ভারত: ২৯৬-৭ (রাহুল ১১২, শ্রেয়স ৬২, বেনেট ৪-৬২)
নিউজিল্যান্ড: (নিকোলস ৮০, গাপ্টিল ৬৬, চাহল ৩-৪৭)
টাউরাঙ্গা: হোয়াইটওয়াশের বদলে হোয়াইটওয়াশ! মাত্র কিছু দিন আগেই যে দলটা তার প্রতিপক্ষকে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েছিল, আজ সেই প্রতিপক্ষের কাছে ০-৩ ব্যবধানে সিরিজ হাতছাড়া হল তাদের! কিছুটা আকস্মিক হলেও এটাই সত্যি, যে কিউয়িভূমে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় এখন বিরাটবাহিনী।
গত কয়েক বছর বাঘা বাঘা একদিনের দলকে কাত করে দিয়ে এসে নিউজিল্যান্ডের কাছে এ ভাবে আকস্মিক হেরে যাবে, সেটা কস্মিনকালেও ভাবতে পারেনি টিম বিরাট। আর সেই ধাক্কা যে তারা এখনও সামলে উঠতে পারেনি, সেটা এ দিনের ম্যাচেও বোঝা গেল।
এই সিরিজে, বিশেষ করে দ্বিতীয় আর এ দিনের ম্যাচে ভারতীয় টপ অর্ডারকে যে রকম নড়বড়ে দেখিয়েছে, ইদানীংকালে তা কখনও দেখা যায়নি। এ দিনও শুরুতেই ব্যর্থ হলেন ময়াঙ্ক অগ্রবাল। ময়াঙ্কের বয়স বাড়ছে, ফলে রোহিত আর শিখর ধাওয়ান সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি আর একদিনের দলে ফিরবেন কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
পুল করে একটা ছয় মারলেও, ব্যাট-বলে করতে এ দিন কিঞ্চিৎ অস্বস্তি বোধ করছিলেন বিরাট কোহলিও। আর দুর্দান্ত শুরু করেও অর্ধশতরান থেকে দশ রান দূরে রান আউট হয়ে গেলেন পৃথ্বী শ। ফলে ম্যাচ শুরুর হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই স্কোরবোর্ড জানাল ভারত ৬২-৩।
ভয় ধরতে শুরু করেছে, তা হলে কি ৫০ ওভার শেষ হওয়ার আগে আরও একবার অল আউটের লজ্জা ভারতকে পেতে হবে?
ঠিক এই সময়ে ক্রিজে নামলেন কেএল রাহুল। জুটি বাঁধলেন কিছুক্ষণ আগেই ব্যাট করতে আসা শ্রেয়স আইয়ারের সঙ্গে। দু’ জনেই এই সিরিজে দারুণ ফর্মে রয়েছেন। এ দিন আরও একবার নিজেদের সেরা ফর্মের ঝলক দেখালেন তাঁরা।
দলের আদর্শ কম্বিনেশনের জন্য প্রিয় ওপেনিংয়ের জায়গাটি ছেড়ে দিয়ে পাঁচ নম্বরে নেমে আসতে হয়েছে কেএল রাহুলকে। কিন্তু এই জায়গায় নেমে নিজের খেলা আরও খুলে গিয়েছে তাঁর।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচে এই পাঁচ নম্বরেই ৮৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন রাহুল। এ বার করলেন দুর্ধর্ষ একটা শতরান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এখনও পর্যন্ত রাহুলের সেরা শতরান।
এ দিন তাঁর কেরিয়ারের চতুর্থ শতরানটি করেন রাহুল। কিন্তু এটাই সেরা। কারণ বাকি ইনিংসগুলো এসেছিল ওপেনার হিসেবে, যখন কোনো চাপ তাঁর ওপরে ছিল না। কিন্তু এই ইনিংসে একাধারে ভারতীয় ব্যাটিংটাকে থিতু করার দায়িত্ব যেমন ছিল তাঁর কাঁধে, তেমনই ছিল রানের গতি বাড়ানোরও। সবই তিনি পালন করেছেন সফলতার সঙ্গে।
বিপদে মুখে পড়েও রাহুলের এই ইনিংসের সৌজন্যে তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যায় ভারত।
যদিও এই রান কোনো ভাবেই নিরাপদ ছিল না ভারতের কাছে। কারণ ঝড়ের গতিতে ইনিংস শুরু করেছিলেন মার্টিন গাপ্টিল।
প্রথম একদিনের ম্যাচে সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি রান তাড়া করে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। ঠিক সেই ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি চোখে পড়ছিল এ দিনও। নতুন বলে উইকেট তুলতে ব্যর্থ ভারতীয় বোলাররা। নিজের সেরা ফর্মের ধারেকাছে পাওয়া যাচ্ছে না জসপ্রীত বুমরাহকে।
আর এই সুযোগে ভারতের টুঁটি চেপে ধরেছিলেন কিউয়ি ওপেনাররা। গাপ্টিল আউট হওয়ার পরেও রানের গতিতে কোনো লাগাম পড়েনি। উলটে গাপ্টিলের ছেড়ে যাওয়া জায়গায় ম্যাচ ধরে ফেলেন হেনরি নিকোলস।
আরও পড়ুন পাঁচ নম্বরে নেমে দুর্ধর্ষ ইনিংস কেএল রাহুলের
নিকোলস আর বাকি ব্যাটসম্যানদের সৌজন্যে ম্যাচ যখন ভারতের হাত থেকে কার্যত বেরিয়ে যাচ্ছে তখনই প্রত্যাবর্তন করেন বোলাররা। বিশেষ করে যজুবেন্দ্র চাহল। তাঁর আর রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণি সামলাতে হিমশিম খায় নিউজিল্যান্ড। ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরে আসে ভারত।
যদিও সেই ফিরে আসা ছিল অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। ষষ্ঠ উইকেটে ল্যাথাম আর ডে’গ্র্যান্ডহোমের জুটি নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। দু’শোর ওপরে স্ট্রাইক রেট রেখে অর্ধশতরানের দুর্ধর্ষ একটা ইনিংস খেলেছেন ডে’গ্র্যান্ডহোম।
টি-২০ সিরিজ ছিল ভারতের, একদিনের সিরিজ নিল নিউজিল্যান্ড। চূড়ান্ত লড়াই এখনও বাকি। সাদা পোশাকের সেই লড়াই শুরু হবে আর দশ দিন পর। সেই লড়াইটাই ঠিক করে দেবে টি-২০ সিরিজ শেষের হাসিটা বিরাটদের মুখে থাকবে কি না।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।