আফগানিস্তান: ৩২৫-৭ (ইব্রাহিম জাদরান ১৭৭, আজমাতুল্লাহ ওমরজাই ৪১, জোফ্রা আর্চার ৩-৬৪, লিয়াম লিভিংস্টোন ২-২৮)
ইংল্যান্ড: ৩১৭ (৪৯.৫ ওভার) (জো রুট ১২০, জোস বাটলার ৩৮, আজমাতুল্লাহ ওমরজাই ৫-৫৮, মহম্মদ নবি ২-৫৭)
লাহোর: আর অঘটন নয়। কারণ বার বার একই ঘটনা ঘটলে তাকে আর অঘটন বলা যায় না। আবার ইংল্যান্ডকে হারাল আফগানিস্তান। এক দিনের ম্যাচের বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ক্রিকেটবিশ্বে আফগানিস্তান এখন সমীহ জাগানো নাম। বড় প্রতিযোগিতায় তাদের ধারাবাহিক সাফল্য ক্রিকেটবিশ্বকে আর চমকে দেয় না।
বুধবার লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে প্রত্থমে ব্যাট করে হাশমাতুল্লাহ শাহিদির দল করে ৭ উইকেটে ৩২৫ রান। মূলত ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটিং-জাদুতে ভর করে এই রানে পৌঁছোয় আফগানরা। আর আজমাতুল্লাহ ওমরজাই কেরামতি দেখালেন বোলিং-এ। ইংল্যান্ড আটকে গেল ৩১৭ রানে। এক বল বাকি থাকতে শেষ হয়ে গেল তাদের লড়াই। জো রুটের শতরান কোনো কাজে এল না। জোস বাটলারদের ৮ রানে হারিয়ে শেষ চারে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল আফগানরা। আর দুটি ম্যাচ থেকে কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে না পেরে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেল ইংল্যান্ডের।

জয়ের উল্লাস আফগান শিবিরে। ছবি ICC ‘X’ থেকে নেওয়া।
ব্যাটিং-এ জাদু ইব্রাহিম জাদরানের
লাহোরের মাঠে টসে জিতে ব্যাট নেয় আফগানিস্তান। ৩৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে তারা। এক প্রান্তে দুর্ভেদ্য ছিলেন জাদরান। কিন্তু তাঁর সঙ্গীরা একে একে উইকেট দান করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ উইকেটে সঙ্গী পান দলের অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদিকে। তাঁরা রান নিয়ে যান ১৪০-এ। ৬৭ বলে ৪০ রান করে আদিল রশিদের বলে শাহিদি বিদায় নিতে পঞ্চম উইকেটে জাদরানের সঙ্গী হন আজমাতুল্লাহ ওমরজাই। তাঁরা রান নিয়ে যান ২১২-তে।
মারকাটারি ব্যাটিং-এ ৩১ বলে ৪১ রান করে জেমি অভার্টনের বলে পরিবর্ত খেলোয়াড় টি ব্যান্টনকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ওমরজাই। এর পর জাদরানের সঙ্গী হন মহম্মদ নবী। ষষ্ঠ উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ১১৩ রান। শেষ পর্যন্ত দলের ৩২৩ রানে শেষ হয় জাদরানের ইনিংস। ১৪৬ বলে ১৭৭ রান করে এক দিনের ম্যাচে আফগান ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী হন। তাঁর ১৭৭ রানে ছিল ১২টা চার আর ৬টা ছয়। দলের ৩২৪ রানে বিদায় নেন নবী ২৪ বলে ৪০ রান করে।

বোলিং-এ কেল্লা ফতে আজমাতুল্লাহ ওমরজাইয়ের (মাঝখানে)। ছবি ICC ‘X’ থেকে নেওয়া।
বোলিং-এ মাত করলেন আজমাতুল্লাহ ওমরজাই
ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২৬ রানের। শুরুটা তাদেরও ভালো হয়নি। ৩০ রানের মধ্যে ফিল সল্ট এবং জেমি স্মিথ ফিরে যান। দলের ১৯ রানের মাথায় সল্টকে বোল্ড করেন ওমরজাই। তার পর ৩০ রানে ফিরে যান স্মিথ, নবীর বলে ওমরজাইকে ক্যাচ দিয়ে। দলের হাল ধরেন বেন ডাকেট এবং জো রুট। তাঁরা দলের স্কোর নিয়ে গেলেন ৯৮-এ। এ বার ডাকেটকে এলবিডব্লিউ করেন রশিদ খান। রুটের সঙ্গী হন চতুর্থ উইকেটে হ্যারি ব্রুক এবং পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক জোস বাটলার।
রুট এবং বাটলার যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণ মনে হচ্ছিল, এ বার আর বোধহয় আফগানদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। কিন্তু আঘাত হানেন সেই ওমরজাই। দলের ২১৬ রানের মাথায় ওমরজাইয়ের বলে রহমত শাহকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বাটলার (৪২ বলে ৩৮ রান)। কিন্তু জো রুট তখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লিয়াম লিভিংস্টোনকে সঙ্গী করে এবং পরে জেমি ওভার্টনকে। ইতিমধ্যে সেঞ্চুরিও করে ফেলেন রুট। শেষ পর্যন্ত রুটকে ফিরিয়ে দেন ওমরজাই। ১২০ বলে ১১১ রান করে দলের ২৮৭ রানে ওমরজাইয়ের বলে রহমনুল্লাহ গুরবাজকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রুট। এর পর ওমরজাইয়ের কেরামতি। ইংল্যান্ডের যাত্রা শেষ হল ৩১৭ রানে। ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন ইব্রাহিম জাদরান।
গ্রুপ ‘বি’-তে তিন দলের রাস্তা খোলা
এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ ‘বি’-তে বিদায় হয়ে গেল ইংল্যান্ডের। বাকি তিন দল, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা এবং আফগানিস্তানের মধ্যে যে কোনো দুটো দল শেষ চারে যাবে। আপাতত অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকা ২টি ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে। আর ২টি ম্যাচ থেকে আফগানদের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। এর পর আফগানরা মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়ার এবং সাউথ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের।