ভারত: ৪৭১ ও ৩৬৪; ইংল্যান্ড: ৪৬৫ ও ৩৭৩-৫ (বেন ডাকেট ১৪৯, জাক ক্রলি ৬৫, জো রুট ৫৩ নট আউট, জেমি স্মিথ ৪৪ নট আউট, শার্দূল ঠাকুর ২-৫১, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ২-৯২)
লিড্স (ইংল্যান্ড): জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৭১ রান। ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করা। সেটাই সফল ভাবে করল বেন স্টোক্সের ইংল্যান্ড। তারা জয় ছিনিয়ে নিল শুভমন গিলদের কাছ থেকে। তিন বছর আগে এজবাস্টনে এই ভারতের বিরুদ্ধেই ৩৭৮ রান তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার জিতল ৩৭১ তাড়া করে। আর টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসাবে পরাজয় দিয়ে শুরু হল শুভমন গিলের অভিযান।
জয়ের ভিত গড়লেন ডাকেট-ক্রলি
বিনা উইকেটে ২১ রান করে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। হেডিংলে টেস্টের পঞ্চম তথা শেষ দিনে জয়ের ভিত গড়ে দিলেন ওপেনিং জুটি জাক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। প্রথম উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ১৮৮ রান। তখনই বোঝা গিয়েছিল জয়ের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বেন স্টোক্সের দল। কখনওই তাঁদের উৎকণ্ঠিত মনে হয়নি। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিকারী ওলি পোপ এবং মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হওয়া হ্যারি ব্রুক দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হলেও বাকি সবাই দলের এই জয়ে অবদান রাখলেন। ইনিংসের শেষ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ১৮ রান করে আসল কাজটি সমাধা করলেন জেমি স্মিথ। ইংল্যান্ড জিতল ৫ উইকেটে। ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন বেন ডাকেট।
মঙ্গলবার বিনা উইকেট ২১ রান হাতে নিয়ে ব্যাট করতে নামেন জাক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। তাঁদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল পিচে থিতু হওয়া। কোনো তাড়াহুড়ো না করে ঠান্ডা মাথায় তাঁরা দলের স্কোর এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। প্রথম ঘণ্টায় তাঁরা করেন ৬৩ রান। পিচে থিতু হয়ে তাঁরা দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। ভারতের বোলাররা তাঁদের বিন্দুমাত্র বেগ দিতে পারেননি। ইতিমধ্যে ডাকেট নিজের অর্ধশত রান পূর্ণ করেন। ৬৬ বলে তিনি ৫০-এ পৌঁছে যান। শেষ পর্যন্ত ঝুলিতে ১১৭ নিয়ে মধ্যাহ্নভোজনে যান ক্রলি (৪২ রান) এবং ডাকেট (৬৪ রান)।
জাদেজার বলে ডাকেটের সেঞ্চুরি
মধ্যাহ্নভোজের বিরতি সামান্য দীর্ঘায়িত হয় বৃষ্টির জন্য। বিরতির পর রান ওঠার গতি আরও বাড়ে ইংল্যান্ডের। এবং একটু পরে নিজের শতরান পূর্ণ করেন ডাকেট। ইনিংসের ৪০তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বল রিভার্স সুইপ করে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন ডাকেট। ডাকেটের সেঞ্চুরির আগেই অবশ্য ক্রলি তাঁর ৫০ রান পূর্ণ করেন।
ইনিংসের ৪১তম ওভারের পঞ্চম বলে ইংল্যান্ডের স্কোর যখন বিনা উইকেটে ১৮১, তখন আবার বৃষ্টি নামে। কিছু ক্ষণ পর খেলা আবার শুরু হয়। তবে দ্রুত ২টি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যক্তিগত ৬৫ রানের মাথায় প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের বলে রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ক্রলি। দলের রান তখন ১৮৮। দলের স্কোরে মাত্র ১৮ রান যোগ হওয়ার পর আউট হয়ে যান ওলি পোপ (৮ রান)। তিনিও প্রসিদ্ধের শিকার হন।
মাঝে আবার বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটায় খেলায়। তবে তাতে খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটেনি। ৫৮.৩ ওভার খেলার পর চা-পানের বিরতি ঘটে। তার মধ্যে অবশ্য ইংল্যান্ড আরও দুটি উইকেট হারায়। তবে তাদের রান পৌঁছে যায় ২৬৯-এ। শেষ দুটি উইকেট নেন শার্দূল ঠাকুর। নিজস্ব ১৪৯-র মাথায় শার্দূলের বলে পরিবর্তিত খেলোয়াড় নীতীশ রেড্ডিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বেন ডাকেট। দলের রান তখন ২৫৩। ওই একই রানে ফিরে যান হ্যারি ব্রুক। নিজের খাতা খোলার আগেই শার্দূলের পরের বলে উইকেটকিপার ঋষভের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
জয় এল রুট-স্মিথ জুটিতে
জো রুটের সঙ্গী হন দলের অধিনায়ক বেন স্টোক্স। পঞ্চম উইকেটে যোগ হয় ৪৯ রান। নিজস্ব ৩৩ রানের মাথায় রবীন্দ্র জাদেজার বলে শুভমন গিলকে ক্যাচ দিয়ে স্টোক্স যখন ফিরে যান জয় তখন ৬৯ রান দূরে। হাতে অঢেল ওভার।
আসল কাজটি সাঙ্গ করেন জো রুট এবং জেমি স্মিথ। ধীরেসুস্থে খেলে তাঁরা দলকে নিয়ে আসেন ৩৫৫ রানে। ইনিংসের ৮২তম ওভারটি করতে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। ব্যাট হাতে জেমি স্মিথ। এই ওভারেই খেল দেখালেন স্মিথ। ওভারের দ্বিতীয় বলে চার, তৃতীয় বলে ছয়, পঞ্চম বলে দুই রান আর শেষ বলে আবার ছয় মেরে খেলা শেষ করেন জেমি স্মিথ। নিজে ৪৪ রানে নট আউট থেকে দলের জন্য এনে দেন বহুমূল্য জয়। রুট নট আউট থাকেন ৫৩ রানে। ইংল্যান্ড জিতে গেল ৫ উইকেটে।
আরও পড়ুন
ভারত-ইংল্যান্ড ১ম টেস্ট: ১ রানের জন্য শতরানে বঞ্চিত ব্রুক, ৫ উইকেট দখল করলেন বুমরাহ
ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট: শুভমন-যশস্বীর শতরানে ভর করে বড়ো লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারত