বাংলার ফুটবলের আর-এক কিংবদন্তি অলিম্পিয়ান বদ্রু ব্যানার্জি প্রয়াত, শোকস্তব্ধ ফুটবলমহল

0

কলকাতা: না-ফেরার দেশে চলে গেলেন বদ্রু ব্যানার্জি। শনিবার ভোরে এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। প্রাক্তন অলিম্পিয়ান তথা প্রিয় ফুটবলারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ফুটবলমহল।

আসল নাম সমর বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু ময়দান তাঁকে বেশি চিনত বদ্রু ব্যানার্জি নামেই। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ২৭ জুলাই তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অ্যালজাইমার্স, উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যাজোটেমিয়া – নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। দিন দিন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছিল।

হাসপাতালে তাঁর জন্য আলাদা মেডিক্যাল বোর্ডও তৈরি করা হয়েছিল। সিটি স্ক্যান করার পর দেখা যায় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর পর তাঁকে এম আর বাঙ্গুর নিউরোসায়েন্সে স্থানান্তরিত করা হয়। গত কয়েক দিন ধরেই সঙ্কটজনক অবস্থায় ছিলেন তিনি। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত প্রায় মাসখানেকের লড়াইয়ের অবসান হল। ফুটবলজগৎকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন বদ্রু ব্যানার্জি। অমল দত্ত, পিকে ব্যানার্জি, চুণী গোস্বামী, সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সনৎ শেঠের পর বাংলার ফুটবল হারাল আরও এক কিংবদন্তিকে।

ডাক্তারি পড়া ছেড়ে ফুটবলে

১৯৩০ সালের ৩০ জানুয়ারি হাওড়ার বালিতে বদ্রুর জন্ম। পিতৃদত্ত নাম সমর। বাড়িতেই ছিল ফুটবলের পরিবেশ। রোজ বিকেলে বাড়িতে আড্ডা বসত। আর সেই আড্ডার বিষয় ছিল ফুটবল। ঘুরে ফিরে আসত মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান স্পোর্টিং নামগুলো। আর ছোট্ট বদরু কানখাড়া করে সে সব নাম শুনত। তবে পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা শশাঙ্কশেখর ব্যানার্জি খুব কড়া ছিলেন। তবু ছেলেকে ফুটবল মাঠে যাওয়া থেকে ঠেকাতে পারেননি।

খুব কম বয়স থেকেই বদ্রু বালি হিন্দু স্পোর্টিং ক্লাবে খেলতে যেতেন। কখনও কখনও বালি ওয়েলিংটন ক্লাবেও যেতেন। কলকাতা ময়দানে খেলা শুরু করেন ১৮ বছর বয়সে। যোগ দেন কলকাতা ফুটবল লিগের তৃতীয় ডিভিশনের দল ‘বালি প্রতিভা’য়। ‘বালি প্রতিভা’য় এক বছর খেলেই বদ্রু নজরে পড়ে যান বড়ো ক্লাবের চোখে। তাই পরের বছরেই চলে আসেন বিএনআর দলে। তিন বছর তিনি বিএনআর-এ ছিলেন।

তিন বছর পর মোহনবাগান তুলে নেয় বদ্রুকে। ১৯৫২-তে শুরু করেন মোহনবাগানে খেলা। সবুজ-মেরুন দলে তাঁর ফুটবল-কেরিয়ারের আটটি বছর কেটেছে। ক্লাবের হয়ে প্রায় সব ট্রফি এনে দিয়েছেন।

বাড়ির চাপে ফুটবল খেলার ফাঁকেই বদ্রুকে ভর্তি হতে হয়েছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। বেশ টানাপোড়েনে ছিলেন বদ্রু। বুঝেছিলেন ডাক্তারি আর ফুটবল একসঙ্গে চালানো যাবে না। তাঁকে একটা বেছে নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ফুটবলকেই বেছে নেন তিনি। তিন বছর পড়ার পর ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেন তিনি। সে বছরেই তিনি ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পেয়েছিলেন।

মোহনবাগানের হয়ে সাফল্য  

যে বছর বদ্রু মোহনবাগানে আসেন অর্থাৎ সেই ১৯৫২-তেই রাজস্থান ক্লাবের সঙ্গে যুগ্মভাবে আইএফএ শিল্ড জিতে নেয় বাগান। ১৯৫৩-এর মরশুমে বাগানের প্রথম ডুরান্ড কাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বদ্রু।

১৯৫৪ সালে কলকাতা ফুটবলে প্রথম ডাবল করে সবুজ-মেরুন, কলকাতা ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং জিতে নেয় আইএফএ শিল্ড। এরই মধ্যে ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দলে জায়গা পাকা করে নেন বদ্রু ব্যানার্জি।

সে বছর ছিল মোহনবাগানে বদ্রুর চতুর্থ মরশুম। ১৯৫৫ সাল, বাগানের মুকুটের আর-একটা পালক যুক্ত হয়। প্রথম রোভার্স কাপ জেতে মোহনবাগান। এই জয়ের পথে ফাইনালে কলকাতারই দল মহমেডান স্পোর্টিংকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগান। তার মধ্যে ১টা গোল ছিল বদ্রুর। সে বছরই বদ্রু বাংলার হয়ে খেলে সন্তোষ ট্রফি ঘরে তোলেন। বাংলা তিন বছরে দু’ বার ওই ট্রফি জেতে।

মোহনবাগানের সঙ্গে ৮টি মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে চারটে গোল রয়েছে কিংবদন্তি ফুটবলারের। মহমেডানের বিরুদ্ধে করেন পাঁচ গোল। মোহনবাগানের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, হংকং এবং সিঙ্গাপুরে সফরেও গিয়েছিলেন বদ্রু ব্যানার্জি। সেই সফরে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ছিলেন তিনি।

খেলোয়াড় থেকে কোচ

১৯৫৯-এর মরশুম শেষ হতেই মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ফুটবলারের দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। চলে আসেন কোচিং-এর দায়িত্বে। বড়িশা স্পোর্টিং ক্লাবে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

একই সঙ্গে সন্তোষ ট্রফিতেও বাংলা দলের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পান বদ্রু ব্যানার্জি। তাঁর কোচিং-এ ১৯৬১-তে বাংলা সন্তোষ ট্রফি জেতে। বদ্রু ব্যানার্জি এক বিরল সম্মানের অধিকারী। খেলোয়াড় হিসাবে এবং কোচ হিসাবে বাংলার ঝুলিতে সন্তোষ ট্রফি এনে দিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় ফুটবল দলের নির্বাচকও ছিলেন বদ্রু ব্যানার্জি। মানস ভট্টাচার্য এবং বিদেশ বসুর মতো ফুটবলারদের তিনিই তুলে আনেন। ২০০৯ সালে মোহনবাগান রত্ন পান।

আরও পড়তে পারেন

মিলল না জামিন! আরও কত দিন সিবিআই হেফাজতে অনুব্রত মণ্ডল

আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই গ্রেফতার হবেন মণীশ সিসোদিয়া! কী কারণে, সেটাই জানালেন দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী

শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখার অনুরোধ ভারতকে, মন্ত্রীর মন্তব্যে তোলপাড় বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার পর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ভুটান! ঝুঁকি এড়াতে জারি নিষেধাজ্ঞা

   

বিজ্ঞাপন