কাছেপিঠে
ইতিহাসের দেশে ২ / দাখিল দরওয়াজা, ফিরোজ মিনার, বাইশগজী দেওয়াল
একটু চলেই পৌঁছে গেলাম দাখিল দরওয়াজায়। এটি যে কে তৈরি করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ বলেন হুসেন শাহ ১৪২৫ সালে এটা তৈরি করেছিলেন। আবার বলা হয় এই সৌধটির রূপকার বারবক শাহ। যদি গৌড়কে একটা দুর্গ বলে ধরে নেওয়া হয়, তা হলে এটাই তার তোরণ বা প্রবেশদ্বার। গৌড়ে দাখিল হওয়ার জন্যই এই দরওয়াজা। তাই নাম […]

উদয়ন লাহিড়ী
একটু চলেই পৌঁছে গেলাম দাখিল দরওয়াজায়। এটি যে কে তৈরি করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ বলেন হুসেন শাহ ১৪২৫ সালে এটা তৈরি করেছিলেন। আবার বলা হয় এই সৌধটির রূপকার বারবক শাহ।
যদি গৌড়কে একটা দুর্গ বলে ধরে নেওয়া হয়, তা হলে এটাই তার তোরণ বা প্রবেশদ্বার। গৌড়ে দাখিল হওয়ার জন্যই এই দরওয়াজা। তাই নাম হল দাখিল দরওয়াজা। তবে দুর্গ কিন্তু সত্যি ছিল। তার নাম ছিল লখনৌতি। আশ্চর্য হওয়ার পালা। উত্তরপ্রদেশের লখনউ এখানে যে কী করে এল কে জানে।
এটা পুরোটাই প্রায় ইটের তৈরি। পাথরের ব্যবহারও আছে, কিন্তু কম, লিনটন অবধি। এই ফটক ষাট ফুট উঁচু এবং তিয়াত্তর ফুট চওড়া। সব ক’টা ইটই টেরাকোটার। এক ইঞ্চি চওড়া।
দাখিল দরওয়াজার আর একটি নাম আছে – সেলামি দরওয়াজা। ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা গিয়েছে। বেশ চওড়া। সম্ভবত ৩৫ ফুট। এতটাই চওড়া যে কেউ হাতির পিঠে চেপে ভেতরে আসতে পারত। দু’ পাশ থেকে কামান দাগা হত যখন সুলতান বা হোমরাচোমরা কেউ আসতেন। তোপধ্বনি করে সম্মান প্রদর্শন করা হত বা সেলাম জানানো হত। তাই সেলামি দরওয়াজা।
ভেতরে ডান আর বাঁ দিকে দু’টো ঘোর অন্ধকার করিডোর। এটা হয়তো প্রহরীদের জন্য ছিল। আর সেখানে আছে অনেক অনেক চামচিকে। আমাদের ঢুকতে দেখে তারা ভীষণ কিচিমিচি শুরু করল। বিরক্তও করল।
পাশেই একটু উঁচু টিলা। ওঠা বেশ চাপের। তবে উঠতে পারলে ওপর থেকে সৌধের ছাদটা দেখা যায়। এখানেও ঘাস সুন্দর করে ছাঁটা। বেশ সাজানোগোছানো।
এখান থেকে বাইরে এসে একটা বড়ো পুকুর, তার পাশেই বেশ বড়ো একটা আমবাগান। আমবাগানে পিকনিক হয়, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মাটি আর দেখা যাচ্ছে না। সাদা থার্মোকলের আস্তরণ। দেখলাম থার্মোকলের গেলাস, থালা আর বাটি। মাটি নেই। দেখলেই রাগ হয়। কিন্তু যুগটাই মেনে নেওয়ার। তাই এটাও মেনেই নাও।
এর পর সোজা রাস্তায় চললাম ফিরোজ মিনার। বাঁ দিকে পুকুর, ডান দিকে ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো মালদহের মনুমেন্ট ফিরোজ মিনার। গিয়ে দেখলাম গেট বন্ধ। ওখান দিয়েই সিঁড়ি। ৭৩টি সিঁড়ি আছে। ঘুরে ঘুরে একেবারে ওপরে পৌঁছেছে। কিন্তু উপরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। পথ বন্ধ। অতএব বাইরে থেকেই দেখা। ইন্টারনেট অনুযায়ী ফিরোজ মিনার ৮৪ ফুট উঁচু।
এই মিনারের স্থপতি একজন ক্রীতদাস। নাম সইফুদ্দিন ফিরোজ। মিনারের বয়স সাতশো বছর।
বারবক শাহকে খুন করে গৌড়ের সুলতান হয়েছিলেন ফিরোজ। মিনারটা প্রথম দিকে এত উঁচু ছিল না। ফিরোজ তো সুলতান হয়েই তাঁর নামাঙ্কিত মিনার তৈরি করার অর্ডার দিয়েছেন। মিনার তৈরি হচ্ছে। এক দিন হঠাৎ ফিরোজ ঠিক করলেন মিনার কেমন তৈরি হচ্ছে দেখতে যাবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মিনার তৈরি দেখতে এলেন ফিরোজ। কথা বললেন মিস্ত্রির সঙ্গে। ফিরোজ জিজ্ঞাসা করলেন এই মিনার আরও উঁচু করা সম্ভব কিনা। মিস্ত্রি বলল, হাঁ অনেক উঁচু করা সম্ভব। শুনে ফিরোজ রেগে কাঁই। মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসা করলেন তা হলে কেনই বা আর উঁচু করা হয়নি? মিস্ত্রি বলল, উঁচু করতে গেলে যা মালপত্র লাগবে তার কিছুই ছিল না। ফিরোজ এ বার আরও রেগে গেলেন। মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা তাঁকে জানানো হয়নি কেন?
