সানি চক্রবর্তী :
দশজনে প্রায় ঘণ্টাখানেক লড়াই করে ম্যাচ ড্র রেখে ফাইনালে পৌঁছে গেল মোলিনার দল। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কলকাতা রক্ষণকে ঝঞ্জাটে ফেললেও দেবজিতকে টপকাতে পারেনি মুম্বই সিটি এফসি। তবে ফোরলানের মতো গেমমেকারের অনুপস্থিতি তাদের খেলায় বারবার অনুভূত হয়েছে। মাঝমাঠে বলের জোগান দেওয়া থেকে গোলের সামনে ভয়ংকর হয়ে ওঠা, কোনো কাজটাই সনি-সুনীলদের করতে দেননি তিরি-প্রীতমরা। বরং শেষ দিকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ চলে এসেছিল কলকাতা শিবিরের সামনে। ম্যাচসেরা জাভি লারার মাপা সেন্টারে পা ছোঁয়ালেই যেখানে গোল হয়, সেখানে দৌড়ে পৌঁছতে ব্যর্থ হন বেলেনকোসো। এক বার পিয়ারসনের শট কয়েক ইঞ্চির জন্য ক্রসপিস উঁচিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে দিনের শেষে কাজের কাজটা করে ফেলল এটিকে শিবির। মুম্বইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে ০-০ ড্র রেখে দুই লেগে ৩-২ ব্যবধানে জিতে কোচির ফাইনালে খেলার টিকিট পাকা করে ফেলল মোলিনা ব্রিগেড।
এ দিন শুরুটা যদিও প্রত্যাশামতো হয়নি। মোলিনা সোমবার বলেছিলেন আক্রমণাত্মক খেলে জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপাবেন। আর করলেন সম্পূর্ণ উলটো। প্রথমে একাদশে গত ম্যাচের নয় জনকে পরিবর্তন করেছিলেন। তবে গত ম্যাচের মতোই এ দিনও দল দেখার পরেই অনেকে ব্যঙ্গের সুরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লিখেছিলেন, প্রদর্শনী ম্যাচেও কেউ নটা পরিবর্তন করে না। সত্যিই দলগঠন নিয়ে ফের একবার চমক দিলেও, খেলার শেষে বোঝা গেল দলকে দেওয়া এ দিনের তার বার্তাটা ছিল পরিষ্কার। গোল কোনোমতে হজম করা চলবে না, করতে পারলে ভালো না হলেও কুছ পরোয়া নেহি। আর আক্রমণে যাওয়ার যেটুকু সুযোগ ছিল তা শেষ হয়ে যায় প্রথমার্ধে রর্বাটের লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায়। প্রত্যাশামতোই দলের রক্ষণ দৃঢ় করতে কিগানকে লেফট ব্যাকে পরিবর্ত হিসেবে নামিয়ে ডিফেন্সিভ মোডে চলে যায় এটিকে শিবির।
ম্যাচের শেষ দিকে কুৎসিত হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’ দলের ফুটবলাররা। আসলে প্রথম থেকেই ইতিউতি ফাউলের জেরে স্বাভাবিক ছন্দে খেলা এগোয়নি। হলুদ কার্ডের বন্যার মাঝেই খেলা শেষ হতে হতাশায় হাত-পা ছুড়ে ক্যারাটের ঢংয়ে মারামারি করতে দেখা যায় মুম্বইয়ের এক ফুটবলারকে। গোটা ঘটনার মাঝখানে পড়ে গিয়ে ডান চোখে চোট পেয়েছেন প্রীতম কোটাল। তার চোট কতটা গুরুতর জানা যায়নি। তবে হারার পরে মুম্বইয়ের কোচ আলেকজান্দ্রে গুইমারায়েস স্বীকার করে নিয়েছেন তাদের থেক ভালো মানের দলের কাছেই হেরেছেন তাঁরা। তাঁর দলের প্রথম সেমিতে ওঠাকে বাহবা দিলেও ফোরলানের না থাকা নিয়ে আফসোসও করলেন। জুয়েলকে বাজে ভাবে ফাউল করাটাই কাল হলে মনে করেন তিনিও। গোটা টুর্নামেন্টে ভালো খেলে মাথা গরম করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লাল কার্ড দেখাটা তাঁদের দলের কম্বিনেশনের বিরুদ্ধে গিয়েছে, সেটা স্বীকার করে নিলেন গুইমারায়েস।
এ দিকে এ দিনের দলে না থাকলেও দল যে রকম কঠিন মানসিক কাঠিন্য দেখিয়ে মুম্বইয়ের বাধা টপকেছে, তাতে খুশি হিউম-দ্যুতিরা।
হিসেবনিকেশ এখনও পর্যন্ত প্রায় সবই মিলিয়ে দিয়েছেন মোলিনা। পরের লক্ষ্য কোচি। তিন বারের মধ্যে দু’বারই ফুটবলের মক্কায় ট্রফি আসবে, এই আশায় এখন থেকেই বুক বাঁধতে শুরু করে দিয়েছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। অপর সেমিতে এগিয়ে থাকা কেরল যদি ফাইনালে ওঠে, তা হলে তাদের ঘরের মাঠ থেকে ফের ট্রফিটা ছিনিয়ে আনা খুব একটা সহজ হবে না। এখন দেখার প্রথম আইএসএল ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হয়, নাকি ঘরের মাঠে কেরলকে টপকে এটিকের বিরুদ্ধে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয় দিল্লি।