খেলাধুলো
২০২০: ধোনির অবসর থেকে মারাদোনার মৃত্যু, খেলার জগতেও বছরটা বড়োই বেদনার
খেলার দুনিয়ায় কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে গেল।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: খেলার দুনিয়াতে ২০২০-এর মতো বছর আগে কবে এসেছে মনে করা যায় না। যে করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল, অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিল, সে খেলার দুনিয়াতেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলল।
করোনার কারণে একের পর এক টুর্নামেন্ট বাতিল হয়ে গেল। মহাগুরুত্বপূর্ণ কিছু টুর্নামেন্টে পিছিয়ে গেল। তার পর বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পর খেলা যখন ফিরল তখন মাঠে দর্শক ফিরলেন না। বিশ্ব এই প্রথম দেখল যে মাঠে দর্শকের অনুপস্থিতিতেও খেলা আয়োজন করা যায়।
করোনার প্রকোপের মধ্যেই ধীরে ধীরে ফাঁকা স্টেডিয়ামে নানা রকম খেলা দেখতে অভ্যস্ত হচ্ছিলেন বিশ্ববাসী। কিন্তু বছরের শেষ দিকে যা ঘটল, সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। পৃথিবীকে বিদায় জানালেন বিশ্বের সব থেকে বর্ণময় চরিত্র দিয়েগো মারাদোনা।
ফুটবল, ক্রিকেট-সহ বিভিন্ন খেলাধুলোয় একাধিক ঘটনা ঘটেছে ভারত-সহ গোটা বিশ্বে। এমনই কিছু ঘটনার কথা তুলে দেওয়া হল।
১) দিয়েগো মারাদোনার মৃত্যু
২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয় দিয়েগো মারাদোনা। নানা রকম অসুস্থতা ছিল তাঁর। কিন্তু ৬০ বছর বয়সেই তিনি বিদায় নেবেন, সেটা কেউই ভাবতে পারেননি। তাই বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় মারাদোনার মৃত্যু।

মারাদোনা সর্বকালের সেরা ফুটবলার ছিলেন কি না, তা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে তর্ক চলতেই থাকবে। কিন্তু মারাদোনা যে বিশ্ব ফুটবলের একজন বর্ণময় চরিত্র সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। তাঁর মতো চরিত্র বিশ্ব ফুটবল আর নাও দেখতে পারে।
২) মারা গেলেন পাওলো রোসি
দিয়েগো মারাদোনার মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন ইতালির কিংবদন্তি পাওলো রোসি (Paolo Rossi)। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ১৯৮২-এর বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। ১০ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

১৯৮২ সালে প্রায় একার হাতেই ইতালিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন রোসি। জুভেন্টাস এবং এসি মিলানের প্রাক্তন এই স্ট্রাইকার ছ’টা গোল করে ওই টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছিলেন। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ইতালির ৩-২ ব্যবধানে চিরস্মরণীয় জয়ে তিনটি গোলই করেছিলেন রোসি।
৩) ক্রীড়াজগতে করোনার হানা, দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা
মার্চের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে গোটা বিশ্বে। আর ঠিক তখনই রুদ্ধদ্বার, দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ সিডনিতে একটি একদিনের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা কী ভাবে হতে পারে, ওই ম্যাচেই প্রথম বার দেখা গেল।

মাঝে এপ্রিল-মে মাসে ইউরোপের একাধিক দেশ তাদের সব ধরনের টুর্নামেন্ট বন্ধ রেখেছিল। মে’র শেষে এবং জুনে যখন সেই টুর্নামেন্ট ফের শুরু হল তখন সেই ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা। ধীরে ধীরে টিভি দর্শকও ফাঁকা স্টেডিয়ামের ছবির সঙ্গে মানিয়ে উঠলেন।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ কয়েকটি দেশ বাদে এখনও ফাঁকা স্টেডিয়ামেই খেলা চলছে। তবে নতুন প্রযুক্তির আমদানি করেছে প্রায় সব দেশই। এতে ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, সব স্টেডিয়ামেই দর্শকদের চিৎকারের সাউন্ড বাজানো হচ্ছে। ফলে মাঠে দর্শক যে নেই সেটা বোঝাই যাচ্ছে না।
৪) পিছিয়ে গেল একাধিক ইভেন্ট
করোনার প্রকোপে ক্রীড়াজগতের ক্যালেন্ডার পুরো তছনছ হয়ে গেল। দুশোর ওপরে বড়ো বা মাঝারি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বাতিল বা স্থগিত হয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক খেলার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ এবং অলিম্পিক।