মিস্ত্রি এ বার আর কোনো উত্তর দেয় না। ফিরোজ রাগে ফুঁসছেন। হুকুম দিলেন, মিস্ত্রিকে মিনার থেকে নীচে ফেলে দিতে। সেইমতো উঁচু মিনার থেকে ফেলে দেওয়া হল মিস্ত্রিকে।
এ বার ফিরোজ গটমট করে নেমে এলেন মিনার থেকে। এসেই ডাকলেন তাঁর পরিচারককে। চাকরের নাম হিঙ্গু। হিঙ্গুকে আদেশ দিলেন তখনই মোরগ্রামে যেতে। হিঙ্গু পত্রপাঠ মোরগ্রাম চলে এল। কিন্তু সুলতানকে জিজ্ঞাসা করার সাহস হয়নি মোরগ্রামে তাঁর কী কাজ। এটাও হিঙ্গু জানে এখন ফেরত গেলে তাঁকেও হয়তো ওই মিনার থেকে ফেলে দেওয়া হবে। ওরে বাবা। তার থেকে গ্রামেই ঘুরে বেড়ানো ভালো, এই বলে গ্রামেই ঘুরঘুর করতে লাগল হিঙ্গু।
হিঙ্গুকে এক ব্রাহ্মণের ছেলে দেখতে পেল। দেখেই বুঝল কিছু একটা হয়েছে। তখন সে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে। হিঙ্গু সব বলার পর ছেলেটি তাকে বলল, তুমি এখান থেকে একজন ভালো মিস্ত্রি নিয়ে যাও, যে উঁচু মিনার বানাতে পারে। হিঙ্গু একজন মিস্ত্রিকে নিয়ে গেল ফিরোজের কাছে। ফিরোজ খুশি হলেন। হিঙ্গু অকপটে বললেন সেই ছেলেটির কথা, যে হিঙ্গুকে বুদ্ধি দিয়েছিল। ফিরোজ বুঝলেন ছেলেটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। এখনই তাঁকে রাজসভায় ডেকে এনে চাকরিতে বহাল করার আদেশ দিলেন তিনি।
ফিরোজের পরে সুলতান হন হুসেন শাহ। আর সেই ছেলেটি কিন্তু সত্যি তাঁর মন্ত্রী হন। সেই ছেলের নাম সনাতন। এ রকম একটা দুর্দান্ত গল্প শুনে আমরা এগোলাম বিশালদেহী এক পাঁচিলের সন্ধানে। এ বার সেই গল্প।
ফিরোজ মিনার থেকে রওনা দিয়েছি। গাড়িটা ডান দিকের একটা রাস্তা ছেড়ে সোজা বেরিয়ে যাচ্ছিল। আমরা হাঁ হাঁ করে উঠলাম। ওদিকটায় কী আছে? পাইলট বলল, একটা উঁচু পাঁচিল। কেউ দেখতে যায় না। কিন্তু আমরা যে যাব। অতএব ব্যাক গিয়ার।
ডান দিকে বেঁকে একটু গেলেই বিশাল উঁচু এক ভাঙা পাঁচিল। সেটা বিশাল চওড়াও বটে। তবে ভেঙে পড়ছে। পাঁচিলটা হয়তো আরও অনেকটাই ছিল। এখন তার একটা ছোট্টো অংশ দেখতে পাচ্ছি। পাশ দিয়ে শুঁড়িপথ। হয়তো লখনৌতি বা গৌড়ের দুর্গের পাঁচিল ছিল এটা। সুরক্ষার জন্যই তৈরি হয়েছিল। ভেতরে প্রবেশের জন্য সেলামি বা দাখিল দরওয়াজা। এই দেওয়াল বা পাঁচিলের নাম বাইশগজী দেওয়াল।
দেয়ালটা বাইশ গজ উঁচু। তাই ওই নাম। তিনকোনা দেওয়াল। অর্থাৎ নীচের দিকে বেশি চওড়া। উপরের দিকে কম চওড়া। সম্ভবত যাতে পাঁচিল বেয়ে ওঠা কঠিন হয় তাই এই রকম। নীচের দিকে পনেরো ফুট আর উপরের দিকে নয় ফুট চওড়া। কত যে ইঁট লেগেছে তার হিসাব নেই। পাশের শুঁড়িপথ পথ ধরে হাঁটা লাগলাম। দেখলাম বেশ কিছু জায়গা সরানো হয়েছে। কিছু জায়গা একেবারে ভগ্নপ্রায়। হেঁটে পাচিলের শেষ অংশে পৌঁছোলাম। সেই অংশটি একটু অন্য রকম দেখতে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই অংশ অনেক পরে তৈরি। (চলবে)
কী ভাবে যাবেন
ভারতের সব বড়ো শহরের সঙ্গেই মালদার ট্রেন যোগাযোগ আছে। কলকাতা থেকে মালদা যাওয়ার অজস্র ট্রেন। ছাড়ে হাওড়া, শিয়ালদহ আর কলকাতা স্টেশন থেকে। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in ।
সংক্ষিপ্ততম সড়কপথে কলকাতা থেকে মালদার দূরত্ব ৩৬০ কিমি। এই পথ বর্ধমান, ভাতার, খড়গ্রাম, রমাকান্তপুর, ফারাক্কা হয়ে। নিজেরা গাড়ি নিয়ে গেলে এই পথে যেতে পারেন।
কলকাতা থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে (পথ কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, ফারাক্কা হয়ে) নিয়মিত বাস চলে মালদার।
কোথায় থাকবেন
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের টুরিস্ট লজ রয়েছে মালদায়। অনলাইন বুকিং www.wbtdcl.com । এ ছাড়া মালদায় অনেক বেসররকারি হোটেল, রিসর্ট রয়েছে। গুগলে ‘accommodation in malda’ সার্চ করলে এদের সন্ধান পেয়ে যাবেন। পেয়ে যাবেন এদের সম্পর্কে রিভিউও।
ছবি: লেখক ও সংগৃহীত
কলকাতা
১০ নভেম্বর থেকে খুলছে কলকাতার চারটি দর্শনীয় স্থান
অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এবং অন্য়ান্য কোভিডবিধি মেনে চলার বিষয়গুলিতে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কলকাতা: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং ভারতীয় জাদুঘর-সহ কলকাতার চারটি আকর্ষণীয় স্থানের দরজা খুলে যাচ্ছে ১০ নভেম্বর থেকেই। করোনা মহামারির কারণে এই দর্শনীয় স্থানগুলিতে প্রায় আট মাস দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
