ভারত: ৫৮৭ (শুভমন গিল ২৬৯, রবীন্দ্র জাদেজা ৮৯, যশস্বী জয়সওয়াল ৮৭, শোয়েব বশির ৩-১৬৭) ও ৪২৭-৬ (ডিক্লেয়ার্ড) (শুভমন গিল ১৬১, ঋষভ পন্থ ৬৫, লোকেশ রাহুল ৫৫, জোশ টাং ২-৯৩)
ইংল্যান্ড: ৪০৭ (জেমি স্মিথ ১৮৭, হ্যারি ব্রুক ১৫৮, মহম্মদ সিরাজ ৬-৭০, আকাশ দীপ ৪-৮৮) ও ২৭১ (জেমি স্মিথ ৮৮, আকাশ দীপ ৬-৯৯)
এজবাস্টন (বার্মিংহাম): এজবাস্টনে সকাল থেকে আকাশের মুখভার। শেষ পর্যন্ত খেলা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টি নামল। বেশ বৃষ্টি। ভারতীয় সমর্থকদের শুরু হয়ে গেল চিন্তা। বৃষ্টিতে পঞ্চম তথা চূড়ান্ত দিনের খেলা ভেসে যাবে না তো! একই সঙ্গে মনে জাগতে লাগল প্রশ্ন – চালে ভুল করে ফেলেনি তো ভারত? নিজেদের নিরাপদ জায়গায় রাখার জন্য দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করতে দেরি করে ফেলেনি তো ভারত?
শনিবার ৬ উইকেটে ৪২৭ রান করে দ্বিতীয় ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন অধিনায়ক শুভমন গিল। ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য ৬০৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিল ভারত। ইংল্যান্ডের সব উইকেট ফেলার জন্য ভারতের হাতে ছিল শনিবারের শেষ ঘণ্টাখানেক সময় আর রবিবার পুরোটা। ইংল্যান্ডের ১০টা উইকেট নেওয়ার পক্ষে এটা যথেষ্ট সময় তো? এই প্রশ্ন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার সময় থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল ভারতীয় সমর্থকদের মনে।

জয়ের পরে আকাশ দীপকে সতীর্থদের অভিবাদন। একেবারে বাঁ দিকে শুভমন গিল। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত করল ভারত। আর জন্য প্রায় পুরো কৃতিত্ব প্রাপ্য জসপ্রীত বুমরাহের পরিবর্ত বোলার বাংলার আকাশ দীপের। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৬টি উইকেট তুলে নিলেন আকাশ। এজবাস্টন টেস্টে আকাশ মোট ১০টি উইকেট দখল করলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে একটি টেস্টে ১০টি উইকেটে দখল করার কৃতিত্ব আর-একজনেরই আছে। তিনি চেতন শর্মা। ১৯৮৬ সালে তিনি এই কীর্তি গড়েন। আকাশ ৬ উইকেট এবং বাকি ভারতীয় বোলাররা ৪ উইকেট দখল করে ইংল্যান্ডকে বেঁধে রাখেন ২৭১ রানে। ভারত ৩৩৬ রানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে সিরিজে সমতা ফেরাল। এই টেস্টে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন শুভমন গিল। আগামী ১০ জুলাই, বৃহস্পতিবার থেকে লর্ডসে শুরু হচ্ছে তৃতীয় টেস্ট।
শুরুতেই ধাক্কা আকাশের, পর পর ২টি উইকেট
বৃষ্টির জন্য রবিবার এজবাস্টনে খেলা দেরিতে শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে শুরু হয় খেলা। ফলে এ দিন ৮০ ওভার খেলা হবে বলে স্থির হয়। শুরু হওয়ার একটু পরেই ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। দিনের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই আঘাত হানলেন আকাশ দীপ। আবার বোল্ড। ফিরে গেলেন ওলি পোপ। ইংল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটে ৮২ রান।

পঞ্চম দিনে প্রথম উইকেট (ওলি পোপের) নিয়ে উল্লসিত আকাশ। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
পরের ওভার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ মেডেন নেওয়ার পরেই আবার আঘাত হানলেন আকাশ। দিনের ষষ্ঠ ওভার, আকাশের তৃতীয় ওভার। ওই ওভারের তৃতীয় ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন গত ইনিংসে সেঞ্চুরিকারী হ্যারি ব্রুক। দলের ইনিংসের সঙ্গে মাত্র ১ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ২৩ রানে বিদায় নিলেন ব্রুক।
এর পর অধিনায়ক বেন স্টোকসের সঙ্গে দলের হাল ধরেন গত ইনিংসের আর-এক শতরানকারী জেমি স্মিথ। ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে ৭০ রান যোগ করেন স্টোক্স-স্মিথ। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডের ১৫৩ রানের মাথায় স্টোক্সকে এলবিডব্লিউ করে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন ওয়াশিংটন।
ম্যাচ শেষও করলেন আকাশ
অবশেষে সাফল্য পেলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। এই টেস্টে তাঁর প্রথম উইকেট। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৫৩তম ওভারের প্রথম বলে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের বলে মহম্মদ সিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ক্রিস ওকস। সপ্তম উইকেটে যোগ হয় ৪৬ রান। তার মধ্যে ওকসের অবদান ৭ রান। অর্থাৎ অন্য প্রান্তে অবিচল থেকে তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জেমি স্মিথ। ততক্ষণে সংগ্রহ করেছেন ৯৪ বলে ৭৫ রান। দলের রান তখন ৭ উইকেটে ১৯৯।

উল্লসিত আকাশকে জড়িয়ে ধরেছেন লোকেশ রাহুল। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
স্মিথের সঙ্গী হলেন ব্রাইডন কার্স। দু’জনে রান নিয়ে গেলেন ২২৬-এ। এবার আউট হলেন জেমি স্মিথ। মাত্র ১২ রানের জন্য এই টেস্টে দ্বিতীয় শতরান মিস করলেন। স্মিথকে তুলে নিলেন সেই আকাশ দীপ। ক্যাচ ধরলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডের হার তখন সুনিশ্চিত। একমাত্র প্রকৃতি যদি বাঁচাতে পারেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। প্রকৃতিও যেন বিরূপ ইংল্যান্ডের উপর। আকাশ পরিষ্কার।
কার্স আর কিছুটা শোয়েব বশিরের ব্যাটিং-এর দৌলতে শেষ দু’ উইকেটে ইংল্যান্ডের উঠল ৪৫ রান। প্রথমে বিদায় নিলেন জোশ টাং (২ রান)। তাঁকে তুলে নিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। সিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন টাং। দলের রান তখন ২২৬। শেষ উইকেটে যোগ হল ২৫ রান। ব্রাইডন কার্স (৩৮ রান) ক্যাচ তুলে দিলেন শুভমনের হাতে। ২৭১ রানে শেষ উইকেটের পতন ঘটিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংসে যবনিকা ফেলে দিলেন আকাশ দীপ।