২০২০-এর বদলে ২০২১-এর আগস্টে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে টোকিওয়ে। একই সঙ্গে ২০২০-এর ইউরো কাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২১-এর জুনে।
৫) কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে গর্জে উঠল ক্রিকেট মাঠ
১১৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ জুলাই শুরু হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। আর সেই মাহেন্দ্রক্ষণে স্মরণ করা হল জর্জ ফ্লয়েডকে। হাঁটু গেড়ে বসে ‘ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার’কে মনে করালেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা।

গত ২৭ মে আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের নৃশংস হত্যার ঘটনাও ঘটে। তার পরেই ‘ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার’ প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। এই প্রতিবাদে শামিল হন এই দুই দলের ক্রিকেটাররাও।
৫) কোবি ব্রায়ান্ট প্রয়াত

গত ২৬ জানুয়ারি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি বাস্কেটবল তারকা কোবি ব্রায়ান্ট। দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর মেয়েও। ব্রায়ান্টের মৃত্যুতে বিশ্ব জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে, নেইমার থেকে বিরাট কোহলি, মেসি থেকে রোহিত শর্মা, সবাই ব্রায়ান্টের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠান।
৬) নতুন শব্দ ‘জৈব সুরক্ষা বলয়’
করোনার আবহে খেলার দুনিয়ায় একটা নতুন শব্দের আমদানি হয়েছে। সেটা হল ‘বায়ো সিকিয়োর বাবল’ তথা জৈব সুরক্ষা বলয়। জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ দিয়ে এই শব্দটি প্রথম এসেছিল বিশ্বে।
করোনাভাইরাস মূলত ছড়ায় ড্রপলেটস অর্থাৎ হাঁচি, কাশির মাধ্যমে যে থুতু বেরিয়ে আসে তার মাধ্যমে। মাঠে খেলার সময় একে অপরের থেকে দূরে সরিয়ে রাখা কঠিন। তাই এই জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করে করোনাভাইরাসকেই দূরে রাখার এক চেষ্টা করা হয়।

জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকার সময় খেলোয়াড়দের সংস্পর্শে আসতে পারেন শুধু মাত্র সাপোর্ট স্টাফ এবং ম্যাচ অফিসিয়ালরা। এমনকি মাঠকর্মী থেকে শুরু করে হোটেলকর্মী, বাসের চালক, কেউই বাইরের কোনো লোকের সংস্পর্শে আসতে পারেন না।
এই বলয়ের মধ্যে থাকার সময় নিয়মিত তাঁদের টেস্টও করানো হয়। খেলোয়াড়রা খাওয়ার সময়েও কারোও সঙ্গে দেখা করেন না। যে যার নিজেদের ঘরে বসেই খান। কোনো ঘরে নয়, টিম মিটিং করতে হয় খোলা জায়গায়। যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয় না খেলোয়াড়দের। এই বলয় মেনে চলা যে খেলোয়াড়দের মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করেছে, তা অনেকেই স্বীকার করেছেন।
৭) ‘অভিশপ্ত’ ২০২০-তেই শাপমুক্তি লিভারপুলের
একেই বোধহয় বলে ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ।’ করোনাভাইরাসের (Coronavirus) বাড়বাড়ন্তের জন্য গোটা বিশ্বের কাছে যখন ২০২০ সালটা ‘অভিশপ্ত’, সেই বছরেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতে তিরিশ বছরের খরা কাটাল লিভারপুল (Liverpool)।

শেষ বার ১৯৯০ সালে খেতাব জিতেছিল লিভারপুল। এ বার সাত ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল মহম্মদ সালাহদের (Mohammad Salah) দল।
৮) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ধোনির অবসর
ক্রীড়াজগত চমকে উঠেছিল স্বাধীনতা দিবসে মহেন্দ্র সিং ধোনির হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে। কাউকে কিছু অনুমান করতে না দিয়ে একেবারে স্বভাবসিদ্ধ তাক লাগিয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে ধোনি নিজের সিদ্ধান্তের কথা ইনস্টাগ্রামে দু’ লাইনের পোস্টে জানিয়ে দেন।