বিনোদনের অন্য়ান্য ক্ষেত্রগুলির মতোই কোভিড-১৯ মহামারির জেরে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে বন্ধ ছিল মিউজিয়াম এবং অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রগুলি। লকডাউন না থাকলেও করোনা সংক্রমণের কথা বিবেচনা করেই এখনও সেগুলি বন্ধ। তবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফের সেগুলি খুলতে চলেছে।

রবিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর কাছে একটি সাক্ষাৎকারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের (Victoria Memorial) কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানান, সমস্ত রকমের কোভিডবিধি কঠোর ভাবে মেনেই ফের খুলবে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম এই স্থাপত্যের দরজা।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীরা সকাল ১১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। তবে এর জন্য অনলাইনে টিকিট কাটা যাবে। কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আবার স্মার্টফোনের অভাবে যাঁরা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন না, তাঁদের জন্য কাউন্টারেও টিকিট বিক্রি করা হবে।

কর্তৃপক্ষ জানান, একই সময়ে পাঁচশো জনের বেশি দর্শনার্থীকে সৌধ চত্ত্বরে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে, ভিতরে ঢুকে গ্যালারি ঘুরে দেখার জন্য এক সঙ্গে ২০০ জনকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে।
দর্শনার্থীদের জন্য স্যানিটাইজেশন, থার্মাল স্ক্রিনিং এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত নেওয়া হচ্ছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সিসিটিভির নজরদারি চলবে।
একই দিনে খুলছে সায়েন্স সিটি। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামেরর আওতাধীন এই দর্শনীয় স্থানটি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে সাধারণের জন্য। আগে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকত সায়েন্স সিটি (Science City)।

কোভিডবিধি মেনেই ওই একই দিনে খুলে যাচ্ছে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্য়ান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম (Birla Industrial and Technological Museum) এবং ভারতীয় জাদুঘর (Indian Museum)।

বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রতিটি জায়গাতেই অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এবং অন্য়ান্য কোভিডবিধি মেনে চলার বিষয়গুলিতে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়তে পারেন: ভুবনেশ্বরের জেলে মৃত্যু আইকোর কর্তা অনুকূল মাইতির
কাছেপিঠে
সুভাষের খোঁজে সুভাষগ্রাম ও অন্যত্র
সাবমেরিন। সংজ্ঞা-সহ সাবমেরিনের ব্যাখ্যা বুঝতে বুঝতেই টের পেয়েছিলাম দেশনায়কের কলজের জোর। কতই বা বয়স তখন, মেরে কেটে বারো-তেরো, ষষ্ঠ শ্রেণির হাফপ্যান্ট-পরা ছাত্র। ক্লাসে দুলালবাবু বলে চলেন, “সাবমেরিন একটি জলযান, জলে ডুবে ডুবে যায়, ওপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না।” সেই সাবমেরিন চেপে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশান্তরী হন সুভাষ, মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ কবল থেকে মুক্ত […]


সাবমেরিন। সংজ্ঞা-সহ সাবমেরিনের ব্যাখ্যা বুঝতে বুঝতেই টের পেয়েছিলাম দেশনায়কের কলজের জোর। কতই বা বয়স তখন, মেরে কেটে বারো-তেরো, ষষ্ঠ শ্রেণির হাফপ্যান্ট-পরা ছাত্র। ক্লাসে দুলালবাবু বলে চলেন, “সাবমেরিন একটি জলযান, জলে ডুবে ডুবে যায়, ওপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না।” সেই সাবমেরিন চেপে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশান্তরী হন সুভাষ, মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ কবল থেকে মুক্ত করতে। মিঠুন-অমিতাভকে সরিয়ে সেই দিনই আমার বল্গা মনের নায়ক হয়ে বসেন সুভাষচন্দ্র। তার পর একটা একটা করে নতুন শ্রেণিতে উর্ত্তীর্ণ হই, আর একটু একটু করে হৃদয়াকাশে উদ্ভাসিত হতে থাকেন সুভাষচন্দ্র বোস। তাঁর ব্যাপকতা এবং দেশপ্রেম ছাড়িয়ে যায় বাকিদের। এর মধ্যেই একদিন শুনলাম, একবার বেলডাঙা এসেছিলেন তিনি। ঘটনা জানামাত্রই গর্বিত হলাম অতীতের সেই আগমনকে স্মরণ করে। শহরের নেতাজি পার্ক ও নেতাজি তরুণতীর্থের যৌথ উদ্যোগে জানুয়ারি মাসের সপ্তাহব্যাপী নেতাজি স্মরণোৎসবের তাৎপর্য ধরা দিল নব রূপে।
আরও পড়ুন নেতাজির বসার চেয়ার সামনে রেখেই স্মৃতি আঁকড়ে রয়েছে ঝাড়গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার!
গোটা শীত জুড়েই বঙ্গের এ-দিক ও-দিক চরকিপাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছি গরমের গুঁতো থাকাকালীনই। তাই মিলনদা কোদালিয়া যাওয়ার কথা বললে রাজি হলাম তৎক্ষণাৎ। ২০১৭’র শেষ দিনে যখন সবাই নতুন বছরকে আবাহনের প্রস্তুতিতে মগ্ন, আমি ছুটলাম সুভাষচন্দ্রের পিতৃদেব জানকীনাথের পৈতৃকভিটে দর্শনে। প্রথমে যাব কোদালিয়া, তার পর এলগিন রোডে নেতাজিভবন। সেইমতো কাউকে কিছু না বলে একা একাই বেরোলাম অমৃতপুত্রের সন্ধানে। ভাগীরথী এক্সপ্রেস দেরি করায় সুভাষগ্রাম যাওয়ার ট্রেন পেতে দেরি হল, তবে মধ্যবর্তী সময়টুকুর সদ্ব্যবহার হল ‘জনআহার’-এর চিকেন বিরিয়ানিতে। ৭৮ টাকায় বছরের শেষ লাঞ্চ। সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই শিয়ালদহে যাতায়াত আমার। হাতে সময় বা ট্রেনের দেরি থাকলে স্টেশনের ধাপিতে বসে বসে নানা কিসিমের লোকজন ও তাদের কাণ্ডকারখানা নাগাড়ে খেয়াল করা আমার খুব প্রিয় টাইমপাস। একটা করে ট্রেন ঢোকে আর মিছিলের মতো লোক গলগল করে বেরিয়ে হারিয়ে যায় মহানগরীর পথে পথে। এবং আশ্চর্য, নিজেরটা ছাড়া বাকিরা কোথায় কী কাজে যায় তা আমি একেবারেই জানি না।
গড়িয়ায় বছর তিনেক ছিলাম আমি, তখন নিউ গড়িয়া স্টেশনটাই ছিল না, ছিল না মেট্রো রেলের বাহাদুরিও। বাঘাযতীন ছাড়ালেই তখনও তেপান্তরের মাঠঘাট চোখে পড়ত, অট্টালিকার বাড়বাড়ন্ত ছিল না। আর একটা ব্যাপারে অবাক হতাম, গড়িয়ার দুই দিকের সিগন্যালই সর্বদা হলুদ হয়েই থাকত, ট্রেন এসেই যেত, এসেই যেত। এখনও আমার বিশ্বাস, সোনারপুর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন ধরতে কেউই সময় দেখে না, জানে স্টেশনে গেলেই কোনো না কোনো লোকাল পেয়ে যাব ঠিক। ডায়মন্ড হারবার লোকাল গড়িয়া ঢুকতেই এ-দিক সে-দিক উঁকিঝুকি মারলাম, কিছুই ঠাহর হল না। মিলনদা বলে দিয়েছিল, সোনারপুরের পরই সুভাষগ্রাম। সেইমতো গুতোঁগুঁতি বাঁচিয়ে নিলাম নামার প্রস্তুতি। এত ভিড়ের মধ্যেও পল্টু ব্যাটার অস্থিরতা টের পাচ্ছি, সে বুঝি সেই সন্ধিক্ষণের নাগাল পেয়ে গিয়েছে, যার কারণে এখানে আসা। রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার অন্তর্গত সুভাষগ্রাম। রিকশায় উঠে দেখি, চালক পা তুলে হ্যান্ডেল পাকড়ে বসে রয়েছে আর রিকশা চলছে আপন গতিতে। সাধারণ রিকশার এই অসাধারণ আচরণ এর আগে দেখি নাই কখনও। হাঁটতেই চাইছিলাম, কিন্তু এক কাকাবাবুর খপ্পরে পড়েই এই রিকশাবিলাস, উনি লম্বা করে জানালেন চল্লিশ মিনিট হাঁটলে তবেই বোসবাড়ি, অগত্যা!
আরও পড়ুন মতাদর্শের বিভেদ ভুলে নেতাজি-শ্রদ্ধায় ঐক্যবদ্ধ মোদী-মমতা-রাহুল
নেতাজি সুভাষের সম্মানেই যে চাংড়িপোতা হয়েছে সুভাষগ্রাম, সে কথা না জানালেও চলে। রিকশা চড়ে রবিবারের সুভাষগ্রামের মহল্লা নজরে রাখতে রাখতেই এগিয়ে চলি হরনাথ বসুর বাড়ির দিকে, যাঁর নাতিকে আজও খুঁজে ফেরে বাঙালি, বিশ্বাস করে দেশের এই দুর্দশায় তিনি নিশ্চিত ভাবেই ফিরে আসবেন, মৃ্ত্যু-বিজ্ঞান হেরে যায় বাঙালি আবেগের কাছে, বারবার। তরুণ সংঘের মাঠ পার করে বাবুদাকে পাওয়া গেল। সৌম্যদর্শন ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলেন সেই ভিটেটিকে যার মাটি সৃষ্টি করেছিল এক আপসহীন অগ্নিপুত্রের যিনি অত্যাচারীর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানতেন। হলুদ রঙা দোতলা বাড়ি, বড়ো বারান্দা, বেশ কিছু ছাদের অংশ ভেঙে পড়েছে, ঘরগুলি তালাবন্ধ। খোলা জানলার ফাঁক দিয়ে কিছু আসবাবপত্রও চোখে পড়ে। বাড়ির সামনেও অনেকটা ফাঁকা জায়গা। ক্ষয়ে যাওয়া ইটগুলিকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, কেমন ছিল বোসেদের ঘরকন্না? দাদুর বাড়ির ঘরময়, বারান্দা জুড়ে, বাগানে, হামাগুড়ি, দৌড়োদৌড়ি করেছে কি ছোট্ট সুভাষ? কটকে পড়াশোনার ফাঁকে, ছুটিছাটাতে বা বার্ষিক পরীক্ষার শেষে কখনও কি এসেছে দাদু-ঠাকুমার কাছে? কেমনধারা ছিল তার আবদার? কী ভাবে সে পেল এত সাহস? এত শৌর্য? এত তাপ? নিরুত্তর চুনসুরকি ধুলো হয়ে ঝরে পড়ে অবিরত, আমি বসে পড়ি বারান্দায়, ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করি সেই কালকে যা এখন মহাকালের কবলে।
