অস্ট্রেলিয়া: ১৯৪-৫ (ওয়েড ৫৮, স্মিথ ৪৬, নটরাজন ২-২০)
ভারত: ১৯৫-৪ (ধাওয়ান ৫২, পাণ্ড্য ৪২, সোয়েপসন ১-২৫)
খবরঅনলাইন ডেস্ক: এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায় দেখ। একেই বোধহয় বলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। একদিনের সিরিজের প্রথম দু’টি ম্যাচ জিতে সিরিজ দখল করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারত টি২০ সিরিজে তার বদলা নিল। তারাও প্রথম দু’টি ম্যাচ টি২০ সিরিজ দখল করল। রবিবার সিডনিতে অনুষ্ঠিত এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারত জিতল ৬ উইকেটে। আগামী বুধবার সিডনিতে ১০০ শতাংশ দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচ নিয়মরক্ষার ম্যাচ হয়ে দাঁড়াল।
টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। এ দিনের ম্যাচে অজিদের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পড়ে ওপেনার ম্যাথু ওয়েডের কাঁধে। অধিনায়কোচিত ভঙ্গিমায় ঝড়ের গতিতে শুরু করেন ওয়েড। প্রথম ওভারেই দীপক চাহর ১৩ রান দিয়ে বসেন। এর মধ্যে তিনটি চার আসে ওয়েডের ব্যাট থেকে।
ভারতের হয়ে অন্য প্রান্ত থেকে বোল ওপেন করার দায়িত্ব বর্তায় অফ স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের উপর। এই ওভারে ওয়েড একটি ছয় মারেন। দু’ ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার রান উঠে যায় ২৩।
তৃতীয় ওভারে দীপককে আর সাহস করে বল দিতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দীপকের জায়গায় বল করতে আসেন আরেক পেসার ডানহাতি শার্দূল ঠাকুর। তাতেও যে খুব লাভ হল ভারতের তা নয়। শার্দূল ৮ রান দেন। চতুর্থ ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দর ১৫ রান দিয়ে বসেন। ফলে প্রথম চার ওভারেই অস্ট্রেলিয়া তুলে ফেলে বিনা উইকেটে ৪৬।
পঞ্চম ওভারে ভারতের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। প্রথম ওভারেই চমক দেখান থঙ্গরাসু নটরাজন। তুলে নেন ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গী ডার্সি শর্টকে। শ্রেয়স আইয়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৯ বলে ৯ রান করে বিদায় নেন শর্ট। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে ভারতের হয়ে প্রথম উইকেট তুলে নেন নটরাজন।
ওয়েডের সঙ্গী হন স্টিভ স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার রান ওঠার গতিতে কিছুটা লাগাম পড়ে। প্রথম চার ওভারে ৪৬ রান উঠলেও পরের চার ওভারে ওঠে ২৮ রান। ইতিমধ্যে অবশ্য নিজের ৫০ রান পূর্ণ করেন ওয়েড। চাহারের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে চার রান করে ৫০ টপকে যান তিনি। কিন্তু সপ্তম ওভারের শেষ বলে নিজের উইকেটটা ভারতকে উপহার দিয়ে আসেন ওয়েড। স্মিথ আর নিজের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান ওয়েড ৩২ বলে ৫৮ রান করে। দল ২ উইকেটে ৭৫।
স্মিথের সঙ্গী হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। রান ওঠার গতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। যজুবেন্দ্র চহলের ওভারের দ্বিতীয় বলে বিশাল একটা ছক্কা হাঁকান ম্যাক্সওয়েল। ১০ ওভারের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ওঠে ২ উইকেটে ৯১।
ম্যাক্সওয়েল মাত্র ১৩টি বল খেলে ২২ রান করে ইনিংসের ত্রয়োদশ ওভারে নেন। শার্দূল ঠাকুরের বলে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ওভারে প্রায় গড়ে ১০ রান তোলার গতিতে ব্যাট করে যেতে থাকেন স্মিথ ও হেনরিকেস। মাত্র ৪ রানের জন্য অর্ধশত রান মিস করে স্মিথ যখন বিদায় নেন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৪ উইকেটে ১৬৮ রান। স্মিথের উইকেট পান চহল।