২০১৯ বিশ্বকাপের পর আর ক্রিকেট খেলেননি তিনি। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসর কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে এতটা তাড়াতাড়ি চলে আসবে, সেটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। ধোনির অবসরের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন সুরেশ রায়না।
৯) ‘আত্মনির্ভর’ থাকল না আইপিএল
করোনার আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার বার ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু দেশের প্রিমিয়াম টুর্নামেন্টটিই যে আত্মনির্ভর থাকতে পারল না। করোনার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সরে গেল ২০২০-এর আইপিএল। প্রায় দু’ মাস ধরে টুর্নামেন্ট হল দুবাই, আবু ধাবি আর শারজাহর ফাঁকা স্টেডিয়ামে।

টুর্নামেন্ট শুরুর এক্কেবারে প্রথম দিকে চেন্নাই সুপারকিংসের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। কিন্তু সেটা কাটিয়ে উঠে খুব সফল ভাবে টুর্নামেন্ট উতরে যায়। এতে বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যথেষ্ট কৃতিত্ব যে ছিল তা বলাই বাহুল্য। পঞ্চম বারের জন্য টুর্নামেন্টটি জিতে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
১০) মারা গেলেন ডিন জোন্স
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার ডিন জোনস। আইপিএল-এ ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য তিনি মুম্বইতে ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫২টা টেস্টে ৩৬৩১ রান করেন জোনস। ১১টা শতরান রয়েছে তাঁর টেস্ট কেরিয়ারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১৯৮৬ সালে চেন্নাইয়ের টাই হওয়া টেস্টে তাঁর দুর্ধর্ষ দ্বিশতরান। ১৬৪টা একদিনের ম্যাচে ৪৪.৬১ গড়ে ৬০৬৮ রান করেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন জোনস।
১১) ৩৬ অলআউটের লজ্জা এবং মধুর প্রতিশোধ
মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়ে বিদেশের মাঠে ঠিক তার পরের টেস্টটিই জিতে নেওয়ার মতো ঘটনা বিশ্ব ক্রিকেটে আর কেউ কি কখনও করেছে? মনে তো হয় না। সেটাই করে দেখাল ভারতীয় ক্রিকেট দল।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্টে ভারত যে এমন ভাবে গুটিয়ে যাবে সেটা ভাবা যায়নি। ১৯ ডিসেম্বরে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে মাত্র এক ঘণ্টায় চূড়ান্ত ভাবে নাকানিচোবানি খেল ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স এবং জশ হেজেলউডের তাণ্ডবে ভারত অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৩৬ রানে। টেস্টে এটাই ভারতের সর্বনিম্ন স্কোর।

