নিউজিল্যান্ড: ২৫১-৭ (ড্যারিল মিশেল ৬৩, মাইকেল ব্রেসওয়েল ৫৩ নট আউট, কুলদীপ যাদব ২-৪০, বরুণ চক্রবর্তী ২-৪৫)
ভারত: ২৫৪-৬ (৪৯ ওভার) (রোহিত শর্মা ৭৬, শ্রেয়স আয়ার ৪৮, মাইকেল ব্রেসওয়েল ২-২৮, মিচেল স্যান্টনার ২-৪৬)
২৫ বছর আগে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারের বদলা? নাকি গত নভেম্বরে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার বদলা? নাকি শুধুমাত্র একটা টুর্নামেন্ট জয়, কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে রবিবারের দুবাইকে?
যাই হোক, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আবার একটা আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিতে নিল টিম ইন্ডিয়া। রোহিতের মুকুটে আরও এক পালক জুড়ল। ফাইনালে জিতল চার উইকেটে। ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হলেন রোহিত শর্মা। ‘প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ হলেন রাচিন রবীন্দ্রন।
কিউয়িদের ব্যাটিংয়ে লাগাম পরালেন স্পিনাররা
রাচিন রবীন্দ্র শুরু থেকেই আগ্রাসী মুডে ছিলেন। লাহোরে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে শতরান করেছিলেন তিনি। তাঁর এ দিনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল সেমিফাইনালের ফর্মটাই নিয়ে চলে এসেছেন। দুরন্ত গতিতে ব্যাট করতে করতে সপ্তম ওভারেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় কিউয়িরা।

কিউয়িদের ইনিংসে ধস নামালেন স্পিনাররা। ছবি ICC ‘X’ থেকে নেওয়া।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের গতিতে লাগাম পরানোর ব্যাপারে ভারতের তুরুপের তাস ছিল চারজন স্পিনার। এদের মধ্যে দু’জন, বরুণ চক্রবর্তী আর কুলদীপ যাদব আসতেই ধীরে ধীরে খেলা ঘুরতে শুরু করে। পরবর্তী ২৫ রানের মধ্যেই তিন উইকেট পড়ে যায় নিউজিল্যান্ডের।
স্পিনারদের চাপে নিউজিল্যান্ডের রানের গতি কমলেও উইকেট পড়ার গতি থমকে যায় এর পরে। ড্যারিল মিশেলকে কেন্দ্র করে নতুন করে ইনিংস গড়তে শুরু করে তারা।
৩৮ ওভারে ব্যাট হাতে নামেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। এর পর স্লগ ওভারে মারতে শুরু করে কিউয়িরা। ভারতের স্পিনাররা এ দিন সফল হলেও ব্যর্থ হয়েছেন দুই পেসার শামি আর হার্দিক। যদিও ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী মিশেলকে ফেরান শামি, তবুও তাঁকেই টার্গেট করে রানের গতি বাড়ায় নিউজিল্যান্ড। ব্রেসওয়েলের দ্রুত গতির অর্ধশতরান নিউজিল্যান্ডের স্কোরকে আড়াইশো পার করিয়ে দেয়।
দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন রোহিত
কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে আড়াইশো রান তাড়া করা চ্যালেঞ্জের। তার ওপরে আবার আট বছর আগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভূত ভারতের ঘাড়ে ছিল, যেখানে পাকিস্তানের রান তাড়া করতে নেমে প্রথম তিন ওভারেই ভারতের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান।

দলকে জয়ের পথে নিয়ে গেল রোহিত-শুভমনের জুটি। ছবি ICC ‘X’ থেকে নেওয়া।
এ বার সেই রকম কিছু যাতে না হয়, সেই দায়িত্বটা অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিলেন। নিজের চেনা ছন্দে এ দিন পাওয়া গিয়েছিল হিটম্যান রোহিতকে। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংই নিউজিল্যান্ডের বোলিংকে ভেঙে দিয়েছিল। রোহিত দ্রুত অর্ধশতরান পেরিয়ে যান। অন্য দিকে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে একটা দিন ধরে রেখেছিলেন শুভমন গিল।
তবে দলগত স্কোর একশো পেরিয়ে যাওয়ার পর আচমকা ম্যাচের রাশ ভারতের হাত থেকে কিছুটা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। প্রথমে গিল আউট হন। ঠিক তার পরের ওভারেই ব্রেসওয়েলের স্পিন বুঝতে না পেরে ফিরে যান বিরাট কোহলি। কিছু পরেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখেন রোহিতও। অধিনায়ক দুর্ধর্ষ খেললেও আস্কিং রেটের একটা চাপ এসে যাওয়ায় ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে আউট হয়ে যান।
দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ভারত যখন কিছুটা চাপে, তখনই সেই চাপ হালকা করার দায়িত্ব নেন অক্ষর পটেল এবং শ্রেয়স আইয়ার। আস্কিং রেট বাড়লেই ছক্কা হাঁকিয়ে দিচ্ছিলেন কেউ না কেউ। ফলত সে ভাবে কোনো চাপ আসেনি ভারতীয় ব্যাটিংয়ে। এরই মধ্যে অক্ষর পটেলের একটা ক্যাচ ফেলে দেন কাইল জেমিসন। ওটাই ম্যাচের চূড়ান্ত টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ম্যাচের ফয়সলা মোটামুটি নিশ্চিত হতেই বোকার মতো একটা শট খেলে নিজের উইকেট দিয়ে আসেন হার্দিক। কিন্তু কেএল রাহুল ঠান্ডা মাথায় ভারতকে বৈতরণী পার করিয়ে দেন।