টি২০-তে প্রথম বার বিশ্বজয়, সাম্প্রতিক অতীতের হতাশা কাটিয়ে আবার জ্বলে উঠল অস্ট্রেলিয়া

0

নিউজিল্যান্ড ১৭২-৪ (উইলিয়ামসন ৮৫ অপরাজিত, গাপ্টিল ২৮, হেজেলউড ৩-১৬)

অস্ট্রেলিয়া ১৭৩-২ (মার্শ ৭৭ অপরাজিত, ওয়ার্নার ৫৩, বোল্ট ২-১৮)

দুবাই: টি২০ বিশ্বকাপে ইতিহাসে। বিশ্বকাপের ১৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে খেললও তারা পুরোপুরি চ্যাম্পিয়নের মতো। অন্যদিকে, ২০১৯-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ফের একবার স্বপ্নভঙ্গ হল নিউজিল্যান্ডের।

অথচ রবিবার ফাইনালের প্রথম ইনিংসটাকে দেখে একদমই অন্যরকম ফলাফলের আশা করা হচ্ছিল। এ দিন টসে হেরে যাওয়ার পর দুই ওপেনার মার্টিন গাপ্টিল এবং গ্লেন মিচেলের থেকে বিধ্বংসী শুরু আশা করেছিল নিউজিল্যান্ড। কারণ এই দু’জনেই ফর্মে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের শাসন করে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে যদি বড়ো রান তুলে নেওয়া যায়, তা হলে মিডিল অর্ডার অনেকটাই স্বস্তিতে থাকত।

কিন্তু পাওয়ার প্লে’র জস হেজেলউড, মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্সের বিছানো জাল ছাড়াতে ব্যর্থ হয় কিউয়িরা। এরই মধ্যে হেজেলউডের বলের শিকার হন গ্লেন মিচেল। তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ফর্ম হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে তিনিও শুরুর দিকে বিশেষ কিছু করতেই পারেননি। ফলত, প্রথম দশ ওভার যখন শেষ হচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন মাত্র ৫৭।

কিন্তু একাদশ ওভারেই ঘুরে গেল ম্যাচ। ঘুরিয়ে দিলেন অধিনায়ক উইলিয়ামসনই। অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ মিচেল স্টার্ককে দিয়ে প্রথম ওভারটা করিয়েই তাঁকে তুলে নেন। ভেবেছিলেন শেষের দিকে ওভারগুলোতে দারুণ বল করবেন তিনি। সেই আশাতেই একাদশ ওভারে ফের স্টার্ককে নিয়ে আসেন ফিঞ্চ। সেটাই কাল হল। ওই ওভারে ১৯ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।

যে উইলিয়ামসন ফর্মের বাইরে ছিলেন, এই ইনিংসেও একটা সময় ১৬ বলে ১৫ রানে ছিলেন, তিনি হাত খুললেন। আর তা ব্যাপক ভাবে খুললেন। স্টার্ককে পুরো ছিঁড়ে খেলেন তিনি। বেয়াত করেননি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকেও। ৩২ বলে দুরন্ত অর্ধশতরান করে ফেলেন তিনি। সব থেকে কঠিন পরীক্ষার দিনই চূড়ান্ত ভাবে সফল হলেন কেন।

তবে পঞ্চাশের পরেও তিনি থেমে ছিলেন না। কার্যত একার হাতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন। শেষে অবশ্য শতরান থেকে ১৫ রান দূরে থেমে যেতে হয় তাঁকে। তবে লোয়ার অর্ডারে নামা জিমি নিশাম এবং টিম সাইফার্টটা দলের স্কোরকে এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেটা আজ পর্যন্ত হওয়া টি২০ বিশ্বকাপের সব ফাইনালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভালো স্কোর খাড়া করার পর নিউজিল্যান্ডের মনোবল আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দরকার ছিল শুরুতেই একটা উইকেটের। আর সেটা এনে দেন সেই ট্রেন্ট বোল্ট। তৃতীয় ওভারেই ফিঞ্চকে ফিরিয়ে দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া তখন প্রবল চাপে পড়ে যায়।

কিন্তু এখান থেকেই ম্যাচে প্রবল ভাবে ফিরে আসে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন মিচেল মার্শ। অস্ট্রেলিয়ার ওপরে আস্কিং রেটের চাপটা তিনিই কমান কিছু আগ্রাসী শট খেলে। এর পর সেখানে যুক্ত হন ডেভিড ওয়ার্নার। ক্রমে ওয়ার্নার-মার্শ জুটি নিউজিল্যান্ডের ওপরে চাপ বাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোরকে দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।

এ দিকে, মার্শকে টপকে গিয়ে আগের নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করে ফেলেন ওয়ার্নার। দ্বাদশ ওভারেই দলগত শতরানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৩তম ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে সামান্য স্বপ্ন দেখান বোল্ট। যদিও তা একদমই ক্ষণস্থায়ী ছিল।

ওয়ার্নার ফিরতেই এ বার ব্যাট চলতে শুরু করে মার্শের। অন্যদিকে, ক্রিজে এসেই ব্যাট চালাতে শুরু করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৫তম ওভারেই ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। এ বার অস্ট্রেলিয়ার জয় ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

এর পর ধীরেসুস্থে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দেন ম্যাক্সওয়েল এবং মার্শ। ১৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি তোলে অজিরা।

একটা সময় বিশ্বক্রিকেটে রাজ করে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া এখন আর নেই। এমনকি ২০১৮ সালের পর থেকে তারা যত হতাশা দেখেছে, সেই রকম হতাশা অন্য কোনো দলকেই দেখতে হয়নি। ঘরের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে দু’বার টেস্ট সিরিজ হারারও যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে এই দলটাকে। ২০১৫ সালের পর টানা ছয় বছর বিশ্বমঞ্চে সে ভাবে কোনো সাফল্যই দেখতে পায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু অ্যারন ফিঞ্চ অজি ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে নয়নের মণি হয়ে গেলেন। তিনিই পারলেন অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি এনে দিতে। তিনিই পারলেন হতাশায় ডুবতে থাকা অস্ট্রেলিয়া দলটাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে।

বিজ্ঞাপন