লন্ডন: রড লেভার, বিয়র্ন বর্গ, রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল আর নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে একই তালিকায় নাম লেখালেন ২১ বছরের কার্লোস আলকারাজ। একই বছরে ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন জেতা। আলকারাজ এবারেও উইম্বলডন জিতলেন ২৪টা গ্র্যান্ড স্লাম খেতাবের মালিক জোকোভিচকে হারিয়ে। তফাত শুধু একটা জায়গায়। গতবার জিতেছিলেন পাঁচ সেটের লড়াইয়ে। এবারে একেবারে স্ট্রেট সেটে। স্প্যানিশ আলকারাজ তাঁর উইম্বলডন খেতাব ধরে রাখলেন ৬-২, ৬-২, ৭-৬(৪) ফলে জিতে।
এদিনের উইম্বলডন জয়ের পর আলকারাজের চারটে গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব জেতা হয়ে গেল। তার মধ্যে এ বছরেই দুটো – ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন। এর আগে জিতেছিলেন ২০২২-এর ইউএস ওপেন এবং ২০২৩-এর উইম্বলডন। মাত্র ২১ বছরেই এই কীর্তি।
দু’জনে দু’ রকম উদ্দেশ্য নিয়ে অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের সেন্টার কোর্টে নেমেছিলেন। জোকোভিচ ছিলেন ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জেতার দরজায়। আর রজার ফেডেরারের আটটি উইম্বলডন জেতার রেকর্ড ছোঁয়ার। অন্য দিকে আলকারাজ়ের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর উইম্বলডনজয়ীর খেতাব ধরে রাখা এবং নিজের চতুর্থ গ্র্যান্ড স্লাম জেতা। সেন্টার কোর্ট দেখল দুই সেরার একপেশে লড়াই। এ দিন তরুণ আলকারাজের কাছে কিংবদন্তি জোকোভিচ কার্যত আত্মসমর্পণ করলেন। প্রথম দুটো সেট কোনো লড়াই না দিয়ে আলাকারাজের হাতে তুলে দিলেন। আর তৃতীয় সেটে পুরোনো জোকোভিচের কিছু ঝলক দেখা গেল বটে, কিন্তু কাজের কাজ হল না। গোটা ম্যাচে কার্যত নিষ্প্রভ থেকে জয় তুলে দিলেন আলকারাজের হাতে।

জয়ের পর আলকারাজের প্রতিক্রিয়া। ছবি Wimbledon ‘X’ handle থেকে নেওয়া।
উইম্বলডন ফাইনালে জোকোভিচ বনাম আলকারাজের ধুন্ধুমার লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিলেন টেনিসপ্রেমীরা। রবিবার তারকাখরিচ গ্যালারির মাঝে ফাইনালে মুখোমুখি হলেন বিশ্বের তিন নম্বর কার্লোস আলকারাজ এবং দু’ নম্বর নোভাক জোকোভিচ।
আলকারাজ যে ভবিষ্যতে কিংবদন্তি টেনিস-তারকা হয়ে উঠবেন, তার প্রমাণ রাখলেন প্রতি পদে পদে। তাঁর খেলায় ছিল দাপট, গতি আর শক্তির পাশাপাশি ছিল শিল্পও। তাঁর স্বদেশীয় পূর্বসূরি রাফায়েল নাদালের খেলার ছাপ রয়েছে আলকারাজের খেলায়। ওদিকে জোকোভিচের নিষ্প্রভ থাকার অন্যতম কারণ হতে পারে হাঁটুর সমস্যা। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করিয়ে উইম্বলডন খেলতে এসেছিলেন জোকোভিচ। তবে সেই হাঁটুর সমস্যা কিন্তু ফাইনালে ওঠার পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। ফাইনালেই আলকারাজের গতির সঙ্গে ঠিক পাল্লা দিতে পারলেন না জোকোভিচ।
সরাসরি তিন সেটেই ফয়সালা
