বিশ্বকাপ ২০০২: মরক্কোকে হারিয়ে পর পর দু’ বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স, মুখোমুখি আর্জেন্তিনার

0
গোল করার পরে থিও হের্নান্ডেজ। ছবি সৌজন্যে fifa.com

ফ্রান্স ১ (হের্নান্ডেজ, মুয়ানি) মরক্কো ০

কাতার: ফাইনালে হেরেও ইতিহাস সৃষ্টি করে গেল মরক্কো। এ দিনের ম্যাচের টিভি ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, ‘মরক্কো ইজ দ্য স্টোরি অব দ্য টুর্নামেন্ট’। সত্যিই তাই। সেমিফাইনালের ম্যাচের পর আজকের খবরের সেই বাঁধাগতের শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল – ‘খেলল মরক্কো, জিতল ফ্রান্স’। বলের উপর দখলদারি ফ্রান্সের চেয়ে অনেক বেশি রেখে, ধারাবাহিক ভাবে ফ্রান্সের উপর আক্রমণ চালিয়েও হেরে গেল তারা। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে যারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল, তাদের স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ হল না। বুধবার রাতে আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে আয়োজিত সেমিফাইনালের ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে তারা ০-২ গোলে হেরে গেল।

বিশ্বকাপ ফুটবলের ৯২ বছরের ইতিহাসে পর পর দু’ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা মাত্র দু’ বারই ঘটেছে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইতালি এবং ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে ব্রাজিল। এ বারে ফ্রান্সও কি সেই পথের অনুগামী হবে? সেই উত্তর মিলবে আগামী রবিবার আগামী রবিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায়। এ বারের বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্তিনার মুখোমুখি হবে ফ্রান্স।

ম্যাচের ৫ মিনিটেই গোল

প্রথমার্ধে ম্যাচের ৫ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডান দিক থেকে মরক্কোর ডিফেন্ডার জাওয়াদ এল ইয়ামিককে কাটিয়ে ফ্রান্সের গ্রিজম্যান ক্রস বাড়ান এমবাপ্পেকে। মরক্কোর পেনাল্টি বক্সে এমবাপ্পের পর পর দু’টো শট আটকে দেওয়া হয়। বল রিবাউন্ড করে দূরের পোস্টের কাছে ফুল ব্যাক থিও হের্নান্ডেজের কাছে চলে যায়। মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বোনোকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বল ঢুকে যায় গোলে।

গোল খাওয়ার পরে মরক্কো তেড়েফুঁড়ে ওঠে। ১০ মিনিটে মরক্কোর ইদিন ওনাহির শট বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার হুগো লরিস। ৭ মিনিট পরেই দ্বিতীয় গোল করার সুযোগ আসে ফ্রান্সের কাছে। ওলিভিয়ের জিহুর শট মরক্কোর গোলপোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। জিহু ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ফের সুযোগ হারান। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে ফার্স্ট টাচে যে শট নেন তা পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। জিহু অবশ্য ধীরেসুস্থে শটটা নিতে পারতেন।

প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে ম্যাচে সমতা আনার সুযোগ পায় মরক্কো। জিয়েকের কর্নার থেকে দুর্দান্ত বাইসাইকেল শট করেছিলেন ইয়ামিক। কিন্তু সেই শট ফ্রান্সের পোস্টে গিয়ে লাগে। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে ফ্রান্স, যদিও এই অর্ধে বলের উপর দখলদারি বেশি ছিল মরক্কোর।  

এ দিন মরক্কো দলে দু’ জন নিয়মিত খেলোয়াড় খেলেননি। ওয়ার্ম আপের সময় আহত হওয়ার জন্য এঁদের এ দিন বিশ্রাম দিতে হয়। এঁদের মধ্যে এক জন হলেন সেন্টার হাফ নায়েফ আগুয়ার্দ। আর অন্য জন দলের অধিনায়ক রোমেন সাইস। এর মধ্যে সাইস এ দিন প্রথম ২০ মিনিট খেলার পর মাঠের বাইরে চলে যান। তাঁকে গোড়া থেকেই অসুস্থ অসুস্থ লাগছিল।

অবশেষে ফ্রান্সের দ্বিতীয় গোল

দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সকে বেশ ব্যতিব্যস্ত করে তোলে মরক্কো। ফ্রান্সের গোলমুখে মুহুর্মুহু হানা দিতে থাকে তারা। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে আম্রাবাতের শট ফ্রান্সের গোলের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৫৭ মিনিটে জিয়েকের শট বাঁচিয়ে দেন গ্রিজম্যান।

এর পর ৭১ ও ৭৪ মিনিটে সুযোগ পায় ফ্রান্স। ৭১ মিনিটে গ্রিজম্যানের ফি-কিক চলে যায় থুরামের কাছে। কিন্তু থুরামের হেড গোলের অনেক উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭৪ মিনিটে থুরাম মরক্কোর বক্সে পাস দেন ফোফানাকে। তাঁর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

ম্যাচের ৭৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে ফ্রান্স। মাঠে নামার মাত্র ৪৪ সেকেন্ড পরেই আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁর প্রথম গোলটি করেন রান্ডাল কুলো মুয়ানি। ফ্রান্সের এই গোলটি ছিল দেখার মতো। এ দিন এমবাপ্পেকে ঠেকানোর খুব চেষ্টা করে গেছেন মরক্কোর ডিফেন্ডাররা। এবং এ ব্যাপারে তাঁরা সফলও হয়েছেন। কিন্তু ম্যাচের ৭৯ মিনিটে এমবাপ্পেকে ঠেকানো যায়নি। অসাধারণ দক্ষতায় মরক্কোর ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বল নিয়ে চলে আসেন বক্সে। তাঁর শট আটকে দেওয়ার চেষ্টা হলে বল চলে যায় কুলো মুয়ানির কাছে। মুয়ানির শট মরক্কোর গোলকিপারকে কাটিয়ে গোলে ঢুকে যায়।

০-২ গোলে পিছিয়ে থেকেও মরক্কো হার মানেনি। তারা মরিয়া চেষ্টা চালায় সমতা আনার জন্য। এমনকি ইনজুরি টাইমেও তাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকে। কিন্তু তা সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল ফ্রান্স।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২২: ফাইনালে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন লিওনেল মেসি

 বিশ্বকাপ ২০২২: তুখোড় মেসি-আলবারেজ জুটি, ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ২০১৪-এর পর আবার ফাইনালে আর্জেন্তিনা

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.