আতসবাজি আর কাউন্টডাউনের মধ্যে দিয়ে শুরু হল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- অলিম্পিকের। ভারতীয় সময় শনিবার ভোর সাড়ে ৪টের একটু পরেই ঢাকে কাঠি পড়ল অলিম্পিকের।
লন্ডন আর বেজিং অলিম্পিকের তুলনায় অনেক কম খরচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উচ্চ প্রযুক্তি নয়, ভরসা করতে হয়েছে স্থানীয় মেধা আর পার্টি-প্রেমী মানুষের ওপর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বর্ণময় করে তুলেছিল ব্রাজিলের ইতিহাস। ষোড়শ শতকের ব্রাজিলে পর্তুগিজ আগমনের সময় থেকে চারশো বছরের ধরে যে ভাবে আফ্রিকার ক্রীতদাসদের ব্যবহার করা হত, তা দেখানো হল। বিশ্বের বৃহত্তম রেনফরেস্টের দেশ ব্রাজিল। এই অনুষ্ঠানের সুযোগ নিয়ে টিভিতে দেখতে বসা প্রায় তিন লক্ষ বিশ্ববাসীর কাছে ব্রাজিল পৌঁছে দিল বার্তা, ‘প্রকৃতির দিকে খেয়াল রাখুন’।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পাউলিন দি বিওলার গলায় ভেসে ওঠে ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত। তার একটু পরেই মাঠে প্রবেশ সুপারমডেল জিসেলে বুন্দচেনের। জিসেলে আর পাউলিন দু’জনেই বিনা পারিশ্রমিকে পারফর্ম করেছেন।
ভোর সাড়ে ৫টার একটু আগে শুরু হয় মার্চপাস্ট। তিন জনের দল নিয়ে প্যারেডে প্রথম প্রবেশ আফগানিস্তানের। এর পর ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী পর পর দেশ আসতে থাকে। ভিন্ন দেশ ভিন্ন সংস্কৃতি, সব মিলিয়ে বর্ণময় হয়ে উঠেছিল এই মার্চপাস্ট। রাফায়েল নাদালের নেতৃত্বে মাঠে প্রবেশ করে স্পেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মার্চপাস্টে নেতৃত্ব দেন মাইকেল ফেল্পস। টেনিস তারকা আন্ডি মারে নেতৃত্ব দেন ব্রিটেনকে।
সাড়ে ৬টার একটু আগে মার্চপাস্টে প্রবেশ ভারতের। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে সোনা জেতা অভিনব বিন্দ্রা নেতৃত্ব দেন ভারতীয় দলকে। রাশিয়ার জন্য বরাদ্দ ছিল দর্শকদের ভর্ৎসনা। তবে অলিম্পিকের উদ্বাস্তু দল প্রবেশের সময় সেই ভর্ৎসনাই বদলে গেল উল্লাসে। দর্শকদের দারুণ অভ্যর্থনা পায় দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, কঙ্গো আর ইথিওপিয়ার খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি হওয়া এই দলটি। ইয়ানা মার্কেজের নেতৃত্বে সব থেকে শেষে মার্চপাস্টে আসে সংগঠক ব্রাজিল।
মার্চপাস্টের শেষে বক্তব্য রাখার পালা। প্রথমে বলেন রিও অলিম্পিকের সভাপতি কার্লোস নুজম্যান। তিনি বলেন, “ব্রাজিল দু’হাত খুলে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানায়। এটা আমাদের সবার উৎসব। আসুন আমরা সবাই এটা উদযাপন করি”। এর পর বলেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি থমাস বাক। তাঁর কথায়, “অলিম্পিকের এই বিশ্বে, আমরা সবাই এক”। এর পর উদ্বাস্তু দলের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “আপনারা গোটা বিশ্বের কাছে আশার আলো নিয়ে এসেছেন”। এর পরই অলিম্পিককে সরকারি ভাবে ‘ওপেন’ ঘোষণা করেন ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি মিচেল টেমের।
মশাল জ্বালানো দিয়ে শেষ হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। মশাল জ্বালানোর জন্য পেলেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও স্পনসরদের চাপে তিনি আসেননি। তাঁর পরিবর্তে মশাল নিয়ে মারাকানা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন ব্রাজিলের টেনিস তারকা গুস্তাভো কুয়েরতেন। তিনি মশালটি দেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ম্যারাথন দৌড়বিদ ভান্দেইরেই কোরদেইরো দে লিমা। তাঁর হাত ধরেই প্রজ্জ্বলিত হয় অলিম্পিকের আধার।
তবে এই আনন্দের মুহূর্তেও তার কেটেছে অপ্রীতিকর কিছু ঘটনায়। মারাকানা স্টেডিয়ামের বাইরে অলিম্পিকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন প্রায় কয়েকশো বিক্ষোভকারী। তাদের প্রতিহত করার জন্য পুলিশকে স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করতে হয়। স্টেডিয়ামের ভেতরেও এ রকম একটি মুহূর্ত অপেক্ষা করে ছিল যখন অলিম্পিক উদ্বোধনের ঘোষণার করার সময় দেশের অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি দর্শকদের তীব্র ভর্ৎসনার শিকার হন।
তবে যাই হোক, আগামী দু’সপ্তাহ সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের নজর একটা শহরের ওপর থাকবে। রিও দে জেনেরিও।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।