখা রয়েছে। তিন তলায় সাজিয়ে রাখা তাঁর নিজ হস্তে লেখা চিঠিপত্র, বা জামাকাপড়ের সামনে দাঁড়ালেই আপনার লোম খাড়া হয়ে যাবে অজ্ঞাত মগ্নতায়।
একটা মানুষের কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি কতখানি হলে তাঁকে ‘নেতাজি’ বলে মেনে নেন স্বয়ং রবিঠাকুর, একটিবার ভেবে দেখুন। কতটা আবেদন থাকলে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্রনায়েকরা ছুটে আসেন তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আজও, এখনও, সেটাও ভাবার বিষয়। আজ যখন সর্বত্রই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা তখন তাঁর উদাত্ত আহ্বান, তাঁর বলিষ্ঠ প্রত্যয় ভীষণই জরুরি ছিল। নেতাজিভবনের আনাচেকানাচে ইতস্তত পদচারণা করলে শ্রদ্ধায় আপন হতেই মাথা নত হয়ে আসে। মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসি বাড়ি থেকে, রাস্তা হতে লাগাতার ছবি তুলতে থাকি, তবুও যেন আশ মেটে না। মহানিষ্ক্রমণের ৭৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে গত ২০১৬ সালে, তবুও যেন সব জীবন্ত। সব দেখেও মনের খিদে মেটে না, কিন্তু যেতে তো হবে। মেট্রো ধরে মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশন, ওপরে উঠলেই মহাজাতি সদন। যার নামফলকে লেখা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিকল্পিত মহাজাতি সদনের শিলান্যাস করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরবর্তীতে যার দ্বরোদঘটন হয় ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাত থরে। এটাও শেষ নয়, শিয়ালদহ যাব বলে মহাত্মা গান্ধী রোড-চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখি আরও একটা স্মৃতিফলক। সেখানেও জ্বলজ্বল করছে সুভাষচন্দ্রের নাম । সে ফলক জানান দিচ্ছে, Through this historical place Netaji Subhas Chandra Bose continued his ambitious and never ending journey to free our motherland-INDIA । সত্তর বছরেরও বেশি হয়ে গেল মাতৃভূমি স্বাধীন হয়েছে, নেতাজির পথচলা শেষ হয়নি, সুভাষ ঘরে ফেরে নাই, আজও।
ছবি: পিন্টু মণ্ডল ও লেখক
কলকাতা
১০ নভেম্বর থেকে খুলছে কলকাতার চারটি দর্শনীয় স্থান
অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এবং অন্য়ান্য কোভিডবিধি মেনে চলার বিষয়গুলিতে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কলকাতা: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং ভারতীয় জাদুঘর-সহ কলকাতার চারটি আকর্ষণীয় স্থানের দরজা খুলে যাচ্ছে ১০ নভেম্বর থেকেই। করোনা মহামারির কারণে এই দর্শনীয় স্থানগুলিতে প্রায় আট মাস দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
বিনোদনের অন্য়ান্য ক্ষেত্রগুলির মতোই কোভিড-১৯ মহামারির জেরে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে বন্ধ ছিল মিউজিয়াম এবং অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রগুলি। লকডাউন না থাকলেও করোনা সংক্রমণের কথা বিবেচনা করেই এখনও সেগুলি বন্ধ। তবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফের সেগুলি খুলতে চলেছে।

রবিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর কাছে একটি সাক্ষাৎকারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের (Victoria Memorial) কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানান, সমস্ত রকমের কোভিডবিধি কঠোর ভাবে মেনেই ফের খুলবে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম এই স্থাপত্যের দরজা।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীরা সকাল ১১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। তবে এর জন্য অনলাইনে টিকিট কাটা যাবে। কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আবার স্মার্টফোনের অভাবে যাঁরা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন না, তাঁদের জন্য কাউন্টারেও টিকিট বিক্রি করা হবে।

কর্তৃপক্ষ জানান, একই সময়ে পাঁচশো জনের বেশি দর্শনার্থীকে সৌধ চত্ত্বরে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে, ভিতরে ঢুকে গ্যালারি ঘুরে দেখার জন্য এক সঙ্গে ২০০ জনকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে।
দর্শনার্থীদের জন্য স্যানিটাইজেশন, থার্মাল স্ক্রিনিং এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত নেওয়া হচ্ছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সিসিটিভির নজরদারি চলবে।
একই দিনে খুলছে সায়েন্স সিটি। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামেরর আওতাধীন এই দর্শনীয় স্থানটি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে সাধারণের জন্য। আগে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকত সায়েন্স সিটি (Science City)।

কোভিডবিধি মেনেই ওই একই দিনে খুলে যাচ্ছে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্য়ান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম (Birla Industrial and Technological Museum) এবং ভারতীয় জাদুঘর (Indian Museum)।

বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রতিটি জায়গাতেই অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এবং অন্য়ান্য কোভিডবিধি মেনে চলার বিষয়গুলিতে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়তে পারেন: ভুবনেশ্বরের জেলে মৃত্যু আইকোর কর্তা অনুকূল মাইতির
কাছেপিঠে
ভারতভূমের সাহেবপাড়া ম্যাকলুস্কিগঞ্জ
ইংরেজ সরকারের হাতে ভারত তখন বন্দি৷ শুধু শাসন করাই নয়, এই দেশের সম্পত্তি বিদেশে রফতানি করে কী ভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে হয় তা ব্রিটিশকর্তারা তখন ভালোই জেনে গিয়েছেন৷ ব্রিটিশ সরকার খোঁজ পেল ছোটোনাগপুর অঞ্চলের খনিজ সম্পদ আর দামোদরের উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা কয়লা-সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যের ভাণ্ডার৷ সেই সম্পদ বিদেশের মাটিতে পৌঁছে দিতে পারলেই পকেট আরও ফুলেফেঁপে […]

ঋত্বিক দাস
ইংরেজ সরকারের হাতে ভারত তখন বন্দি৷ শুধু শাসন করাই নয়, এই দেশের সম্পত্তি বিদেশে রফতানি করে কী ভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে হয় তা ব্রিটিশকর্তারা তখন ভালোই জেনে গিয়েছেন৷ ব্রিটিশ সরকার খোঁজ পেল ছোটোনাগপুর অঞ্চলের খনিজ সম্পদ আর দামোদরের উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা কয়লা-সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যের ভাণ্ডার৷ সেই সম্পদ বিদেশের মাটিতে পৌঁছে দিতে পারলেই পকেট আরও ফুলেফেঁপে উঠবে৷
কিন্তু বাধ সাধল ছোটোনাগপুরের গভীর জঙ্গল৷ এত সম্পদ এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পরিবহণ করে কলকাতা বন্দরে আনা কী ভাবে সম্ভব? পরিকল্পনা হল, জঙ্গল কেটে রেলপথ তৈরি করার৷ কলকাতা-দিল্লি রেলপথের গোমো স্টেশন৷ সেখান থেকে ডালটনগঞ্জ দিয়ে লাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হল৷ রেললাইনের স্লিপার করতে বহু গাছ কাটা পড়ল৷ স্লিপার তৈরির বরাত দেওয়া হল কলকাতার কিছু ঠিকাদারকে৷