শঙ্কর ঘোষ এ বাড়ির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক। বংশপরম্পরায় তাঁরা এই কাজ করে আসছেন। তিনিই জানালেন, রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে, সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজও শুরু হবে শীঘ্র। এ তথ্যে নিশ্চিন্ত হয়ে বেরিয়ে এলাম। (এই দু’ বছরে সেই ভবনের সংস্কার হয়েছে।) বাবুদা তখনও ওখানে বসেছিলেন, বললেন এত দূর থেকে এসেছেন বোসেদের পারিবারিক নারায়ণ মন্দির দেখে যান। তাঁর কথামতো ঠাকুরদালান দেখে নিলাম, দুর্গাপুজোও হয় সেখানে, বোস পরিবারের বর্তমান সন্তানসন্ততিরা নাকি এখনও একত্রিত হন পুজোর ক’টা দিন। নির্জন দালানচত্বরটি আমার বেশ লাগল, অনেকক্ষণ বসে রইলাম চুপচাপ, একা একাই। কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম হরনাথ বোস, জানকীনাথ বোস ও তাঁদের পরিবারবর্গের পুজোকালীন হইচই, হাঁকডাক, কলরব যা কালের অভিঘাতে হয়েছে নিরুদ্দেশ। মন্দিরের গেটটিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে হরনাথ লজ, পাশেই কোদালিয়া হরনাথ বীনাপাণি লাইব্রেরি, অগ্রদূত এবং কোদালিয়া ডাকঘর যার সামনে প্রশস্ত খেলার মাঠ। সম্পন্ন গৃহস্থ হরনাথ বোসই ছিলেন এ সবের মালিক। পাড়াটিও বেশ, ছিমছাম, কোলাহলমুক্ত, শরৎচন্দ্রের পল্লিসমাজের কথা মনে পড়ায়।
কবি সুভাষ থেকে নেতাজি ভবন মেট্রো স্টেশন। পুরো পথটিতেই কোদালিয়া আচ্ছন্ন করে রাখল আমায়। তবে শুধু নেতাজির দাদুর বাড়ি নয়, আরও এক বিখ্যাত বাঙালি সলিল চৌধুরীর মাতুতালয়ও নাকি কোদালিয়া। এ দিকে ট্রেনে উঠেই এক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি, যাব ‘নেতাজি ভবন’, টিকিট করেছি ‘নেতাজি’-এর। এই লাইনে প্রথম যাত্রা আমার, তাই ‘নেতাজি’ আর ‘নেতাজি ভবন’ গিয়েছে গুলিয়ে। ভাড়ায় পুরো পাঁচ টাকার ব্যবধান, বৈদ্যুতিক দরজা খুললে হয়! যা ভেবেছি তা-ই, যেখানে ভূতের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়, দরজার কাছে নীল পোশাকের নিরাপত্তারক্ষী আর প্লাস্টিকের গোল চাকতিটিকে অবলীলায় অস্বীকার করল মেশিন বাবাজি, পর পর দু’ বার, চিচিং ফাঁকও হল না। ভয়ানক অপ্রস্তুত পরিস্থিতি, এমন সময় দেখা দিলেন স্বয়ং নারায়ণ, আমার পিছনের ভদ্রলোকটি চাকতিটি কুড়িয়ে মেশিনের ওপর রাখলেন, হাতে থাকা স্মার্ট কার্ডটি চেপে ধরতেই পাঁচ টাকার সীমান্ত খুলে গেল, উনি শুধু বললেন, চলুন চলুন। আপনাদের অনেক আগেই জানিয়েছি ভগবান আমার বখাটেপনা ভালোওবাসেন, প্রশ্রয়ও দেন, আজ আবার প্রমাণ হল।
নতুন নাম লালা লাজপৎ রায় সরণি হলেও আমার ভোট এলগিন রোডের তরে, কেননা এলগিন রোড উচ্চারিত হলেই সাথে সাথে সেই ইতিহাসও মনে এসে ভিড় করে যা নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ নেই। নেতাজিভবনের বিশালতা ও শৈলীতে গা ছম ছম শুরু হবে প্রবেশমাত্রই। প্রথমেই চোখ পড়বে সেই গাড়িটির দিকে যা দেশের স্বাধীনতায় দিকনির্ণয়ী ভূমিকা নিয়েছিল। ভাইপো শিশিরচন্দ্র বসু এই অডি করে কাকা সুভাষ বোসকে পৌঁছে দিয়েছিলেন গোমো। যা ইতিহাসের পাশাপাশি বাঙালিজীবনেও মহানিস্ক্রমণ বলে খ্যাত। এ ইতিহাস যদি আপনার জানা থাকে, তা হলে গাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ান, ষ্টিয়ারিং হাতে শিশিরচন্দ্র আর পেছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে রয়েছেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ – শুধু এই দৃশ্যটুকু কল্পনা করতে পারলেই মেরুদণ্ডের বৈদ্যুতিক শিরশরানি টের পাবেন নিশ্চিত। এ এমন একটা ঘটনা যা ছাপোষা, সাধারণ, ভীরু বাঙালিকেও আস্পর্ধার পাঠ দেয়, তাকেও বিশ্বাস করতে শেখায় হ্যাঁ বাঙালিও পারে।

এই গাড়িতে চাপিয়ে নেতাজিকে গোমো পৌঁছে দিয়েছিলেন ভাইপো শিশির।
নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর যত্নে জানকীনাথ, শরৎচন্দ্র ও সুভাষচন্দ্রের ব্যবহৃত ঘর, বিছানা-সহ আসবাবপত্র দেখানোর আন্তরিক ব্যবস্থাপনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এমন কিছু অনন্য অনুভূতি আপনার মনের দখল নেবে যার নাগাল কখনোই কোথাও বেড়াতে বেরিয়েই আপনি পাননি। মার্বেলপাথরে নির্মিত একজোড়া থালা ও বাটি যা দিয়ে এ বাড়িতে সুভাষের শেষ ডিনার সম্পন্ন হয়েছিল তা দেখে আপনার চোখ ভিজে যাওয়া স্বাভাবিক, যদি আপনি ভাবতে পারেন, এই থালায় খেয়েই ঘরের ছেলেটি দেশান্তরী হয়েছিল। জান্তে অজান্তে সুভাষকে তো আমরা ঘরের ছেলে বলেই মনে করি, তাই না? তাঁর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সংরক্ষিত পদচিহ্নে পা দেবেন না যেন, পারলে ওই মহামানবের পদচিহ্নেই প্রণাম করুন, পুণ্যি হবে। কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন যে ঘরে বসে কাজকর্ম এবং আগত লোকজনের সঙ্গে উনি দেখা করতেন, তার দেওয়াল ছিল ত্রিবর্ণরঞ্জিত, আজও সে ভাবে রাখা রয়েছে। তিন তলায় সাজিয়ে রাখা তাঁর নিজ হস্তে লেখা চিঠিপত্র, বা জামাকাপড়ের সামনে দাঁড়ালেই আপনার লোম খাড়া হয়ে যাবে অজ্ঞাত মগ্নতায়।
