ইংল্যান্ড: ৩৫১-৮ (বেন ডাকেট ১৬৫, জো রুট ৬৮, বেন ডওয়ারশুইস ৩-৬৬, মার্নাস লাবুশানে ২-৪১)
অস্ট্রেলিয়া: ৩৫৬-৫ (৪৭.৩ ওভার) (জোশ ইংলিস ১২০, অ্যালেক্স ক্যারি ৬৯, ম্যাথু শর্ট ৬৩, আদিল রশিদ ১-৪১)
লাহোর: ক্রিকেটবোদ্ধারা অস্ট্রেলিয়াকে বুঝতেই পারেননি। ২০২৩ সালে তাদের যে দল এক দিনের বিশ্বকাপ জিতেছিল সেই দলের ছয় ক্রিকেটার নেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। পুরো দলটাই প্রায় নতুন। তাই তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়া বিশেষ কিছু করতে পারবে না। কিন্তু তাঁদের সেই হিসাবে জল ঢেলে দিল কার্যত ‘ভাঙাচোরা’ অস্ট্রেলিয়া।
পুরো বোলিং আক্রমণটাই প্রায় নতুন অস্ট্রেলিয়ার। তার ওপর ইংল্যান্ডের স্থির করে দেওয়া রানের ভয়ঙ্কর লক্ষ্যমাত্রা। কী করে জিতবে অস্ট্রেলিয়া? কিন্তু সেটাই তারা করে দেখাল। শুধু জিতলই না, আইসিসি প্রতিযোগিতার ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে জিতল তারা। অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটে জয়ের পিছনে রয়েছে এক দিনের ম্যাচে জো ইংলিসের প্রথম শতরান। স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন ইংলিশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রেকর্ড গড়েও দলের জয় দেখতে পেলেন না ইংল্যান্ডের ওপেনিং ব্যাটার বেন ডাকেট (১৪৩ বলে ১৬৫ রান)।
এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ডাকেটের
শনিবার লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। অন্যতম ওপেনার ফিল সল্ট এবং তিন নম্বর ব্যাটার জেমি স্মিথ ৪৩ রানের ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন আর এক ওপেনার বেন ডাকেট এবং জো রুট। পরের ২৫.৪ ওভার অবিচ্ছেদ্য থেকে তাঁরা যোগ করেন ১৫৮ রান।

অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক জোশ ইংলিস (বাঁ দিকে)। তাঁর তারিফ করছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি ‘X’ থেকে নেওয়া।
নিয়মিত ব্যবধানে ইংল্যান্ডের উইকেট পড়লেও এক দিকে ধরে রেখেছিলেন ডাকেট। একটু একটু করে দ্বিশতরানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর। নিজস্ব ১৬৫ রান এবং দলের ৩২২ রানের মাথায় মার্নাশ লাবুশানের বলে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি। কিন্তু আউট হওয়ার আগেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনি এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে ফেলেন। এর আগে এই প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক রানের রেকর্ডটি ছিল নিউজিল্যান্ডের নাথান অ্যাস্টলের দখলে। ২০০৪ সালে আমেরিকার বিরুদ্ধে তিনি করেছিলেন ১৪৫ রান। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ইংল্যান্ড করে ৮ উইকেটে ৩৫১ রান। উইকেটগুলি মুলত দখল করেন বেন ডওয়ারশুইস (৬৬ রানে ৩ উইকেট), মার্নাস লাবুশানে (৪১ রানে ২ উইকেট) এবং অ্যাডাম জাম্পা (৬৪ রানে ২ উইকেট)।
ইংলিস সঙ্গী পেলেন ক্যারি ও ম্যাক্সওয়েলকে
পাহাড়প্রমাণ রানের চাপ। মনে হচ্ছিল, সেই চাপেই ভেঙে পড়বে অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের শুরুতে তার ইঙ্গিতও দিল তারা। ২৭ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন ট্র্যাভিস হেড এবং দলের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। এর পরেই উইকেট পতন রুখে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন অন্য ওপেনার ম্যাথু শর্ট এবং মার্নাস লাবুশানে। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে তাঁরা যোগ করলেন ৯৫ রান। দলের ১২২ রানের মাথায় লাবুশানে (৪৫ বলে ৪৭ রান) আউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ১৪ রান যোগ হতেই ফিরে গেলেন ম্যাথু শর্ট (৬৬ বলে ৬৩ রান)।
লক্ষ্যমাত্রা এখনও অনেক দূর – ২৩০ রান, হাতে ৩০.৪ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার অতিবড়ো সমর্থকও ভাবতে পারেননি এখান থেকেও জয়ে পৌঁছোনো যায়! কিন্তু পথ দেখালেন তরুণ জোশ ইংলিস। সঙ্গী পেলেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অ্যালেক্স ক্যারিকে। পঞ্চম উইকেটের জুটিতে ২২.৪ ওভারে দু’জনে যোগ করলেন ১৪৬ রান। ইংলিস এক দিনের কেরিয়ারে নিজের প্রথম শতরান করলেন। ক্যারি (৬৩ বলে ৬৯ রান) ফিরে যেতেই ঝোড়ো ইনিংস শুরু করলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৫ বল বাকি থাকতেই ইংলিস-ম্যাক্সওয়েল দলকে পৌঁছে দিলেন জয়ে। ৫.৫ ওভারে তাঁরা যোগ করলেন ৭৪ রান। ৮৬ বলে ১২০ রান করে ইংলিস এবং ১৫ বলে ৩২ রান করে ম্যাক্সওয়েল নট আউট থাকলেন। এক অবিশ্বাস্য জয় পেল অস্ট্রেলিয়া।