এক বার এমনই রেলের কাজের দায়িত্ব নিয়ে এলেন আর্নেস্ট টিমোথি ম্যাকলুস্কি নামে এক কলকাতাবাসী এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী৷ ম্যাকলুস্কি সাহেবের জায়গাটা বেশ ভালো লেগে গেল৷ তখন ওই অঞ্চলে লাপড়া, কঙ্কা ও হেসাল, এই তিনটি জঙ্গলময় বসতি ছিল৷ পরিবেশটা পুরো বিলেতের মতো৷ সারা বছরই ঠান্ডা আবহাওয়া৷ পাহাড়ে ঘেরা, অরণ্যে মোড়া এক মনোরম জায়গা, গোটা পরিবেশটাই যেন বিলেতের একটা ছোটো সংস্করণ৷
ম্যাকলুস্কি সাহেব জায়গাটির প্রেমে পড়ে গেলেন এবং এখানেই স্থায়ী ভাবে বসতি গড়লেন৷ পাশাপাশি বন্ধু আত্মীয়পরিজনকে এখানে এসে থাকার আহ্বান জানালেন৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কিছু পরিবার এখানে এসে বসতি স্থাপন করলেন৷
আরও পড়ুন ‘লাল কাঁকড়ার দেশ’- তাজপুর
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইংল্যান্ডকে কোণঠাসা করে ফেলল। ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ক্রমশ ভেঙে পড়তে লাগল। তার প্রভাব এসে পড়ল এ দেশে অ্যাংলো সাহেবদের ওপর৷ ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো এ দেশে একের পর এক অ্যাংলো সাহেবকে কর্মচ্যুত করতে লাগল তুচ্ছ অজুহাতে৷ এই সময় বহু অ্যাংলো কাজ হারালেন৷ তাঁরা ঠিক করলেন এই ঘটনা তাঁরা ব্রিটেনে গিয়ে মহারানিকে সরাসরি জানাবেন৷ এতে ঘোরতর বিপদ বুঝে ব্রিটিশ সরকার অ্যাংলোদের ব্রিটেনে যাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করল৷
এমনিতেই অ্যাংলোদের কোনো স্থায়ী জায়গা ছিল না ভারতে, তার ওপর কর্মচ্যুত হওয়ার পর তাদের প্রতিবাদ ভাবিত করে তুলল ব্রিটিশ সরকারকে৷ সরকার প্রমাদ গনল। অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি হল৷ ডেকে পাঠানো হল ম্যাকলুস্কি সাহেবকে৷ তিনি এসে এই জায়গার (আজকের ম্যাকলুস্কিগঞ্জ) কথা সবাইকে বলেন৷ তিনি অ্যাংলোদের বোঝালেন, “চলো, কাছেই আমাদের বিলেতের মতো একটি গ্রাম আছে। সেখানে আমরা সবাই মিলে বসতি স্থাপন করে তাকে ইংল্যান্ডের রূপের পরিপূর্ণতা দিই।”
১৯৩৩-এ তৈরি হল কলোনাইজেশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া। ঠিক হল, এই সমবায়ে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা শেয়ার কিনলে তাদের এক টুকরো করে জমি দেওয়া হবে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় দু’ লক্ষ অ্যাংলো ইন্ডিয়ানকে এই অঞ্চলে বসতি গড়ার জন্য আহ্বান জানালেন ম্যাকলুস্কি।
আরও পড়ুন কুমারী সৈকত চাঁদপুরে একটা দিন
ম্যাকলুস্কি সাহেবের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় ৪০০ অ্যাংলো পরিবার এই স্থানে পাকাপাকি ভাবে বসতি স্থাপন করে৷ ১৯৩৪ সাল নাগাদ রাতু মহারাজের কাছ থেকে লাপড়া, কঙ্কা ও হেসাল, এই তিনটি অঞ্চল দান হিসেবে চেয়ে নিলেন ম্যাকলুস্কি সাহেব৷ রাতু মহারাজ সেই আবদারে রাজি হয়ে অঞ্চল তিনটি ম্যাকলুস্কি সাহেবকে দান করলেন৷ ম্যাকলুস্কি সাহেবের নামে নাম হল ম্যাকলুস্কিগঞ্জ৷ অনেক অ্যাংলো স্কুল এখানে গড়ে উঠল৷ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অ্যাংলো ছেলেমেয়েরা এই সব স্কুলে পড়তে এল৷ তাদের থাকার জন্য অনেক হোস্টেল তৈরি হল৷ ব্রিটিশরা ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে ঝাড়খণ্ডের স্কটল্যান্ড বলেও ডাকত৷ আজও অনেকে এই স্থানটিকে ‘স্কটল্যান্ড অব ঝাড়খণ্ড’ বলে ডেকে থাকেন৷
তবে অ্যাংলোদের বসতি স্থাপন সুখের হয়নি৷ তাদের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের দিকে এগোতে থাকে৷ আদিবাসীরা নিজেদের পুরোনো জায়গায় কেমন যেন পর হয়ে গেল৷ অ্যাংলোদের কাছে তারা চাকরের মতো হয়ে গেল৷ গাছের ফলে হাত দিলে জুটত অপমান, এমনকি কখনও মারও৷ একই জায়গায় থেকেও নিজেদের মধ্যে মেলামেশা করতে পারত না আদিবাসীরা৷ সব সময় সাহেবরা বন্দুক নিয়ে ঘুরত আর তাদের ওপর নজর রাখত৷ এমন অবস্থায় আদিবাসীরা ক্রমশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে৷ যার ফলস্বরূপ স্বাধীনতা লাভের পর বহু অ্যাংলো পরিবারকে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ ছাড়তে হল।
আরও পড়ুন জঙ্গল, পাহাড় ও কাঞ্চনময় তিনচুলে
এর পরও বেশ কিছু অ্যাংলো পরিবার এখানে থেকে গেল নিজেদের জমি আঁকড়ে। পরবর্তীকালে তাদের উত্তরসূরিরাও একে একে পাড়ি জমাল বিদেশে রোজগারের সূত্রে৷ ক্রমশ সাহেবদের বাড়িগুলো পরিত্যক্ত হতে শুরু করল৷ সেগুলো পরে স্থানীয় ক্ষমতাশালী মানুষজন ও ব্যবসায়ীরা নেন৷ কিছু অ্যাংলো পরিবার অবশ্য এই অঞ্চলেই নিজেদের বাড়িতে থেকে গেল৷
সত্যি কথা বলতে কি বাঙালির কাছে ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে পরিচিত করেছেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ৷ যথারীতি আমারও এই জায়গাটার প্রতি আকর্ষণ ছিল। আমার সেই আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিল আমার এক ছোটো ভাই সৌম্যদীপ মণ্ডল। শেষ পর্যন্ত নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখে উঠে পড়লাম ট্রেনে৷
আরও পড়ুন চলুন সপ্তাহান্তে, ভূতাবুড়ি ও ঘাঘরবুড়ি দর্শনে
প্রথম বার গিয়েই প্রেমে পড়ে গেলাম ম্যাকলুস্কিগঞ্জের৷ তবে এখানে ‘এলাম দেখলাম আর জয় করলাম’, এমন মনোভাব নিয়ে এলে নিরাশই হতে হবে৷ এখানে দু’টো দিন হাতে নিয়ে আসতে হবে৷ আর প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ইচ্ছা থাকলেই এখানে আসা সার্থক৷ এখানে সে ভাবে কোনো ট্যুরিস্ট স্পট নেই৷ শুধু ভোরের সুর্য ওঠা থেকে শুরু করে বিকেলের সুর্যাস্ত পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে কিংবা মেঠো রাস্তা দিয়ে প্রকৃতিকে আপন করে ঘুরে বেড়ানো৷
আসলে সত্যিকারের প্রকৃতিপ্রেমিকদের কাছে আদর্শ জায়গা এই ম্যাকলুস্কিগঞ্জ। লাল কাঁকুড়ে পথঘাট, আশেপাশে সাহেবদের কটেজ৷ দূরে অরণ্য ও পাহাড়ের হাতছানি৷ পূর্ণিমার রাতে মায়াবী রূপ ধরে প্রকৃতি৷ বসন্তে পলাশ, শিমুলের সঙ্গে জাকারান্ডায় ছেয়ে যায় চারি দিক৷ সেই রূপ আরও মোহময়ী৷ এক অপার্থিব নিস্তব্ধতায় হিমেল হাওয়ার স্পর্শ৷ দিনের বেলায় শুধুই পাখির কুজন।
ম্যাকলুস্কিগঞ্জের আশেপাশে কিছু জায়গা আছে যেগুলোকে যুক্ত করে একটা সুন্দর ট্রিপ হতে পারে৷ এই প্রসঙ্গে প্রথমেই আসি ওয়াচটাওয়ারের কথায়৷ স্টেশন থেকে প্রায় আড়াই কিমি দূরে ছোটো একটি টিলার টঙে এই ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে গোটা অঞ্চলটিকে ছবির মতো দেখায়৷ ১৮০ ডিগ্রি বৃত্তাকারে পাহাড়শ্রেণি ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে ঘিরে রেখেছে৷
চলুন, এ বার যাওয়া যাক ডুলি উপসনাস্থলে৷ স্টেশন থেকে প্রায় ন’ কিমি। হিন্দু, ইসলাম, শিখ আর খ্রিস্টান, এই চার ধর্মের এক সঙ্গে পাশাপাশি উপাসনার বেদি৷ জায়গাটি সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা বহন করে৷
ডুলির পাশেই একটি ছোটো দিঘি, নাম তার সীতাকুণ্ড৷ স্থানীয়রা এই কুণ্ডকে খুব মান্যি করে৷ রাস্তার দু’ধারে ডুলি ফরেস্ট। মাঝেমধ্যে হাতি অভিসারে আসে এই অরণ্যে৷
এখান থেকে সামান্য দুরে জাগৃতিবিহার৷ আদিবাসীদের হস্তশিল্পের সমবায়৷
জাগৃতি বিহার থেকে কিছুটা দূরে চাট্টিনদীর পাড়৷ জায়গাটির নাম ডুগাডগি বা ডিগাডগি৷ চাট্টি ম্যাকলুস্কিগঞ্জের নিজস্ব নদী৷ দামোদর থেকে এর উৎপত্তি৷ টিলাময় এই জায়গা৷ জায়গাটায় দু’ দণ্ড বসে চার পাশের দৃশ্য বেশ সুখকর লাগে৷