একটা মানুষের কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি কতখানি হলে তাঁকে ‘নেতাজি’ বলে মেনে নেন স্বয়ং রবিঠাকুর, একটিবার ভেবে দেখুন। কতটা আবেদন থাকলে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্রনায়েকরা ছুটে আসেন তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আজও, এখনও, সেটাও ভাবার বিষয়। আজ যখন সর্বত্রই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা তখন তাঁর উদাত্ত আহ্বান, তাঁর বলিষ্ঠ প্রত্যয় ভীষণই জরুরি ছিল। নেতাজিভবনের আনাচেকানাচে ইতস্তত পদচারণা করলে শ্রদ্ধায় আপন হতেই মাথা নত হয়ে আসে। মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসি বাড়ি থেকে, রাস্তা হতে লাগাতার ছবি তুলতে থাকি, তবুও যেন আশ মেটে না। মহানিষ্ক্রমণের ৭৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে গত ২০১৬ সালে, তবুও যেন সব জীবন্ত। সব দেখেও মনের খিদে মেটে না, কিন্তু যেতে তো হবে। মেট্রো ধরে মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশন, ওপরে উঠলেই মহাজাতি সদন। যার নামফলকে লেখা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিকল্পিত মহাজাতি সদনের শিলান্যাস করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরবর্তীতে যার দ্বরোদঘটন হয় ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাত থরে। এটাও শেষ নয়, শিয়ালদহ যাব বলে মহাত্মা গান্ধী রোড-চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখি আরও একটা স্মৃতিফলক। সেখানেও জ্বলজ্বল করছে সুভাষচন্দ্রের নাম । সে ফলক জানান দিচ্ছে, Through this historical place Netaji Subhas Chandra Bose continued his ambitious and never ending journey to free our motherland-INDIA । সত্তর বছরেরও বেশি হয়ে গেল মাতৃভূমি স্বাধীন হয়েছে, নেতাজির পথচলা শেষ হয়নি, সুভাষ ঘরে ফেরে নাই, আজও।
ছবি: পিন্টু মণ্ডল ও লেখক
কাছেপিঠে
ভারতভূমের সাহেবপাড়া ম্যাকলুস্কিগঞ্জ
ইংরেজ সরকারের হাতে ভারত তখন বন্দি৷ শুধু শাসন করাই নয়, এই দেশের সম্পত্তি বিদেশে রফতানি করে কী ভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে হয় তা ব্রিটিশকর্তারা তখন ভালোই জেনে গিয়েছেন৷ ব্রিটিশ সরকার খোঁজ পেল ছোটোনাগপুর অঞ্চলের খনিজ সম্পদ আর দামোদরের উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা কয়লা-সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যের ভাণ্ডার৷ সেই সম্পদ বিদেশের মাটিতে পৌঁছে দিতে পারলেই পকেট আরও ফুলেফেঁপে […]

ঋত্বিক দাস
ইংরেজ সরকারের হাতে ভারত তখন বন্দি৷ শুধু শাসন করাই নয়, এই দেশের সম্পত্তি বিদেশে রফতানি করে কী ভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে হয় তা ব্রিটিশকর্তারা তখন ভালোই জেনে গিয়েছেন৷ ব্রিটিশ সরকার খোঁজ পেল ছোটোনাগপুর অঞ্চলের খনিজ সম্পদ আর দামোদরের উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা কয়লা-সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যের ভাণ্ডার৷ সেই সম্পদ বিদেশের মাটিতে পৌঁছে দিতে পারলেই পকেট আরও ফুলেফেঁপে উঠবে৷
কিন্তু বাধ সাধল ছোটোনাগপুরের গভীর জঙ্গল৷ এত সম্পদ এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পরিবহণ করে কলকাতা বন্দরে আনা কী ভাবে সম্ভব? পরিকল্পনা হল, জঙ্গল কেটে রেলপথ তৈরি করার৷ কলকাতা-দিল্লি রেলপথের গোমো স্টেশন৷ সেখান থেকে ডালটনগঞ্জ দিয়ে লাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হল৷ রেললাইনের স্লিপার করতে বহু গাছ কাটা পড়ল৷ স্লিপার তৈরির বরাত দেওয়া হল কলকাতার কিছু ঠিকাদারকে৷
এক বার এমনই রেলের কাজের দায়িত্ব নিয়ে এলেন আর্নেস্ট টিমোথি ম্যাকলুস্কি নামে এক কলকাতাবাসী এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী৷ ম্যাকলুস্কি সাহেবের জায়গাটা বেশ ভালো লেগে গেল৷ তখন ওই অঞ্চলে লাপড়া, কঙ্কা ও হেসাল, এই তিনটি জঙ্গলময় বসতি ছিল৷ পরিবেশটা পুরো বিলেতের মতো৷ সারা বছরই ঠান্ডা আবহাওয়া৷ পাহাড়ে ঘেরা, অরণ্যে মোড়া এক মনোরম জায়গা, গোটা পরিবেশটাই যেন বিলেতের একটা ছোটো সংস্করণ৷
ম্যাকলুস্কি সাহেব জায়গাটির প্রেমে পড়ে গেলেন এবং এখানেই স্থায়ী ভাবে বসতি গড়লেন৷ পাশাপাশি বন্ধু আত্মীয়পরিজনকে এখানে এসে থাকার আহ্বান জানালেন৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কিছু পরিবার এখানে এসে বসতি স্থাপন করলেন৷
আরও পড়ুন ‘লাল কাঁকড়ার দেশ’- তাজপুর
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইংল্যান্ডকে কোণঠাসা করে ফেলল। ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ক্রমশ ভেঙে পড়তে লাগল। তার প্রভাব এসে পড়ল এ দেশে অ্যাংলো সাহেবদের ওপর৷ ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো এ দেশে একের পর এক অ্যাংলো সাহেবকে কর্মচ্যুত করতে লাগল তুচ্ছ অজুহাতে৷ এই সময় বহু অ্যাংলো কাজ হারালেন৷ তাঁরা ঠিক করলেন এই ঘটনা তাঁরা ব্রিটেনে গিয়ে মহারানিকে সরাসরি জানাবেন৷ এতে ঘোরতর বিপদ বুঝে ব্রিটিশ সরকার অ্যাংলোদের ব্রিটেনে যাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করল৷
