ওয়েবডেস্ক: আইপিএলের নিলামে তাদের সব থেকে সফল অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে যখন ধরে রাখার পথে হাঁটল না কলকাতা নাইটরাইডার্স, তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল। অনেকেই অবাক হয়েছিলেন, কিন্তু এই ফ্রাঞ্চাইসি এই কাণ্ড আগেও করেছে।
তিনটে খারাপ সেশনের পরে ২০১১-তে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। এ বারও সেই পথেই হেঁটেছে তারা। গত তিন বছর ঘরে কোনো ট্রফি আসেনি তাই গম্ভীরকে আর ধরে রাখার কোনো প্রয়োজন মনে করেনি কেকেআর। নতুন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে কার্তিকের প্রদর্শন ভালোই।
গত বছর কেকেআরের কোর গ্রুপ যাঁদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল, অর্থাৎ ক্রিস লিন, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, রবীন উথাপ্পা, পীযূষ চাওলা এবং কুলদীপ যাদব, তাঁরা এখনও দলেই রয়েছেন। মিচেল জনসন, বিনয় কুমারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে শুবমান গিল, কমলেশ নাগরকোটি এবং শিবম মাভির তারুণ্য এখন দলে। অন্য দিকে গত বছর মুম্বইয়ে খেলার পরে এ বার কেকেআরে এসেছেন নীতীশ রানা। সেই সঙ্গে দলে ঢুকেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিগ হিটার ক্যামেরন ডেলপোর্টও। মাত্র ১৯ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক ছোটো দল এ বার কেকেআরের। তাই ট্রফি তোলার জন্য যেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হল খেলোয়াড়দের চোটমুক্ত থাকা।
কিন্তু আইপিএল শুরু হওয়ার আগেই ধাক্কা খেয়েছে কেকেআর শিবির। চোটের জন্য বাইরে চলে গিয়েছে অন্যতম দামী ক্রিকেটার, এবং কেকেআরের বোলিং-এর আসল স্তম্ভ মিচেল স্টার্ক। অন্য দিকে চোট সারিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন লিন। নারিনও খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। পিএসএল-এ তাঁর বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক ঠেকেছে আম্পায়ারদের। সুতরাং অনেক নিয়ন্ত্রণে বল করতে হবে তাঁকে। তবে স্টার্কের বদলে ইংল্যান্ডে টম কুর্যানকে পাওয়ায় এখন কিছুটা স্বস্তিতে দল।
ভালো দিক
কিছু দিন আগে সৌরভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আপনার চলে যাওয়ার পর এমন কী হল যে কেকেআরের ভাগ্য ঘুরে গেল?” সৌরভের একটাই উত্তর ছিল, “সুনীল নারিন।”
এত দিন তো বল হাতে নারিন ভেল্কি দেখাতেনই, কিন্তু ২০১৭ থেকে ব্যাট হাতেও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তিনি। টি-২০ ক্রিকেটে তাঁর বোলিং ইকনমি রেট ৫.৯১। অন্য দিকে ৪৭ ইনিংসে ব্যাট হাতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫০। গত বছর বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম অর্ধশতরান করার রেকর্ডও করেন নারিন।
অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন শুবমান গিল। অনুর্ধ্ব ১৯ স্তরের একদিনে আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁর গড় ১০৪-এর একটু ওপরে। কেকেআরের হয়ে ভালো কিছু করতে এ বার মুখিয়ে থাকবেন তিনি।
গত বছর আইপিএলের পরে আন্তর্জাতিক টি-২০-তে কার্তিকের গড় ৮৪.৫০। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনি কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা তো আমরা সবাই দেখেছি।
খারাপ দিক
চোটের জন্য বাইরে চলে গিয়েছেন স্টার্ক। অন্য দিকে সাম্প্রতিক কালে মিচেল জনসনের ফর্মও বিশেষ ভালো নয়। বিনয় কুমারও ইদানীং আইপিএলে বিশেষ অবদান রাখতে পারছেন না। স্টার্কের বদলি টম কুর্যান কখনও ভারতে খেলেননি। মাভির এবং নাগরকোটির বলে গতি রয়েছে কিন্তু ভারতীয় পিচে তাঁদের অবদান এখনও কেউ দেখেনি।
অন্য দিকে কেকেআরের রিজার্ভ বেঞ্চও বিশেষ শক্তিশালী নয়। শুবমান এবং নীতীশ রানা চোট পেলে তাদের বদলি করা যেতে পারে ইশাঙ্ক জাগ্গি এবং অপূর্ব ওয়াংখেড়েকে দিয়ে। কিন্তু যদি লিন, উথাপ্পা, জনসন, কার্তিকরা চোট পান তা হলে কী হবে সেটা একটা বড়ো প্রশ্ন।
পরিকল্পনা
ঘরের ম্যাচ হোক বা বাইরের, রান তাড়া করতেই পছন্দ করবে কেকেআর। লিন এবং নারিনকে দিয়ে ওপেন করিয়ে চেষ্টা করবে প্রথম ছ’ওভারের মধ্যেই ম্যাচের সারমর্ম তৈরি করে ফেলতে। বেশির ভাগ দিনই দু’টো করে স্পিনার খেলাবে কেকেআর। নারিনের জায়গা পাকা। দ্বিতীয় জায়গার জন্য লড়াই হবে পীযূষ চাওলা এবং কুলদীপ যাদবের মধ্যে। তবে চেন্নাইয়ের মতো স্পিন সহায়ক পিচে আরও একজন বাড়তি স্পিনার খেলাতে পারে তারা।
আইপিএলে এখনও পর্যন্ত নিজেদের ঘরের মাঠে খেলা ম্যাচগুলির মধ্যে ৬৩ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে কেকেআর। সেই রেকর্ড বজায় রাখতেই চাইবে তারা।
সম্ভাব্য একাদশ
১) ক্রিস লিন ২) সুনীল নারিন ৩) রবীন উথাপ্পা ৪) নীতীশ রানা ৫) দীনেশ কার্তিক ৬) শুবমান গিল ৭) আন্দ্রে রাসেল ৮) পীযূষ চাওলা ৯) মিচেল জনসন ১০) কুলদীপ যাদব ১১) কমলেশ নাগরকোটি/ শিবম মাভি
দলের মস্তিস্ক
জাঁক কালিস (প্রধান কোচ), সাইমন ক্যাটিচ (সহকারী কোচ), হিথ স্ট্রিক (বোলিং কোচ), মার্ক বাউচার (উইকেট কিপিং কোচ), আন্দ্রু লিপাস (ফিজিও), আদ্রিয়ান লি রু (ট্রেনার)।
সৌজন্য: ইএসপিএন ক্রিকিনফো