রেলগেটের বাঁহাতি পথে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে দামোদর নদীর ব্রিজ৷ ব্রিজের ওপর থেকে দামোদর নদী আর চাট্টি নদীর মিলনস্থল দেখা যায়৷ এখান থেকে সূর্যাস্ত বা সুর্যোদয়ের দৃশ্যও মনোরম৷ এখান থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরে একটি পাহাড়ের ঝোরা থেকে দামোদরের উৎপত্তি৷
আর একটি জায়গা হল ম্যাকলুস্কি সাহেবের কবরখানা৷
এ ছাড়া চলতে ফিরতে অসংখ্য হোস্টেল রয়েছে জায়গাটিকে ঘিরে৷ এক সঙ্গে এত হোস্টেল খুব কম জায়গায়ই দেখা যায়।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়ে পড়ুন। ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে রফা করে গাড়ি বা অটো নিয়ে ঘুরে আসুন। সন্ধে নামার আগেই হোটেলে ফিরে আসা যায়৷ তবে সব সময় সন্ধের অন্ধকার নামার আগে গেস্টহাউসে ফিরে আসা ভালো৷
এ ছাড়াও ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে কেন্দ্র করে ঘুরে আসতে পারেন ৫০ কিমি দুরের লাতেহারের জঙ্গল থেকে৷
পাহাড়, জঙ্গল, স্থাপত্য, নদী সব মিলিয়ে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ এক স্বয়ংসম্পূর্ণ জায়গা৷ সপ্তাহান্তে দু’-তিন দিন হাতে নিয়ে এখানে ঘুরে আসতে পারলে সেটা জীবনের একটা স্মৃতি হয়েই থাকবে৷
যাওয়া
হাওড়া থেকে রাঁচিগামী ট্রেনে রাঁচি পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দুরে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ৷ এ ছাড়া হাওড়া থেকে সরাসরি শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ম্যাকলুস্কিগঞ্জ পৌঁছে দেয় রাত পৌনে ১১টায়৷ হোটেল/গেস্টহাউসে বলে রাখলে তারা স্টেশনে গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে৷ তবে হাওড়া থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে রাঁচি পৌঁছে সেখান থেকে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ যাওয়াই ভালো।
থাকা
ম্যাকলুস্কিগঞ্জ গিয়ে দিন দুয়েক থাকতেই হবে৷ থাকার জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত হল গর্ডন গেস্টহাউস৷ ফোন নম্বর: ০৯৮৩৫৭৭০৬৭৯/৯৪৭০৯৩০২৩০৷ এ ছাড়া আছে মাউন্টেন হলিডে রিসর্ট৷ ফোন নম্বর: ২৭৬৩৫৭/৭৭৩৯০৮৯০৫২
খাওয়া
যে গেস্টহাউসে থাকবেন সেই গেস্টহাউসে বলে রাখলে তারা দুপুর বা রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়৷ এ ছাড়া বাইরে অনেক খাবারের হোটেল আছে৷ তাদের বলে রাখলে আপনার পছন্দসই খাবারের ব্যবস্থা করে, এমনকি গেস্টহাউসে পৌঁছেও দেয়৷ স্টেশনের সামনে সুরেশের শিঙাড়ার স্বাদ নিন৷ আর স্টেশনের বাইরেই এক জন চাউমিন বানান, স্বাদ খুব ভালো৷ এ ছাড়া ম্যাকলুস্কিগঞ্জের তেলেভাজা, কচুরি, জিলিপি ও চাল দিয়ে তৈরি ধোস্কার স্বাদ নিতে ভুলবেন না৷
ঘোরাফেরা
স্টেশন থেকেই অটো পেয়ে যাবেন৷ গেস্টহাউস থেকেও অটো বা গাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়৷ অটোর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন সুখেন্দ্র মুন্ডার সঙ্গে, ফোন নম্বর: ৮৫২১৪৫৩৫৪০৷
ছবি লেখক
কাছেপিঠে
‘লাল কাঁকড়ার দেশ’- তাজপুর
‘পায়ের তলায় সরষে’ – আমি বাধ্য হয়েই ভ্রমণকারী, ভ্রমণ আমার জীবনযাপনেরই অঙ্গ। কিছু দিন এক জায়গায় থিতু হয়ে থাকলেই মন উচাটন হয়, মাথার মধ্যে একটা ক্যারা নড়াচড়া করে। প্রতি দিন একই মানুষের সঙ্গ, খুব ঘনিষ্ট হলেও, আর উত্তাপ দেয় না! একই রকম মুখ দেখতে দেখতে চোখ খরখরে হয়ে যায়, তখন ইচ্ছে করে কিছু দিনের জন্য […]

অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়
‘পায়ের তলায় সরষে’ – আমি বাধ্য হয়েই ভ্রমণকারী, ভ্রমণ আমার জীবনযাপনেরই অঙ্গ। কিছু দিন এক জায়গায় থিতু হয়ে থাকলেই মন উচাটন হয়, মাথার মধ্যে একটা ক্যারা নড়াচড়া করে।