এমনিতেই অ্যাংলোদের কোনো স্থায়ী জায়গা ছিল না ভারতে, তার ওপর কর্মচ্যুত হওয়ার পর তাদের প্রতিবাদ ভাবিত করে তুলল ব্রিটিশ সরকারকে৷ সরকার প্রমাদ গনল। অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি হল৷ ডেকে পাঠানো হল ম্যাকলুস্কি সাহেবকে৷ তিনি এসে এই জায়গার (আজকের ম্যাকলুস্কিগঞ্জ) কথা সবাইকে বলেন৷ তিনি অ্যাংলোদের বোঝালেন, “চলো, কাছেই আমাদের বিলেতের মতো একটি গ্রাম আছে। সেখানে আমরা সবাই মিলে বসতি স্থাপন করে তাকে ইংল্যান্ডের রূপের পরিপূর্ণতা দিই।”
১৯৩৩-এ তৈরি হল কলোনাইজেশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া। ঠিক হল, এই সমবায়ে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা শেয়ার কিনলে তাদের এক টুকরো করে জমি দেওয়া হবে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় দু’ লক্ষ অ্যাংলো ইন্ডিয়ানকে এই অঞ্চলে বসতি গড়ার জন্য আহ্বান জানালেন ম্যাকলুস্কি।
আরও পড়ুন কুমারী সৈকত চাঁদপুরে একটা দিন
ম্যাকলুস্কি সাহেবের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় ৪০০ অ্যাংলো পরিবার এই স্থানে পাকাপাকি ভাবে বসতি স্থাপন করে৷ ১৯৩৪ সাল নাগাদ রাতু মহারাজের কাছ থেকে লাপড়া, কঙ্কা ও হেসাল, এই তিনটি অঞ্চল দান হিসেবে চেয়ে নিলেন ম্যাকলুস্কি সাহেব৷ রাতু মহারাজ সেই আবদারে রাজি হয়ে অঞ্চল তিনটি ম্যাকলুস্কি সাহেবকে দান করলেন৷ ম্যাকলুস্কি সাহেবের নামে নাম হল ম্যাকলুস্কিগঞ্জ৷ অনেক অ্যাংলো স্কুল এখানে গড়ে উঠল৷ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অ্যাংলো ছেলেমেয়েরা এই সব স্কুলে পড়তে এল৷ তাদের থাকার জন্য অনেক হোস্টেল তৈরি হল৷ ব্রিটিশরা ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে ঝাড়খণ্ডের স্কটল্যান্ড বলেও ডাকত৷ আজও অনেকে এই স্থানটিকে ‘স্কটল্যান্ড অব ঝাড়খণ্ড’ বলে ডেকে থাকেন৷
তবে অ্যাংলোদের বসতি স্থাপন সুখের হয়নি৷ তাদের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের দিকে এগোতে থাকে৷ আদিবাসীরা নিজেদের পুরোনো জায়গায় কেমন যেন পর হয়ে গেল৷ অ্যাংলোদের কাছে তারা চাকরের মতো হয়ে গেল৷ গাছের ফলে হাত দিলে জুটত অপমান, এমনকি কখনও মারও৷ একই জায়গায় থেকেও নিজেদের মধ্যে মেলামেশা করতে পারত না আদিবাসীরা৷ সব সময় সাহেবরা বন্দুক নিয়ে ঘুরত আর তাদের ওপর নজর রাখত৷ এমন অবস্থায় আদিবাসীরা ক্রমশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে৷ যার ফলস্বরূপ স্বাধীনতা লাভের পর বহু অ্যাংলো পরিবারকে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ ছাড়তে হল।
আরও পড়ুন জঙ্গল, পাহাড় ও কাঞ্চনময় তিনচুলে
এর পরও বেশ কিছু অ্যাংলো পরিবার এখানে থেকে গেল নিজেদের জমি আঁকড়ে। পরবর্তীকালে তাদের উত্তরসূরিরাও একে একে পাড়ি জমাল বিদেশে রোজগারের সূত্রে৷ ক্রমশ সাহেবদের বাড়িগুলো পরিত্যক্ত হতে শুরু করল৷ সেগুলো পরে স্থানীয় ক্ষমতাশালী মানুষজন ও ব্যবসায়ীরা নেন৷ কিছু অ্যাংলো পরিবার অবশ্য এই অঞ্চলেই নিজেদের বাড়িতে থেকে গেল৷
সত্যি কথা বলতে কি বাঙালির কাছে ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে পরিচিত করেছেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ৷ যথারীতি আমারও এই জায়গাটার প্রতি আকর্ষণ ছিল। আমার সেই আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিল আমার এক ছোটো ভাই সৌম্যদীপ মণ্ডল। শেষ পর্যন্ত নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখে উঠে পড়লাম ট্রেনে৷
আরও পড়ুন চলুন সপ্তাহান্তে, ভূতাবুড়ি ও ঘাঘরবুড়ি দর্শনে
প্রথম বার গিয়েই প্রেমে পড়ে গেলাম ম্যাকলুস্কিগঞ্জের৷ তবে এখানে ‘এলাম দেখলাম আর জয় করলাম’, এমন মনোভাব নিয়ে এলে নিরাশই হতে হবে৷ এখানে দু’টো দিন হাতে নিয়ে আসতে হবে৷ আর প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ইচ্ছা থাকলেই এখানে আসা সার্থক৷ এখানে সে ভাবে কোনো ট্যুরিস্ট স্পট নেই৷ শুধু ভোরের সুর্য ওঠা থেকে শুরু করে বিকেলের সুর্যাস্ত পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে কিংবা মেঠো রাস্তা দিয়ে প্রকৃতিকে আপন করে ঘুরে বেড়ানো৷
আসলে সত্যিকারের প্রকৃতিপ্রেমিকদের কাছে আদর্শ জায়গা এই ম্যাকলুস্কিগঞ্জ। লাল কাঁকুড়ে পথঘাট, আশেপাশে সাহেবদের কটেজ৷ দূরে অরণ্য ও পাহাড়ের হাতছানি৷ পূর্ণিমার রাতে মায়াবী রূপ ধরে প্রকৃতি৷ বসন্তে পলাশ, শিমুলের সঙ্গে জাকারান্ডায় ছেয়ে যায় চারি দিক৷ সেই রূপ আরও মোহময়ী৷ এক অপার্থিব নিস্তব্ধতায় হিমেল হাওয়ার স্পর্শ৷ দিনের বেলায় শুধুই পাখির কুজন।
