ভারত: ৩৩৯-৬ (রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১০২ নট আউট, রবীন্দ্র জাদেজা ৮৬ নট আউট, হাসান মাহমুদ ৪-৫৮)
চেন্নাই: ভারতকে গভীর বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে অশ্বিন ও জাদেজা ব্যাট করছেন যথাক্রমে ১০২ এবং ৮৬ রানে। খেলা হচ্ছে চেন্নাইয়ের মাঠে। আর সেই মাঠেই খেল দেখালেন চেন্নাইজাত অশ্বিন এবং চেন্নাই সুপার কিং-এর রবীন্দ্র জাদেজা। তাদের অপরাজিত ১৯৫ রানের পার্টনারশিপের দৌলতে ভারত এখন ম্যাচে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।
ঠিক দুদিন আগেই ৩৮ বছর পূর্ণ করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিন প্রমাণ করলেন এই বয়সেও কতটা সক্রিয় তিনি। এদিনের সেঞ্চুরি নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ৬টা সেঞ্চুরি করলেন আশ্বিন। আর ৮ নম্বরে নেমে সর্বাধিক সেঞ্চুরি করার তালিকায় তিনি রইলেন দুনম্বরে। ৮ নম্বরে নেমে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪। তাঁর আগে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেত্তোরি। তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৫।
শুরুতেই জোর ধাক্কা বাংলাদেশের
বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। এবং সেই সিদ্ধান্তের ফায়দাও তোলে তারা। লাইন আর লেংথ মেনে চলা হাসান মাহমুদের সিম বলের কাছে ভিরমি খান ভারতীয় ব্যাটাররা। মাত্র ৩৪ রানের মধ্যে বিদায় নেন দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৬ রান), শুবমান গিল (০ রান) এবং বিরাট কোহলি (৬ রান)। বিধ্বংসী হাসান মাহমুদের মোকাবিলাই করতে পারলেন না ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটাররা। গিল আর কোহলি উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দিলেন। আর রোহিত ক্যাচ দিলেন সেকেন্ড স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে। সেইসময় হাসান মাহমুদের বোলিং ফিগার ছিল – ৪.২-২-৬-৩ অর্থাৎ ৪.২ ওভারে ২টি মেডেন। মাত্র ৬ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
ভারতের প্রাথমিক পতন কিছুটা আটকানোর চেষ্টা করলেন যশস্বী জয়সোয়াল আর ঋষভ পন্থ। রোহিতের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন যশস্বী। নিজের উইকেট বাঁচিয়ে অন্য প্রান্তে সতীর্থদের একে একে প্রস্থান দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত ঋষভকে সঙ্গী পেয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেন যশস্বী। ঋষভও যতটা সম্ভব সাথ দিয়েছেন যশস্বীকে।
ভারতের এদিনের ইনিংসের দুই কারিগর দুই রবি – জাদেজা ও অশ্বিন। ছবি বিসিসিআই-এর ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
একটু একটু করে ভারত বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল, ঠিক তখন আবার আঘাত মাহমুদের। গিল-কোহলির মতো সেই উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিলেন ঋষভ, ৩৯ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন। দলের রান তখন ৯৬। মাহমুদের বোলিং ফিগার দাঁড়াল – ৮.৩-৩-১৮-৪।
ঋষভ চলে যেতেই আবার ধাক্কা। আরও ২টো উইকেট চলে গেল ১৪৪ রানের মধ্যে। ফিরে গেলেন কে এল রাহুল (১৬ রান) এবং যশস্বী জয়সোয়াল। এই ১৪৪ রানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রান যশস্বীরই। ঠান্ডা মাথায় খেলে তিনি নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। ১১৮ বলে তিনি করেন ৫৬ রান। ছিল ৯টা চার। নাহিদ রানার বলে শাদমান ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন। রাহুলকে তুলে নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
মোড় ঘুরিয়ে দিলেন অশ্বিন-জাদেজা
রাহুল ফিরে যেতেই নেমেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। আর যশস্বী ফিরে যেতেই প্রকৃত অর্থে ঘরের মাঠে খেলতে নামলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দলের রান তখন ১৪৪-৬। শুরু হল এক অবিশ্বাস্য খেলা। অশ্বিন আর জাদেজার খেলা দেখে মনেই হচ্ছিল না, এই একটু আগেই এই দলেরই প্রথম দিকের ব্যাটাররা বাংলাদেশের বোলারদের বিরুদ্ধে থরহরি কম্পমান ছিলেন। মাথা ঠান্ডা করে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলেন তাঁরা। শুধু উইকেট ধরে রাখাই নয়, মারার বলকে মেরে সীমানার বাইরে পাঠাতে কসুর করলেন না অশ্বিন আর জাদেজা। তবে জাদেজার তুলনায় বেশি ধ্বংসাত্মক ছিলেন অশ্বিন।
দিনের শেষে ভারতের যে স্কোর হল, তাতেই প্রমাণ কতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন অশ্বিন এবং জাদেজা। দুজনে অপরাজিত থেকে দলের স্কোর টেনে নিয়ে গেলেন ৩৩৯-৬-এ। টেস্ট ক্রিকেটে একদিনে ৩০০-র বেশ কিছু বেশি রান ওঠা এটাই প্রমাণ করেন অশ্বিন আর জাদেজা কতটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন, কতটা সহজ ছিলেন, কতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন।
ইনিংসের ৭৮তম ওভারের তৃতীয় বলে শাকিব আল হাসানকে মিড উইকেট দিয়ে পাঠিয়ে নিজের শতরান পূর্ণ করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিন ১১২ বলে ১০২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাঁর ১০২ রানে রয়েছে ১০টা চার এবং ২টো ছয়। আর জাদেজা শতরান থেকে ১৪ রান দূরে রয়েছেন। তিনি করেন ১১৭ বলে ৮৬ রান। জাদেজার ৮৬ রানেও রয়েছে ১০টা চার এবং ২টো ছয়।