প্রতি দিন একই মানুষের সঙ্গ, খুব ঘনিষ্ট হলেও, আর উত্তাপ দেয় না! একই রকম মুখ দেখতে দেখতে চোখ খরখরে হয়ে যায়, তখন ইচ্ছে করে কিছু দিনের জন্য অন্য নদীতে ডুব দিয়ে আসি, অন্য হাওয়ায় আচমন করি। মনে হয়, অরণ্যের দিনরাত্রির চরিত্রগুলো বোধহয় আমিই! আচ্ছা ভাবুন তো, নিরিবিলি জঙ্গলে বসে থাকা বা গড়ানো কিংবা পাহাড়, সমুদ্র, নদীতে মিশে যাওয়া – এর আকর্ষণ আপনি অস্বীকার করতে পারেন।
পরিচিত পরিবেশ ছাড়িয়ে, দূরে কোথাও নির্জন জায়গায় থাকলে, নিজের সঙ্গে দেখা হয়। মাঝে মাঝে নিজের সাহচর্য্ও তো দরকার! জঙ্গলে, পাহাড়ে, উপরে পরিষ্কার তারাভরা আকাশ, মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে বাতাসে পাতার শব্দ… আর কোনো মানুষ নেই… নিজের সঙ্গে কথা বলেছেন কখনো! দেখবেন, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন! অনুভব করবেন, রূপসী বসুন্ধরা, মানুষের বসবাসের পক্ষে চমৎকার এক জায়গা! এ রকম নিস্তব্ধতার মধ্যেই তো টের পাওয়া যায় – মানুষের কণ্ঠস্বরঃ… একটা দু’টো পাখির ডাক, কিংবা বাতাসে, গাছের পাতার শব্দ, কত মধুর।
প্রতি দিন আমরা অনেক স্বপ্ন দেখি, অধিকাংশ স্বপ্নই আর মনে থাকে না। ধূপের গন্ধের মতো মিলিয়ে যায়, কোনো কোনোটি সকালে জেগে ওঠার পরেও কিছুক্ষণ মনে থাকে, আর কিছু স্বপ্ন বেশ স্থায়ী দাগ রেখে যায় স্মৃতিতে। তাজপুর যেন অনেকটা, সে রকমই। তাজপুর আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আপনার স্বপ্নে – সমুদ্রের ঢেউয়ের দোলা আর ফেনার আস্তরণ সঙ্গে সবুজ ঝাউগাছের গা- ঘেঁষাঘেঁষি বাস, যেন পথিকের ‘দিগন্ত-পথ’, কোথায় শেষ হবে, কেউ জানে না। জানতে চায়-ও না। ভ্রমর যেমন ফুলের সৌন্দর্যের তোয়াক্কা করে না, শুধু মধুর সন্ধানে ফুলের গভীরে ঢুকে যায়, তেমনই আমি এই প্রকৃতির সৌন্দর্যের তোয়াক্কা না করে, প্রকৃতির সৌন্দর্যের অনুভূতির মধ্যে ঢুকে পড়লাম। প্রকৃতি এখানে উদার আর উন্মত্ত। নরম সকাল, পড়ন্ত বিকেল, সাঁঝবেলা কি রাতের বেলায়… সব কিছুই তো আপনার!
এখানে আছে শুধু অন্তহীন ঢেউ ভাঙার শব্দ আর ঢেউ গোনার অবসর, নীলচে সুমুদ্রে কখনো আলো কখনো ছায়া, সফেদ ঢেউয়ের আছড়ে পড়া, সবুজ ঝাউগাছে, আলতো ছোঁয়ায় সেই ঢেউ পা-দুখানি ভিজিয়ে দিয়ে যাবে, বিন্দু বিন্দু জলকণা, স্নেহধারার মতো ঝরে পড়বে আপনার চোখে-মুখে।
ঘুম থেকে উঠে এসে দাঁড়ালাম সমুদ্রের ধারে। শনশন হাওয়ায় ঝাউগাছগুলো পাগলের মতো দুলছে, চোখের সামনে সূর্য পৃথিবীকে চুমু খাচ্ছে, চমৎকার একটি আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে, সেই আলোয় মাখামাখি হয়ে, আকাশ খিলখিল করে হেসে উঠছে। হঠাৎ করে আমার মাথায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের চরিত্রহীন উপনাস্যের ‘কিরণময়ী ও দিবাকরের’ কথা মনে পড়ে গেল… কিরণময়ী দিবাকরকে চুম্বন করেছিলেন, তার পর খিলখিল করে হেসে উঠেছিলেন। মনে হল আমার চরিত্রহীন আর হয়ে ওঠা হল না। হালকা লালচে সোনালি রং-মাখা আকাশ, যেন পৃথিবীর সেরা সুন্দরী! খিলখিল করে হেসে উঠছে।
আরও পড়ুন কুমারী সৈকত চাঁদপুরে একটা দিন
নতুন এক ফুসফুস পেলাম, তাজপুরে এসে, মনটা ভরে গেল। বয়সটা বেড়ে গিয়েছে, তা না হলে সারা দিন, নতুন প্রেম করলে যেমন হয়… শুধু কথা বলতাম আর ফটো তুলতাম।
শহর থেকে অল্প দূরে কোলাহলমুক্ত এক নির্জন জায়গা, ‘শব্দের অঙ্গীকার’ না-রাখা এক সমুদ্রতট – এই তাজপুর।
কচি আলো গায়ে মেখে জেগে ওঠা – পৃথিবীটাকে কী মায়াময় মনে হচ্ছে। ঘুম ভাঙা পাখিরা একটু হকচকিয়ে উঠেই, পৃথিবীটাকে দেখতে পেয়ে আনন্দে চিৎকার শুরু করেছে, কোমল ও বিনীত ভাবে সূর্য উঠছে!
