ভারত: ১৭৬-৭ (বিরাট কোহলি ৭৬, অক্ষর পটেল ৪৭, কেশব মহারাজ ২-২৩, আনরিখ নর্তজে)
সাউথ আফ্রিকা: ১৬৯-৮ (হাইনরিখ ক্লাসেন ৫২, কুইন্টন ডি কক ৩৯, হার্দিক পাণ্ড্য ৩-২০, জসপ্রীত বুমরাহ ২-১৮)
খবর অনলাইন ডেস্ক: জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১৬ রান। হাতে ৬ বল। শেষ ওভারের প্রথম বল। বল করছেন হার্দিক পাণ্ড্য। ব্যাটে ডেভিড মিলার। ১৭ বলে ২১ রান করে ব্যাট করছেন। মিলার যা করার তা-ই করলেন। ছয়ের লক্ষ্যে তুলে মারলেন। বল সীমানা টপকে যাওয়ার মুখে বেশ খানিকটা দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরলেন সূর্যকুমার এবং বল হাতে নিয়ে যাতে সীমানার ওপারে চলে না যান তার জন্য বল ওপরে ছেড়ে দিয়ে সীমানার ওপারে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে এপারে ফিরে এসে ফের ক্যাচ ধরলেন। এক অবিশ্বাস্য ক্যাচ। তখনই বোঝা গিয়েছিল সাউথ আফ্রিকার লড়াই শেষ। তবু একটা শেষ চেষ্টা করছিলেন কাগিসো রাবাদা। হার্দিক পাণ্ড্য ও সূর্যকুমারের যুগলবন্দি তাঁকেও প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দিল ওই ওভারের পঞ্চম বলে। ভারতের ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের জবাবে সাউথ আফ্রিকা থেমে গেল ৮ উইকেটে ১৬৯ করে। ভারত জিতল ৭ রানে।
১৭ বছর পর টি২০ বিশ্বকাপ ভারতের ঘরে এল। এর আগে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল ২০০৭ সালে, মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। সাউথ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ৫ রানে। এবার রোহিত শর্মার নেতৃত্বে কাপ এল ঘরে। ৫৯ বলে ৭৬ রান করে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন বিরাট কোহলি। আর গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে অসাধারণ বল করার জন্য ‘প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ’ হলেন জসপ্রীত বুমরাহ।

‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ বিরাট কোহলি। ছবি আইসিসি-র ‘এক্স’ হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।
টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড
বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে কেনসিংটন ওভালে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট নেয় ভারত। তারা করে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান। টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করল ভারত।
কিন্তু শুরুতেই ঘটেছিল বিপর্যয়। ২৩ রানের মাথায় দুটো উইকেট পড়ে যায়। প্রথমে অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৫ বলে ৯ রান), দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে। ওই ওভারেরই শেষ বলে আউট হন ঋষভ পন্থ, কোনো রান না করেই। দু’জনকে তুলে নিলেন কেশব মহারাজ। রোহিত ক্যাচ দিলেন হাইনরিখ ক্লাসেনকে, আর ঋষভ উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক-কে। এর পর দলের স্কোরের সঙ্গে ১১ রান যোগ হতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সূর্যকুমার যাদব। ৪ বলে ৩ রান করে কাগিসো রাবাদার বলে ক্লাসেনকে ক্যাচ দেন তিনি।