ঠিক পরের টেস্টেই দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়াল ভারত। মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়ার সব থেকে পয়মন্ত মাঠ। সেই মাঠেই ঘরের দলকে হারিয়ে দিল বিরাট কোহলিহীন ভারত। দলকে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিলেন অজিঙ্ক রাহানে, ব্যাট হাতেও দুরন্ত পারফর্ম করেন তিনি। সিরিজ আপাতত ১-১ হয়ে আছে। চূড়ান্ত ফয়সালা হবে ২০২১-এ।
১২) আরও নক্ষত্রপতন
২০২০ খেলার দুনিয়ার আরও অনেককেই কেড়ে নিল। বাংলার দুই কিংবদন্তি চুনি গোস্বামী, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হন এই বছরেই। মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ ঘোষও প্রয়াত হন এই বছরেই। প্রয়াত হন ভারতের আরও এক অলিম্পিয়ান ফুটবলার নিখিল নন্দী
বিশ্ব ফুটবলের বরেণ্য কোচ আর্জেন্তিনার আলেখান্দ্রো সাবেয়া মারা যান ডিসেম্বরে। তাঁর কোচিংয়েই ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্তিনা।
দীর্ঘ অসুস্থতার পর মাত্র ৪২ বছর বয়সেই জীবনের লড়াইয়ে হার মানেন ২০০২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নবাগত সেনেগালের হয়ে একমাত্র গোলদাতা পাপা বৌবা দিওপ। কিংবদন্তি এই ফুটবলারের মৃত্যুতে সেনেগালে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ভারতীয় ক্রিকেট এই বছর হারিয়েছে চেতন চৌহানকে। গত ১৬ আগস্ট ভারতের প্রাক্তন ওপেনার উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। গত ১৩ জুন মারা যান ভারতের সব থেকে বয়স্ক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার বসন্ত রাইজি (Vasant Raiji)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
২০২০: বাঙালিকে যাঁরা ‘বিদায়’ জানালেন
ক্রিকেট
জো রুটের পাঁচ উইকেট, ভয়াবহ ব্যাটিং ভরাডুবি ভারতের
মাত্র ৩৩ রানে এগিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করল ভারত।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: মাত্র ৪৬ রানের মধ্যে পড়ল সাতটা উইকেট। অমদাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম দেড় ঘণ্টায় এ ভাবেই ভয়াবহ ব্যাটিং ভরাডুবির কবলে পড়ল ভারত। আর এই সাতটার মধ্যে পাঁচটা উইকেটই নিয়ে নিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট।
বৃহস্পতিবার ভারত নিজের স্কোর কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটা দেখার ছিল। রোহিত শর্মা এবং অজিঙ্ক রাহানের ওপরে অনেক কিছুই নির্ভর করছিল। কিন্তু ভারতীয় স্পিনারদের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের স্পিনাররাও যে গোলাপি বলকে মারাত্মক ভাবে ঘোরাবেন সেটা কার্যত আন্দাজই করা যায়নি।
এ দিন খেলা শুরু হওয়ার প্রথম কয়েকটি ওভারের পর ভারতীয় শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দেন জ্যাক লিচ, অজিঙ্ক রাহানেকে তুলে নিয়ে। এর পর রোহিত শর্মাও লিচের ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে যান। এর পর শুধুই রুটের কেরামতি।
ভারতীয় পিচে দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলেছেন রুট। চেন্নাইয়ের প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে একার হাতেই ভারতকে হারিয়েছেন তিনি। টুকটাক বলও করতে পারেন। কিন্তু তা বলে সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি পাঁচ উইকেট নিতে পারেন, সেটা ভাবাই যায়নি। তাঁর ঘূর্ণির শিকার হলেন পন্থ, ওয়াশিংটন, অশ্বিন, অক্ষর এবং বুমরাহ।
