ভারত ২৫০-৯ (পুজারা ১২৩, রোহিত ৩৭, কামিন্স ২-৪৯)
অ্যাডেলেড: একদিনের ক্রিকেট তিনি খেলেন না, আইপিএলে দল পান না। তাতে কোনো অসুবিধা নেই তাঁর। যেটা খেলেন, অর্থাৎ টেস্ট ক্রিকেট, সেটাই মন দিয়ে খেলেন তিনি আর ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়ে যান। বাকি ব্যাটসম্যানদের মতো এ দিন পুজারাও যদি ব্যর্থ হতেন, তা হলে ভারতের কী দশা হত একবার ভাবুন তো!
ভারতীয় ক্রিকেটের কত সুখস্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অ্যাডেলেড ওভালের নাম। পনেরো বছর আগে এখানেই ঐতিহাসিক টেস্ট জিতেছিল সৌরভের ভারত। চার বছর আগে এখানেই দু’ ইনিংসে জোড়া শতরান করে ভারতকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন বিরাট কোহলি। তাই মনে করা হচ্ছিল দুর্বল অস্ট্রেলিয়াকে হয়তো হেলায় হেরাবে ভারত। কিন্তু হল ঠিক উলটো। অজি বোলারদের দাপটের সামনে ভেঙে পড়ল ভারতীয় ব্যাটিং। ত্রাতা হলেন শুধু চেতেশ্বর পুজারা।
টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে বেশি দেরি করেননি বিরাট। কিন্তু দশ ওভারের মধ্যে দেখা গেল, ভারতের স্কোর হয়ে গিয়েছে তিন উইকেটে ১৯। খোঁচা দিয়ে ফিরে গিয়েছেন অ্যাডেলেডের নায়ক কোহলি স্বয়ং। ক্রিজে তখন আগুন ছোটাচ্ছেন স্টার্ক, হ্যাজেলউড, কামিন্সরা। পরের দশ ওভার কিছুটা থিতু হলেও, কুড়িতম ওভারে আবার পতন। ফিরে গেলেন রাহানে। ভারতের স্কোর হয়ে গেল চার উইকেটে ৪১।
তা-ও যদি সবুজ পিচে পেসারদের দ্বারা পরাস্ত হয়ে ভারতের উইকেট পতন হত, সেই ব্যাপারটা মানা যেত। কিন্তু এখানে তো হল সম্পূর্ণ ভুল শট বাছাই। চার জন ব্যাটসম্যানই স্ট্রোক খেলতে গিয়ে আউট হলেন, ঠিক যেমনটা করলেন রোহিত শর্মাও।
শেষ টেস্ট খেলেছিলেন বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায়। টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তন করে খুবই ভালো খেলছিলেন রোহিত। একদিনের ফর্মটাই টেস্টে নিয়ে চলে এসেছিলেন। স্টার্ককে অবলীলায় ছয়ও মারতে দ্বিধা বোধ করেননি তিনি। কিন্তু ন্যাথান লিয়ঁকে ছয় মারতে গিয়ে খোঁচা লাগল তাঁর ব্যাটে। ক্যাচ ধরলেন অভিষেককারী মার্কাস হ্যারিস। একশো পেরোনোর আগেই পাঁচ উইকেট গেল ভারতের। তার পরেই অবশ্য ছোটোখাটো প্রত্যাবর্তন শুরু করে ভারত।
প্রথমে ঋষভ পন্থ, তার পর অশ্বিন এবং তার পর টেলএন্ডারদের দিয়ে দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলে যান পুজারা। রাহুল দ্রাবিড়ের ঐতিহ্যই সসম্মানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পুজারা। আশেপাশে যা কিছু ঘটুক, স্ট্রোক খেলার যতো প্রলোভন আসুন, তিনি প্রলোভিত হবেন না। নিজের খেলা অর্থাৎ ধৈর্যের খেলা, সঠিক ভাবেই খেলে যাবেন তিনি। এ দিনও সেটাই করলেন। টেস্ট কেরিয়ারের ১৬তম শতরান পেরিয়ে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে করে ফেললেন ৫০০০ টেস্ট রানও।
শতরানের পরে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন পুজারা। তাঁর ব্যাট থেকে বেরোয় ছক্কাও। ভারতকে আড়াইশো রানের গণ্ডি পার করে দেওয়ার পরেই অবশ্য রান আউট হয়ে যান তিনি। এমন ভাবেই খেলছিলেন, যে একমাত্র রান আউট ছাড়া তাঁকে আউট করা যেত না।
যাই হোক, পুজারার এই ইনিংসের সুবাদে মুখ বাঁচল ভারতীয় ব্যাটিং। স্কোরবোর্ডে ২৫০ রানটা এখন যথেষ্ট সম্মানের।