প্রথম সেটের প্রথম গেম চলল ১৪ মিনিট ধরে। আলকারাজ় পাঁচ বার জোকোভিচের সার্ভিস ভাঙার সুযোগ পান। প্রথম চার বার জোকোভিচ ফিরে এলেন। পঞ্চম বারে আর পারলেন না। জোকোভিচের সার্ভিস ভেঙে এগিয়ে গেলেন আলকারাজ। দ্বিতীয় গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রেখে মাত্র ৩ মিনিটে শেষ করলেন আলকারাজ। তৃতীয় গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখলেন জোকোভিচ। পরের গেমে দু’টি এস মেরে ৩-১-এ এগিয়ে গেলেন আলকারাজ়। পঞ্চম গেমে আবার জোকোভিচের সার্ভিস ভাঙলেন আলকারাজ়। ডাবল ফল্ট করলেন জোকো। ৪-১ গেমে এগিয়ে গেলেন আলকারাজ়। পঞ্চম গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রেখে ৫-১-এ এগিয়ে গেলেন স্পেনের খেলোয়াড়। তার পর দুটি গেম নিজের নিজের সার্ভিস ধরে রাখলেন আলকারাজ ও জোকোভিচ। ৪১ মিনিটের লড়াইয়ে প্রথম সেটে ফল দাঁড়াল আলকারাজের পক্ষে ৬-২।
প্রথম সেটের প্রায় রিপ্লে দেখা গেল দ্বিতীয় সেটে। সেটের ফল দাঁড়াল সেই আলকারাজের পক্ষে ৬-২।

বিজয়ী আলকারাজকে নিয়ে পরাজিত নায়ক জোকোভিচ। ছবি Wimbledon ‘X’ handle থেকে নেওয়া।
শেষ পর্যন্ত লড়াইটা কিছুটা জমে গেল তৃতীয় সেটে। জোকোভিচকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। খেলা দেখে মনে হচ্ছিল বোধহয় স্ট্রেট সেটে নিষ্পত্তি হতে দেবেন না তিনি। আলকারাজ এবং জোকোভিচ, দুজনেই নিজের নিজের সার্ভিস ধরে রাখছিলেন। কিন্তু কেউই কারও সার্ভিস ভাঙতে পারছিলেন না। খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ টাইব্রেকারের দিকে গড়াবে। ঠিক তখনই জোকোভিচের সার্ভিস ভেঙে এগিয়ে গেলেন আলকারাজ়। পরের গেমে খেতাব জয়ের লক্ষ্য নিয়েই সার্ভিস করছিলেন আলকারাজ। তিনটি ম্যাচ পয়েন্টও পেয়ে গেলেন আলকারাজ়। ঠিক তখনই পর পর ভুল করলেন। জোকোভিচ সুযোগ পেয়ে গেলেন। প্রথমবার আলকারাজ়ের ভেঙে সেট ৫-৫ করলেন। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। আর ভুল করেননি আলকারাজ়। ৭২ মিনিটের লড়াইয়ে স্ট্রেট সেটে জোকোভিচকে উড়িয়ে দিলেন স্পেনের আলকারাজ। উইম্বলডনে নিজের সাম্রাজ্য আরও শক্তপোক্ত করলেন কার্লোস আলকারাজ।
ছ’বার মুখোমুখি সাক্ষাতে ফল ৩-৩
এদিনের উইম্বলডন নিয়ে ছ’বার মুখোমুখি হলেন আলকারাজ ও জোকোভিচ। প্রথম সাক্ষাৎ ২০২২ সালের মাদ্রিদ মাস্টার্সে। প্রথম সাক্ষাতেই জোকোভিচকে হারিয়ে দেন আলকারাজ। পরে ২০২৩-এর ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে আলকারাজকে পরাজিত করে মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাব ১-১ করেন জোকোভিচ। তার পর ২০২৩-এ উইম্বলডনের ফাইনালে তৃতীয় সাক্ষাৎ। হেরে গেলেন জোকোভিচ। দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাতের ফল দাঁড়াল আলকারাজের পক্ষে ২-১। শেষ পর্যন্ত হেরেই কোর্ট ছাড়তে হল জোকোভিচকে।
এর পর ২০২৩-এ সিনসিনাটি ওপেনে এবং এটিপি ফাইনালসে জিতে যান জোকোভিচ। তাই ২০২৪-এর উইম্বলডন ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার আগে জোকোভিচ এগিয়ে ছিলেন ৩-২ ফলে। এদিন উইম্বলডন খেতাব ধরে রেখে আলকারাজ করলেন ৩-৩। অর্থাৎ ছ’বার মুখোমুখি সাক্ষাতে জোকোভিচ জিতলেন ৩ বার আর আলকারাজও জিতলেন ৩ বার।
আরও পড়ুন
উইম্বলডন মহিলা টেনিস: ইতালির পাওলিনিকে হারিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন ক্রেচিকোভা