প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৩ রানে এগিয়ে থেকে অল আউট হয়ে গেল ভারত। তাদের ওপরেও এখন যথেষ্ট চাপ রয়েছে। ইংল্যান্ড ব্যাটিংকে কোনো ভাবেই বেশ দূর এগোতে দেওয়া যাবে না। চতুর্থ ইনিংসের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ ছাড়িয়ে গেলেও কিন্তু ভারত বিপদে পড়তে পারে।
ফুটবল
বিপিন সিংয়ের হ্যাটট্রিক, ওড়িশাকে আধ ডজন গোল মুম্বইয়ের
মুম্বইয়ের এ দিনের জয়ের পর আগামী রবিবার এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে তাদের খেলা জমে গেল।

মুম্বই সিটি এফসি ৬ (বিপিন সিং ৩, ওগবেচে ২, গোডার্ড) ওড়িশা এফসি ১ (দিয়েগো মরিসিও)
খবর অনলাইন ডেস্ক: বুধবার ব্যাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে আইএসএল-এর (ISL 2020-21) লিগ টেবিলে একেবারে নীচে থাকা ওড়িশাকে হারাতে কোনো বেগই পেতে হল না মুম্বইকে।
বিপিন সিংয়ের হ্যাটট্রিক আর বার্থোলোমিউ ওগবেচের জোড়া গোলের সাহায্যে মুম্বই সিটি এফসি (Mumbai City FC) জিতল ৬-১ গোলে। কিন্তু ম্যাচে প্রথম গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল ওড়িশা এফসি-ই (Odisha FC)।
মুম্বইয়ের এ দিনের জয়ের পর আগামী রবিবার এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) সঙ্গে তাদের খেলা জমে গেল। দু’ দলই ১৯টা ম্যাচ খেলেছে। মোহনবাগানের সংগ্রহ ৪০ পয়েন্ট, আর মুম্বইয়ের সংগ্রহ ৩৭ পয়েন্ট।
রবিবারের ম্যাচে মুম্বই যদি মোহনবাগানকে হারাতে পারে তা হলে দু’ দলের পয়েন্ট সমান হয়ে গেলেও মুম্বই থাকবে লিগ শীর্ষে। কারণ সে ক্ষেত্রে দু’ দলের সমরে জয়ের নিরিখে এগিয়ে থাকবে মুম্বই, যে হেতু প্রথম লিগে তারা মোহনবাগানকে হারিয়েছিল।
বুধবারের ৭ গোল
বুধবার ওড়িশা পর্যুদস্ত হয়ে গেলেও প্রথম গোল কিন্তু তারাই করেছিল। ৯ মিনিটে ওড়িশার মাউইহমিংথাঙ্গাকে নিজেদের বক্সে ফেলে দেন আহমেদ জাহৌ। বিস্ময়ের ব্যাপার, রেফারি কার্ড দেখাননি জাহৌকে। যা-ই হোক পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি দিয়েগো মরিসিও।
এর পরেই খেল শুরু করে মুম্বই। ৪ মিনিট পরেই সমতা ফেরায় মুম্বই। প্রায়শ্চিত্ত করেন জাহৌ। তাঁর ফ্রি-কিকে মাথা ছুঁইয়ে মুম্বইকে গোলের রাস্তায় আনেন ওগবেচে।
ম্যাচের ৩৮, ৪৩, ৪৪, ৪৭ এবং ৮৬ মিনিটে মুম্বইয়ের হয়ে বিপিন, ওগবেচে ও গোডার্ড ভাগাভাগি করে গোল করেন। এর মধ্যে ৩টি গোল করে হ্যটট্রিক করেন বিপিন। আইএসএল-এর এই মরশুমে প্রথম হ্যাটট্রিক।
মুম্বইয়ের স্বপক্ষে গোল ৬-এর জায়গায় ৭-ও হতে পারত, যদি ৮৩ মিনিটে জাহৌর পেনাল্টি কিক ওড়িশার গোলকিপার অর্শদীপ না বাঁচাতেন।
১৯ ম্যাচ থেকে ৩৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে মুম্বই রইল দ্বিতীয় স্থানে। সমসংখ্যক খেলায় ওড়িশার সংগ্রহ ১৯ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন: স্টেডিয়ামে অদ্ভুত কিছু বিপত্তির পর অমদাবাদ টেস্টের প্রথম দিন চালকের আসনে ভারত
ক্রিকেট
স্টেডিয়ামে অদ্ভুত কিছু বিপত্তির পর অমদাবাদ টেস্টের প্রথম দিন চালকের আসনে ভারত
অক্ষর পটের ছয় উইকেটের পর অর্ধশতরান রোহিতের।