ম্যাকলুস্কিগঞ্জের আশেপাশে কিছু জায়গা আছে যেগুলোকে যুক্ত করে একটা সুন্দর ট্রিপ হতে পারে৷ এই প্রসঙ্গে প্রথমেই আসি ওয়াচটাওয়ারের কথায়৷ স্টেশন থেকে প্রায় আড়াই কিমি দূরে ছোটো একটি টিলার টঙে এই ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে গোটা অঞ্চলটিকে ছবির মতো দেখায়৷ ১৮০ ডিগ্রি বৃত্তাকারে পাহাড়শ্রেণি ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে ঘিরে রেখেছে৷
চলুন, এ বার যাওয়া যাক ডুলি উপসনাস্থলে৷ স্টেশন থেকে প্রায় ন’ কিমি। হিন্দু, ইসলাম, শিখ আর খ্রিস্টান, এই চার ধর্মের এক সঙ্গে পাশাপাশি উপাসনার বেদি৷ জায়গাটি সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা বহন করে৷
ডুলির পাশেই একটি ছোটো দিঘি, নাম তার সীতাকুণ্ড৷ স্থানীয়রা এই কুণ্ডকে খুব মান্যি করে৷ রাস্তার দু’ধারে ডুলি ফরেস্ট। মাঝেমধ্যে হাতি অভিসারে আসে এই অরণ্যে৷
এখান থেকে সামান্য দুরে জাগৃতিবিহার৷ আদিবাসীদের হস্তশিল্পের সমবায়৷
জাগৃতি বিহার থেকে কিছুটা দূরে চাট্টিনদীর পাড়৷ জায়গাটির নাম ডুগাডগি বা ডিগাডগি৷ চাট্টি ম্যাকলুস্কিগঞ্জের নিজস্ব নদী৷ দামোদর থেকে এর উৎপত্তি৷ টিলাময় এই জায়গা৷ জায়গাটায় দু’ দণ্ড বসে চার পাশের দৃশ্য বেশ সুখকর লাগে৷
রেলগেটের বাঁহাতি পথে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে দামোদর নদীর ব্রিজ৷ ব্রিজের ওপর থেকে দামোদর নদী আর চাট্টি নদীর মিলনস্থল দেখা যায়৷ এখান থেকে সূর্যাস্ত বা সুর্যোদয়ের দৃশ্যও মনোরম৷ এখান থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরে একটি পাহাড়ের ঝোরা থেকে দামোদরের উৎপত্তি৷
আর একটি জায়গা হল ম্যাকলুস্কি সাহেবের কবরখানা৷
এ ছাড়া চলতে ফিরতে অসংখ্য হোস্টেল রয়েছে জায়গাটিকে ঘিরে৷ এক সঙ্গে এত হোস্টেল খুব কম জায়গায়ই দেখা যায়।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়ে পড়ুন। ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে রফা করে গাড়ি বা অটো নিয়ে ঘুরে আসুন। সন্ধে নামার আগেই হোটেলে ফিরে আসা যায়৷ তবে সব সময় সন্ধের অন্ধকার নামার আগে গেস্টহাউসে ফিরে আসা ভালো৷
এ ছাড়াও ম্যাকলুস্কিগঞ্জকে কেন্দ্র করে ঘুরে আসতে পারেন ৫০ কিমি দুরের লাতেহারের জঙ্গল থেকে৷
পাহাড়, জঙ্গল, স্থাপত্য, নদী সব মিলিয়ে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ এক স্বয়ংসম্পূর্ণ জায়গা৷ সপ্তাহান্তে দু’-তিন দিন হাতে নিয়ে এখানে ঘুরে আসতে পারলে সেটা জীবনের একটা স্মৃতি হয়েই থাকবে৷
যাওয়া
হাওড়া থেকে রাঁচিগামী ট্রেনে রাঁচি পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দুরে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ৷ এ ছাড়া হাওড়া থেকে সরাসরি শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ম্যাকলুস্কিগঞ্জ পৌঁছে দেয় রাত পৌনে ১১টায়৷ হোটেল/গেস্টহাউসে বলে রাখলে তারা স্টেশনে গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে৷ তবে হাওড়া থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে রাঁচি পৌঁছে সেখান থেকে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ যাওয়াই ভালো।
থাকা
ম্যাকলুস্কিগঞ্জ গিয়ে দিন দুয়েক থাকতেই হবে৷ থাকার জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত হল গর্ডন গেস্টহাউস৷ ফোন নম্বর: ০৯৮৩৫৭৭০৬৭৯/৯৪৭০৯৩০২৩০৷ এ ছাড়া আছে মাউন্টেন হলিডে রিসর্ট৷ ফোন নম্বর: ২৭৬৩৫৭/৭৭৩৯০৮৯০৫২
খাওয়া
যে গেস্টহাউসে থাকবেন সেই গেস্টহাউসে বলে রাখলে তারা দুপুর বা রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়৷ এ ছাড়া বাইরে অনেক খাবারের হোটেল আছে৷ তাদের বলে রাখলে আপনার পছন্দসই খাবারের ব্যবস্থা করে, এমনকি গেস্টহাউসে পৌঁছেও দেয়৷ স্টেশনের সামনে সুরেশের শিঙাড়ার স্বাদ নিন৷ আর স্টেশনের বাইরেই এক জন চাউমিন বানান, স্বাদ খুব ভালো৷ এ ছাড়া ম্যাকলুস্কিগঞ্জের তেলেভাজা, কচুরি, জিলিপি ও চাল দিয়ে তৈরি ধোস্কার স্বাদ নিতে ভুলবেন না৷
ঘোরাফেরা
স্টেশন থেকেই অটো পেয়ে যাবেন৷ গেস্টহাউস থেকেও অটো বা গাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়৷ অটোর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন সুখেন্দ্র মুন্ডার সঙ্গে, ফোন নম্বর: ৮৫২১৪৫৩৫৪০৷
ছবি লেখক
-
হাওড়া3 days ago
বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল
-
বিনোদন3 days ago
বাজেটের আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের, সঙ্গে সানি দেওল
-
প্রবন্ধ2 days ago
‘কয়েকটা টাকার বিনিময়ে নেতাজির স্মৃতি ধুলোয় মিশিয়ে দেব?’, বলেছিলেন পদমবাহাদুর
-
বাংলাদেশ3 days ago
টাঙ্গাইলে জেলাশাসকের মানবিক উদ্যোগ, শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