তাজপুরের ঝাউবনে হাঁটতে হাঁটতে মনে হল এ যেন অভাগীর বুকে সবুজ ভালোবাসার গল্প, এক প্রান্তিক মানুষের আপনজন হয়ে ওঠার কথা, একই আকাশের নীচে, প্রান্তিক মানুষেরা অনেক বড়ো মনের মালিক বলে মনে হয়। প্রান্ত্যজনের বাঁচার হাতিয়ার…ঝাউগাছের ভিতর হাঁটা, আর সমুদ্রের ওপর আদিগন্ত নীল শামিয়ানা। এ যেন ‘অসময়ের পায়ে পায়ে হাঁটা’, শহুরে খোলস ছেড়ে দিয়ে মানবিক মন নিয়ে মিশে যান মানুষের সঙ্গে, দয়িত্বশীল ভবঘুরে ভাব নিয়ে – অনুভবটা অনেকটা এ রকম… ‘একেলা এসেছি এই ভবে, একেলাই চলে যেতে হবে…’।
সমুদ্রের ধারে এলে চোখে পড়ে আকাশলীনা – কবি জীবনানন্দ দাস বলেছিলেন, ‘সমুদ্র আর আকাশ যেখানে মিশেছে, সেই হল ‘আকাশলীনা’, ইংরেজিতে যাকে বলে স্কাইলাইন’।
কবি সুবোধ সরকারের একটি লেখা পড়েছিলাম,”এখন কলকাতায় আকাশ কিনে নিচ্ছে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো, পঞ্চাশ-ষাট তলা হাইরাইস বানিয়ে, ভেঙে চুরচুর করে দিচ্ছে আকাশরেখা, আসলে মানুষ ইন্ডাস্ট্রি চায়, চাকরি চায়, দু’বেলা দু’মুঠো পেটে দিতে চায়, আকাশ দিয়ে কি পেট ভরে! তাতে যদি আকাশ হারিয়ে যায়, কোনো ক্ষতি নেই। আমরা যেমন বছরে এক বার দু’ বার পিকনিক করতে জঙ্গলে যাই, কিন্তু জঙ্গল সঙ্গে করে নিয়ে আসি না, তেমনি আমরা আকাশ দেখতে যাব” – তাই পরের প্রজন্মকে আকাশলীনা দেখাতে তাজপুরের সমুদ্রের ধারে ছুটে ছুটে আসতে হবে।
খাওয়ার কতগুলি অস্থায়ী আস্তানা সমুদ্রের ধারেই – চলুন না, দিনযাপনের একঘেয়েমি কাটাতে, এক কাপ কফি নিয়ে – না, মত বিনিময় নয়, হৃদয় বিনিময় করি, সেই হৃদয় যা আমরা খইয়ে ফেলতে ফেলতে এখনও দু’ হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছি। জীবন মানে তো হিরের খনি! মনে পড়ে গেল কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দু’টি লাইন, “অবান্তর স্মৃতির ভেতরে আছে, তোমার মুখ..অশ্রু ঝলোমলো..”।
‘২২শে শ্রাবণ’ – প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত একটি বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম। ওঁর মুখে একটি সংলাপ ছিল, “জীবনে ভাত ডাল আর বিরিয়ানির ডিফারেন্সটা বোঝা দরকার, প্রথমটা নেসেসিটি,আর পরেরটা লাক্সারি”। ছোটো ছোটো এই বেড়ানোর মুহূর্তগুলোই, সেই নেসেসিটি, তাজপুরের সমুদ্রতট আর লাল কাঁকড়াদের লুকোচুরি, কিংবা মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের অনলস জীবনসংগ্রাম, আপনাকে সেই কথাই মনে করিয়ে দেবে, এটা নেসেসিটি। যদি কেউ অন্যের জিনিস আঁকড়ে থাকে, তা হলে সে একা হয়ে যাবে, কিন্তু যেগুলো নিজের, নিজের ভালোবাসা, নিজের কামনা, নিজের সৃষ্টি আঁকড়ে রাখলে, কোনোদিন একা হতে হবে না।
আরও পড়ুন চলুন সপ্তাহান্তে, ভূতাবুড়ি ও ঘাঘরবুড়ি দর্শনে