ইংল্যান্ড ১১২ (ক্রলি ৫৩, রুট ১৭, অক্ষর ৬-৩৮)
ভারত ৯৯-৩ (রোহিত ৫৭ অপরাজিত, বিরাট ২৭, লিচ ২-২৭)
খবরঅনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পথ চলা শুরুর দিন নানা রকম বিপত্তি। বার দুয়েক ফ্লাডলাইটের আলো নিভে যাওয়া, খেলা চলাকালীন নিরাপত্তার বেষ্টনী এড়িয়ে পিচের কাছাকাছি এক ভক্তের চলে আসা, এই সব ঘটনা ঘটল অমদাবাদ টেস্টের প্রথম দিন।
কল্পনা করুন কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে ওই ভক্ত যদি ক্রিকেটারদের কাছাকাছি পৌঁছে যেতেন, তা হলে কী হত! জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে বেরিয়ে যেতে হত সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারদের। হয়তো এই টেস্টে আর নাও খেলতে পারতেন তাঁরা, হয়তো কোভিড নেগেটিভ টেস্ট করিয়ে তার পর ঢুকতে হত বলয়ের মধ্যে। যাই হোক, নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত ওই ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি বেশি জটিল হয়নি।
তবে এই সব বিপত্তিতে ভারতের পক্ষে একটি দুর্দান্ত দিন গেল। প্রথম পঞ্চাশ ওভারের মধ্যেই ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে আপাতত ভারত বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থাতেই রয়েছে।
স্বপ্নের অভিষেক সিরিজ চলছে অক্ষর পটেলের। চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় টেস্টে নিজের অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলেছিলেন তিনি। এ বার তার সঙ্গে আরও একটা যোগ করে ফেললেন তিনি। ঘরের মাঠেই ব্রিটিশদের আধ ডজন উইকেট তুলে নিলেন অক্ষর। আর তাতেও মাত্র ১১২ রানে শেষ হয়ে গেল ইংল্যান্ড।
গোলাপি বল সুইং বেশি করে, এমনই ধারণা। ২০১৯-এ ইডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিন রাতের টেস্টে সবকটা উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের পেসাররাই। তাই মনে করা হচ্ছিল ভারত হয়তো বাড়তি পেসার নিয়ে এ দিন মাঠে নামবে। কিন্তু সেটা না করে তিন স্পিনার আর দুই পেসার ফর্মুলাতেই দল নামান কোহলি।
সেই সিদ্ধান্তটা দুরন্ত একটা সিদ্ধান্ত ছিল, সেটা বোঝা গেল। এ দিন প্রথম উইকেটটা নেন শততম টেস্ট খেলতে নামা ইশান্ত শর্মা। তাঁর আউটসুইং বলটাকে স্লিপে খোঁচা দিয়ে দেন ডম সিবলি। তার পর থেকে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম জুড়ে স্পিনারদেরই দাপট।
শুরুটাও করেছিলেন অক্ষরই। তিন নম্বরে নামা জনি বেয়ারস্টোকে তুলে নেন তিনি। এর পর জো রুট এবং জ্যাক ক্রলির মধ্যে সুন্দর একটি জুটি তৈরি হয়। দুর্দান্ত খেলছিলেন ক্রলি। তাঁর কভার ড্রাইভগুলো দৃষ্টিনন্দন ছিল। দুরন্ত একটি অর্ধশতরান করে ফেলেন ক্রলি, তার পরেই ইংল্যান্ডের উইকেট-পতন শুরু।
অক্ষরের সঙ্গে যোগ দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। তবে দাপট বেশ কিছু অক্ষরের। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড ১০০ করতে পারবে কি না। যাই হোক, সেই লক্ষ্যমাত্রাটা তারা পেরিয়ে যায়। এ দিকে, তিন উইকেট নেওয়ার পর চারশো ঊইকেট থেকে এখন আর মাত্র তিন উইকেট দূরে রইলেন অশ্বিন। হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসেই সেই রেকর্ড করে ফেলবেন তিনি।
অ্যান্ডারসন, ব্রড এবং আর্চার সম্বিলিত পেস আক্রমণটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম সেরা। এই পেস ত্রয়ীর সামনের ভারতের ওপেনিং জুটি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিল। তবে দ্রুত সেই অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসেন রোহিত শর্মা। যদিও শুভমন গিলের আচমকা খারাপ ফর্ম শুরু হয়ে গিয়েছে।
চেন্নাইয়ের দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংসেই রান পাননি তিনি। এ দিনও শুরুতে মারাত্মক আড়ষ্ট ছিলেন তিনি। তবুও সেই আড়ষ্টতা কাটানোর জন্য দুটো দুরান্ত শট মারলেও জোফ্রা আর্চারের বাউন্সার মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন তিনি।
এ দিন খেলা শুরুর আগে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন তিনি চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটে দ্বিশতরান দেখতে চান। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এ দিন কোনো রান না করেই ড্রেসিং রুমে ফিরে যান পুজারা। তাঁর পা কে উইকেটের সামনে পেয়ে যান জ্যাক লিচ।
এর পর রোহিত শর্মার সঙ্গে ক্রিজে জমতে শুরু করেন বিরাট কোহলি। নিজের চেনা ছন্দে খেলেই দুরন্ত অর্ধশতরান পূর্ণ করে ফেলেন রোহিত। চেন্নাইয়ে শতরানের পর আরও একটা শতরানের দিকেই এগোচ্ছেন তিনি।
তবে বিরাট নিজের চেনা ছন্দে ছিলেন না। সুন্দর কয়েকটি স্ট্রোক খেললেও ক্রিজে মাঝেমধ্যেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। অ্যান্ডারসনের বলে স্লিপে তাঁর ক্যাচও ফস্কান ওলি পোপ। যদিও ইংল্যান্ড শিবিরের বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি হয়নি তাতে। দিনের খেলা শেষে কিছু আগেই তাঁর উইকেটটি তুলে নেন জ্যাক লিচ।
তবুও ইংল্যান্ডের রান এতটাই কম যে এটা বলতেই হয় যে টেস্টের প্রথম দিনের শেষে চালকের আসনে বসে রয়েছে ভারত। দ্বিতীয় দিন নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করে ফেলতে পারে বিরাটবাহিনী।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
নরেন্দ্র মোদীর নামে স্টেডিয়াম! এক দিকে আদানি, অন্য প্রান্তে রিলায়েন্স, কটাক্ষ রাহুল গান্ধীর
-
প্রযুক্তি22 hours ago
রান্নার গ্যাসের ভরতুকির টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে কি না, কী ভাবে দেখবেন
-
প্রযুক্তি2 days ago
এ ভাবেই তৈরি করুন সদ্যোজাত শিশুর আধার কার্ড, জানুন কী কী লাগবে
-
ফুটবল3 days ago
দশ জনে খেলা হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে পিছিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তের গোলে মান বাঁচাল এটিকে মোহনবাগান
-
ফুটবল2 days ago
কোনো রকমে হার বাঁচানো এটিকে মোহনবাগানের খেলায় বেজায় ক্ষুব্ধ আন্তোনিও লোপেজ আবাস