ভারত: ৩৭৬ (রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১১৩, রবীন্দ্র জাদেজা ৮৬, হাসান মাহমুদ ৫-৮৩, তাসকিন আহমেদ ৩-৫৫) এবং ৮১-৩ (শুবমান গিল ৩৩ নট আউট, নহিদ রানা ১-১২)
বাংলাদেশ: ১৪৯ (শাকিব আল হাসান ৩২, মেহদি হাসান মিরাজ ২৭ নট আউট, জসপ্রীত বুমরাহ ৪-৫০, আকাশ দীপ ২-১৯)
চেন্নাই: প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে এগিয়ে থেকেও বাংলাদেশকে ফলো-অন করাল না ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী জয়সোয়াল, রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলিকে খুইয়ে ভারত দ্বিতীয় দিনের শেষে ৩০৮ রানে এগিয়ে। একদিনে ১৭টি উইকেট পড়ল দুই দলের। শেষ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে যে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে তা বলাই বাহুল্য।
ভারত যোগ করল আরও ৩৭ রান
প্রথম দিনে করা ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান হাতে নিয়ে চেন্নাইয়ের মাঠে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে ভারত। কিন্তু বাকি ৪ উইকেটে মাত্র ৩৭ রান যোগ করে তারা অল আউট হয়ে যায়। আশা ছিল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো রবীন্দ্র জাদেজাও তাঁর সেঞ্চুরি পূরণ করবেন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে নিজের স্কোরে আর কোনো রান যোগ না করেই প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়ান জাদেজা। তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
নাজমুল হোসেন শান্তকে ফিরিয়ে দিয়ে উল্লাস সিরাজের। ছবি বিসিসিআইয়ের ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
এরপর পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং আকাশ দীপ। ৩৪৩-৭ থেকে তাঁরা স্কোর নিয়ে যান ৩৬৭-৭-এ। এরপর বাকি ৯ রানে ভারতের বাকি ৩ উইকেট পড়ে যায়। আগের দিন হাসান মাহমুদ যে ভূমিকা পালন করেছিলেন দ্বিতীয় দিনে সেই ভূমিকা পালন করেন তাসকিন। দ্বিতীয় নতুন বলে তাঁর বোলিং সামলাতে পারেননি ভারতের অবশিষ্ট ব্যাটাররা। তাসকিন তুলে নেন আকাশ ও অশ্বিনকে। দুজনেই বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ভারতের শেষ উইকেটটি তুলে নেন গতদিনের বিধ্বংসী বলার হাসান মাহমুদ। জসপ্রীত বুমরাহ হাসানের বলে জাকির হাসানকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। ভারতের মাটিতে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো বোলার টেস্টে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন। ভারত ইনিংস শেষ করে ৩৭৬ রানে। মাত্র ১টি বল খেলে মহম্মদ সিরাজ খাতা খোলার সুযোগ পাননি।
বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল মাত্র ১৪৯ রানে
রবিচন্দ্রন অশ্বিন ছাড়া ভারতের কোনো বোলারকেই সামলাতে পারল না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে এরই মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। তিনি ৫০ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। মাত্র ৪৭.১ ওভার টিকেছিল বাংলাদেশ। ৬ জন ব্যাটার দু’ অঙ্কের রান করলেও সর্বোচ্চ রান শাকিব আল হাসানের – ৩২।
লিটন দাসের ক্যাচ ধরলেন পরিবর্ত খেলোয়াড় ধ্রুব জুরেল (ডানদিকে)। হাত মেলালেন রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে। ছবি বিসিসিআইয়ের ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
শুরু থেকেই ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। মাত্র ৪০ রানে তারা ৫ উইকেট হারায়। ২টি করে উইকেট তুলে নেন বুমরাহ ও সিরাজ এবং ১টি পান আকাশ। প্রথম ওভারের শেষ বলে বুমরাহের বলে বোল্ড হন শাদমান ইসলাম (২ রান)। দলের রান তখন ২। এর পর দলের ২২ রানের মাথায় জাকির হাসানকে (৩ রান) বোল্ড করেন আকাশ। ওই ২২ রানেই পড়ে তৃতীয় উইকেট। খাতা না খুলেই প্রথম বলেই আকাশ দীপের বলে বোল্ড হয়ে যান মমিনুল হক। অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত ৩০ বলে ২০ রান করে মহম্মদ সিরাজের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। দলের রান তখন ৩৬। আর মাত্র ৪ রান যোগ হওয়ার পর বিদায় নেন মুসফিকুর রহিম (৮ রান)। তিনি বুমরাহের বলে কে এল রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান।
এরপর দলের পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন শাকিব আল হাসান এবং লিটন দাস। তাঁরা স্কোর টেনে নিয়ে যান ৯১-এ। যে মুহূর্তে বাংলাদেশের সমর্থকরা মনে করছেন পরিস্থিতি বোধহয় একটু একটু করে ভালো হচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই মোক্ষম ধাক্কাটি দিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। দলের ৯১ রানে ফিরে গেলেন লিটন দাস (২২ রান), পরিবর্ত খেলোয়াড় ধ্রুব জুরেলকে ক্যাচ দিয়ে। আর ৯২ রানে ফিরে গেলেন শাকিব, ঋষভ পন্থকে ক্যাচ দিয়ে।
এর পর হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ এবং নহিদ রানাকে সঙ্গী করে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টা খুব একটা সফল হল না। বুমরাহ তুলে নিলেন হাসান (৯ রান) ও তাসকিনকে (১১ রান) এবং নহিদকে (১১ রান) বোল্ড করলেন সিরাজ। শেষ পর্যন্ত ২৭ রানে নট আউট থাকলেন মিরাজ। ১৪৯ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ।
আউট শাকিব আল হাসান। খুশির হাওয়া ভারতীয় শিবিরে। ছবি বিসিসিআইয়ের ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
ফলো-অন করাল না ভারত
২২৭ রানে লিড, তবু বাংলাদেশকে ফলো-অন করাল না ভারত। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেই ২৮ রানের মধ্যে চলে গেল ২টি উইকেট। আগের ইনিংসের মতোই আবার ব্যর্থ অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এবার করলেন ৫ রান। ফিরে গেলেন তাসকিনের বলে জাকিরকে ক্যাচ দিয়ে। এরপর বিদায় যশস্বীর। প্রথম ইনিংসের মতো খেলা দেখাতে পারলেন না তিনি। দলের ২৮ রানের মাথায় নহিদ রানার বলে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন। তাঁর স্কোর মাত্র ১০ রান।
শুবমান গিল আর বিরাট কোহলি দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু আরও ৩৯ রান যোগ হতেই মেহেদি হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন কোহলি (১৭ রান)। দিনের শেষে ভারত ৮১-৩। ব্যাট করছেন শুবমান গিল (৩৩ রান) এবং ঋষভ পন্থ (১২ রান)। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে ভারত এগিয়ে রয়েছে ৩০৮ রানে।
আরও পড়ুন