আকাশ কালো, সাপের ফনার মতো মেঘগুলো সুমুদ্র থেকে উঠে আসছে। সুমিতা চেঁচিয়ে উঠল খানিকটা ভয়েই, সুনামি আসছে! সুনামি আসছে! আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম প্রকৃতির এই উন্মত্ত রূপ – সুমুদ্র ফুঁসছে, সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানি, আর বাজের চমক। মুহূর্তের মধ্যে বদলে যাওয়া এই রূপ – এ কি মুহূর্তের উপলব্ধি না অনুভূতি? চিমটি কাটলাম। সম্বিত ফিরল ভাস্করের ডাকে – “অভিজিৎ দৌড়াও, বৃষ্টি নেমে গেছে যে”।
জানেন, ‘আপেক্ষিকতার তত্ত্ব’ খুব সহজ করে বোঝাতে আইনস্টাইন নাকি কাউকে বলেছিলেন, “মনে করো, কোনো লোকের একটি পা ফায়ার প্লেসের আগুনে ঠুসে দেওয়া হয়েছে, তা হলে সেই লোকটির কাছে পাঁচ মিনিটই মনে হবে এক ঘণ্টা। আবার কেউ যদি প্রেমিকার পাশে ঘনিষ্ট হয়ে বসে থাকে তা হলে তার এক ঘণ্টাকেই মনে হবে পাঁচ মিনিট” – প্রকৃতির এই রূপ দেখতে দেখতে আমার অনুভুতিটা অনেকটাই প্রেমিকার পাশে বসে থাকার মতো।
মনে হচ্ছিল, এত তাড়াতাড়ি, এত অল্প সময়ে, আমি স্নান করব কী করে, প্রকৃতির এই মুগ্ধতার সাথে।
আচ্ছা, কি মুশকিল! পাঁচ মিনিটে কি মহাভারত শেষ করা যায়?
শহরের কংক্রিটের তৈরি আস্তানাগুলো থেকে বেরিয়ে এসে রোজকার শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন থেকে চুরি করে নেওয়া একটা ছোটো ছুটি, মনে থাকবে চিরকাল।
কোথায় থাকবেন
তাজপুরে থাকার জন্য বহু হোটেল আছে, ঘরে বসে সুমুদ্র দেখা কোনো হোটেল থেকেই সম্ভব নয়, হোটেল ও সুমুদ্রের মধ্যে আপনার বাধা ঝাউগাছের সারি। এদের সন্ধান পেয়ে যাবেন makemytrip, holidayiq, tripadvisor, yatra.com, travelguru প্রভৃতি ওয়েবসাইট থেকে। আমরা ছিলাম মল্লিকা রিসর্টে (৯০০৭৪০১৮৬৮, ০৯৪৩৩০৭৫৪৬৪)।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে তাজপুর ১৭৩ কিমি, দিঘা যাওয়ার পথে বালিসাই, সেখান থেকে বাঁ দিকের রাস্তা ধরে ৫ কিমি গেলেই তাজপুর। চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে। কলকাতা-দিঘা বাসের কন্ডাক্টরকে বলে রাখলে বালিসাইয়ে নামিয়ে দেবেন। সেখান থেকে মিলবে টোটো।
কাছাকাছি রেলস্টেশন রামনগর। হোটেলে আগে থেকে বলে রাখলে ওঁরা স্টেশন বা বালিসাই থেকে পিক আপের ব্যবস্থা রাখেন। অন্যথায় স্টেশন থেকে টোটো বা ট্রেকারে করেও চলে আসতে পারেন তাজপুর।
ছবি : লেখক
-
হাওড়া3 days ago
বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল
-
বিনোদন3 days ago
বাজেটের আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের, সঙ্গে সানি দেওল
-
প্রবন্ধ2 days ago
‘কয়েকটা টাকার বিনিময়ে নেতাজির স্মৃতি ধুলোয় মিশিয়ে দেব?’, বলেছিলেন পদমবাহাদুর
-
কলকাতা2 days ago
ভিক্টোরিয়ায় একসঙ্গে মোদী-মমতা