শেষ ১৩ বলে অস্ট্রেলিয়া তোলে ২৬ রান। ১৮ বলে ২৬ রান করে নটরাজনকে উইকেট দিয়ে হেনরিকেস বিদায় নেন। মাত্র ৭ বলে ১৬ রান করে নট আউট থাকেন স্টয়নিস। হেনরিকেস আউট হওয়ার পরে সামস্ নামেন। ৩ বলে ৮ রান করে নট আউট থাকেন তিনি। ভারতকে ১৯৫ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। বোলিং-এ নটরাজন বেশ দাগ কাটেন। নির্ধারিত ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। বোলিং-এ ঝুলিয়েছেন দীপক চাহর, ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৮ রান।
শুরুটা ভারতের বেশ ভালোই হয়। একদিনের সিরিজে শেষ ম্যাচ এবং টি২০ সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতে ভারত যে বেশ চেগে রয়েছে তার প্রমাণ শুরু থেকেই দিতে থাকে কোহলিরা।
ভারতের হয়ে ব্যাটিং শুরু করেন কে এল রাহুল এবং শিখর ধাওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার মতোই তাঁরাও ঝড়ের গতিতে রান তুলতে থাকেন। ভারতের রান তোলার ঝড় আটকাতে অস্ট্রেলিয়া প্রথম চার ওভারেই চার বোলারকে বল করতে পাঠায় – ড্যানিয়েল স্যামস্, সিন অ্যাবট, অ্যান্ড্রু টাই এবং গ্লেম ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু তাতে ভারতের রান আটকানো যায়নি। প্রথম চার ওভারে ওঠে ৪৩ রান।
অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম ওভারে রাহুল ও ধাওয়ানকে ১৩ রান দেন সিন অ্যাবট। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ ওভারে সাফল্য আসে অস্ট্রেলিয়ার। অ্যান্ড্রু টাইকে উইকেট দিয়ে বিদায় নেন রাহুল ২২ বলে ৩০ রান করে। ভারত তখন ১ উইকেটে
ধাওয়ানের সঙ্গী হন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। রান ওঠার গতিতে ঢিলে দেননি ধাওয়ান ও কোহলি। মিচেল সোয়েপসনের ওভারে ধাওয়ান নিজের ৫০ রান পূর্ণ করেন। কিন্তু পরের ওভারেই নিজের উইকেট খুইয়ে বসেন ধাওয়ান। অ্যাডাম জাম্পার বলে সময়ের ভুলচুক করে ফেলেন ধাওয়ান। ডিপ মিড উইকেটে সোয়েপসনকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ধাওয়ান। দলের রান তখন ১১.২ ওভারে ২ উইকেটে ৯৫ রান।
বিরাটের সঙ্গী হন সঞ্জু স্যামসন। সঞ্জু বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে না থাকলেও বল নষ্ট করেননি। ১০ বলে ১৫ রান করে তিনি যখন সোয়েপসনের বলে স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় হন তখন ভারত ৩ উইকেটে ১২০।
বিরাটের সঙ্গী হন হার্দিক পাণ্ড্য। দু’ জনে চালিয়ে খেলতে থাকেন। কিন্তু ভারতের কাছে আবার ধাক্কা। ১৬.১ ওভারে বিরাট স্যামসের বলে ওয়েডকে ক্যাচ দিয়ে।
ভারত তখন লক্ষ্য থেকে ৪৬ রান দূরে, হাতে ২৩ বল। পাণ্ড্যর সঙ্গী শ্রেয়স আইয়ার। দু’ জনে আশা জাগিয়ে খেলতে থাকেন। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৪ রান। স্যামসের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে পরের বলে ৬ নিলেন পাণ্ড্য। দরকার ৪ বলে আরও ৮ রান। তৃতীয় বল ডট হলেও চতুর্থ বলে ৬ মেরে ভারতের হয়ে সিরিজ কবজা করে নিলেন হার্দিক পাণ্ড্য। ২২ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। সঙ্গী শ্রেয়স করলেন ৫ বলে ১২। ভারতের ৪টি উইকেট ভাগাভাগি করে নিলেন অস্ট্রেলিয়ার ৪ বোলার – সোয়েপসন, জাম্পা, স্যামস্ ও টাই।
দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ ৬ উইকেটে জিতে একদিনের সিরিজ হারের বদলা নিল ভারত।