৩ উইকেটে ৩৪। এখান থেকেই দলের হাল ধরলেন বিরাট কোহলি এবং অক্ষর পটেল। দু’জনের জুটিতে বেশ দ্রুত গতিতে রান উঠছিল। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে তাঁরা যোগ করেন ৭২ রান। দুর্ভাগ্য অক্ষর পটেলের। ৩ রানের জন্য অর্ধশত রান থেকে বঞ্চিত হন তিনি। ৩১ বলে ৪৭ রান করে তিনি রান আউট হন। কোহলির সঙ্গী হন শিবম দুবে। ইতিমধ্যে কোহলি তাঁর অর্ধশত রান পূর্ণ করেন। কোহলি-দুবে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ৫৭ রান। ৫৯ বলে ৭৬ রান করে দলের ১৬৩ রানের মাথায় আউট হন বিরাট কোহলি। মার্কো ইয়ানসেনের বলে ক্লাসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কোহলি।
তখনও ভারতের হাতে ছিল ৭ বল। এই ৭ বলে ভারত যোগ করল ১৩ রান। শিবম দুবে ১৬ বলে ২৭ রান করে আনরিখ নর্তজের বলে ডেভিড মিলারকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। রবীন্দ্র জাদেজাও (২ বলে ২ রান) নর্তজের শিকার হন। হার্দিক পাণ্ড্য ২ বলে ৫ রান করে নট আউট থাকেন। ২০ ওভারে ভারত তোলে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান, টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে এক ইনিংসে এত রান আগে কখনও ওঠেনি।

অধিনায়কের আনন্দ। ছবি আইসিসি-র ‘এক্স’ হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।
লড়াই করল সাউথ আফ্রিকা
জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছোতে গিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় সাউথ আফ্রিকা। ৭ রানের মাথায় দলের প্রথম উইকেট পড়ে। আউট হয়ে যান রিজা হেনড্রিক্স (৫ বলে ৪ রান)। তাঁকে বোল্ড করেন জসপ্রীত বুমরাহ। আরও ৫ রান যোগ হতেই আবার পতন। এবার প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আইডেন মার্করাম (৫ বলে ৪ রান)। তাঁকে তুলে নেন অর্শদীপ সিং। উইকেটকিপার ঋষভকে ক্যাচ দেন মার্করাম।
পরিস্থিতি সামাল দেন কুইন্টন ডি কক এবং ট্রিস্টান স্টুব্স। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে তাঁরা যোগ করেন ৫৮ রান। ২১ বলে ৩১ রান করে দলের ৭০ রানের মাথায় অক্ষর পটেলের বলে বোল্ড হন স্টুব্স। ডি ককের সঙ্গী হন হাইনরিখ ক্লাসেন। দু’ জনে চতুর্থ উইকেটের জুটিতে যোগ করেন ৩৬ রান। দলের ১০৬ রানের মাথায় ডি কককে তুলে নেন অর্শদীপ সিং। ক্রিজে এলেন ডেভিড মিলার।
হাইনরিখ ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ ভারতের সমর্থকদের মনে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিলেন। দু’জনে রান পৌঁছে দিলেন ১৫১-য়, ১৬.২ ওভারে। হার্দিক পাণ্ড্যর বলে ঋষভকে ক্যাচ দিয়ে ২৭ বলে ৫২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন ক্লাসেন।
জয়ের জন্য তখন আর দরকার ২৬ রান, হাতে ২২ বল। টি২০ ক্রিকেটে এই টার্গেট মোটেই কঠিন নয়, বিশেষ করে যতক্ষণ ডেভিড মিলার উইকেটে আছেন। বেশ দ্রুত গতিতেই রান উঠছিল। ১৭ ওভারের শেষে রান দাঁড়াল ৫ উইকেটে ১৫৫। ১৮তম ওভারটি করতে এলেন বুমরাহ। চতুর্থ বলে মার্কো ইয়ানসেনকে বোল্ড করলেন। আর ওই ওভারে দিলেন মাত্র ২ রান। পরের ওভার করলেন অর্শদীপ সিং, দিলেন মাত্র ৫ রান। আর বাকি ৬ বল, রান করতে হবে ১৬ রান। বেশ কঠিন কাজ। তবু মিলার রয়েছেন ক্রিজে। ভারতীয়রা চিন্তিত। আর মিলারের তো ছয় মারা ছাড়া উপায় নেই। হার্দিক পাণ্ড্যর প্রথম বলেই তুলে মার। এবং কেল্লা ফতে করলেন সূর্যকুমার যাদব। ৪ বল পরে হার্দিক তুলে নিলেন রাবাদাকেও। সাউথ আফ্রিকার লড়াই শেষ হল।