গোয়া এফসি: ৩ (বোরহা হেরেরা হ্যাটট্রিক)
ইস্টবেঙ্গল এফসি: ২ (মাদি তালাল, ডেভিড লাললানসাঙ্গা)
কলকাতা: গত মরশুমে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলেছিলেন স্পেনীয় ফুটবলার বোরহা হেরেরা। এই বোরহাকে মরশুমের মাঝখানে ছেড়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। শুক্রবার সেই লাল-হলুদ বাহিনীর বিরুদ্ধেই গোয়া এফসির হয়ে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। এদিন তাঁর খেলা দেখে বোঝাই গেল, নিজের প্রাক্তন দলকে জবাব দিলেন তিনি। কিন্তু ওই কারণেই হয়তো হ্যাটট্রিক করেও বোরহা কোনো উচ্ছ্বাস দেখালেন না।
এবারের আইএসএল-এ ঘরের মাঠে এই প্রথম খেলল ইস্টবেঙ্গল এফসি। কিন্তু ঘরেই হোক, কিংবা বাইরে, খেলার সামগ্রিক ফলের কোনো ইতরবিশেষ হল না। তিন নম্বর ম্যাচেও পরাজিত হয়ে হারের হ্যাটট্রিক করল তারা। শুক্রবার কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত ম্যাচে গোয়া এফসি ৩-২ গোলে হারাল ইস্টবেঙ্গল এফসিকে। ওদিকে গোয়াযও চলতি আইএসএল-এ প্রথম জয়ের মুখ দেখল।
খেলা শুরুর আগে থেকে দর্শকাসনে একটি ব্যানার টাঙানো ছিল। তাতে ইংরেজিতে যা লেখা ছিল তার মর্মার্থ হল – ‘হেরে যাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল নেই। ভুলটা হল হার মেনে নিয়ে চুপ থাকা।’ এবারের আইএসএলে ঘরের মাঠে প্রথমবার খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ ফুটবলারদের জন্যই এমনই একটি কথা ব্যানারে লিখে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু কাজের কাজ হল না। ঘরের মাঠেও জয়ে ফিরতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। খেলার ফলাফলে হতাশ সমর্থকদের কাছ থেকে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি শুনতে হল কোচ কার্সেল কুয়াদ্রাতকে।
দর্শকাসনে সেই ব্যানার। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে গোয়া
শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোয়া। প্রথমার্ধের ২ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের গোল লক্ষ্য করে জোরালো শট নেন দেজান দ্রাজিচ। দ্রাজিচের সেই শট দুর্দান্ত দক্ষতায় আটকে দেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার। এভাবেই অনবরত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ ১৩ মিনিটে প্রথম গোল পেয়ে যায় গোয়া। বাঁদিক দিয়ে উঠে এসে দ্রাজিচ যে নিচু ক্রস নেন তা ডাইভ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন দেবজিৎ। কিন্তু তাঁর হাতে লেগে বল ছিটকে চলে যায় বোরহা হেরেরার পায়ে। বল পেয়েই তা ইস্টবেঙ্গলের জালে জড়িয়ে দিতে কোনো ভুলচুক করেননি হেরেরা।
প্রথম গোল খাওয়ার ৭ মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল খায় ইস্টবেঙ্গল। এবারও গোলদাতা সেই বোরহা। বলা যায়, এই গোলটি উপহারই পেয়ে যান বোরহা। ইস্টবেঙ্গলের বক্সের ডানদিকে হিজাজি মাহেরের পা থেকে অতি সহজে বল ছিনিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ অরক্ষিত বোরহাকে পাস দেন বরিস সিং থাংজাম। যথেষ্ট সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় বোরহা যে শট নেন তা সহজেই ইস্টবেঙ্গলের গোলে ঢুকে যায়। প্রথমার্ধের কুড়ি মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় গোয়া।
জোড়া গোল খেয়ে ইস্টবেঙ্গল কিছুটা তেতে ওঠে। পালটা আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের খেলোয়াড়দের উৎসাহে যেন কিছুটা ভাটা ছিল। তবুও ভাগ্যক্রমে ম্যাচের ২৯ মিনিটে একটি গোল পেয়ে যায় তারা। বক্সের মধ্যে ডানদিকে গোয়ার ডিফেন্ডার নিম দোরজি ফাউল করেন ইস্টবেঙ্গলের মাদি তালালকে। রেফারি পেনাল্টি দেন ইস্টবেঙ্গলকে। পেনাল্টি থেকে গোল করে গোয়ার এগিয়ে থাকার ব্যবধান কমান মাদি তালাল। এর পরে দুপক্ষই গোল করার চেষ্টা করে, কিন্তু লাভ হয়নি। বিরতিতে গোয়া এফসি ২-১ গোলে এগিয়ে থাকে।
ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
দ্বিতীয়ার্ধে দুপক্ষের দুটি গোল
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। লাল-হলুদ বাহিনীর খেলোয়াড়রা বারবার আক্রমণে উঠে আসেন। কিন্তু তাঁদের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিতে থাকেন গোয়ার ফুটবলাররা। এভাবেই আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের খেলা চলতে চলতে ৭১ মিনিটে গোল পেয়ে যায় গোয়া। এবং বোরহার হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ হয়। ডানদিক থেকে উদান্ত সিংয়ের কাছ থেকে পাস পেয়ে বোরহা ইস্টবেঙ্গলের বক্সে ঢুকে পড়েন এবং প্রথমে ক্লেইটন সিলভা এবং পরে হিজাজিকে কাটিয়ে বাঁপায়ের শটে পরাস্ত করেন দেবজিৎকে। গোয়া এফসি এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে। বোরহার হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ হয়।
ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ন’ মিনিট আগে গোয়ার কার্ল ম্যাকহিউ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। গোয়া দশজনে খেলতে শুরু করে আর তখন গোল করার সুযোগ পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ৮৪ মিনিটের মাথায় আনোয়ার আলির দূরপাল্লার শট বাঁচিয়ে দেন গোয়ার গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমনি। ফিরতি বলে গোল করে দেন সদ্য নামা ডেভিড লাললানসাঙ্গা । এর পরে ম্যাচে সমতা আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। কিন্তু ফল অপরিবর্তিতই থাকে।
এদিনের ম্যাচের পর লিগ টেবিলে ইস্টবেঙ্গল থাকল দ্বাদশ স্থানে। ৩টি ম্যাচ থেকে তারা এখনও কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেনি। টেবিলের একদম নীচে আছে হায়দরাবাদ এফসি। তারাও ২টি ম্যাচ থেকে কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেনি। ওদিকে গোয়া এফসি ৩ ম্যাচের মধ্যে প্রথম জয় পেয়ে লিগ টেবিলে উঠে এল পঞ্চম স্থানে। তাদের সংগৃহীত পয়েন্ট ৪।
আরও পড়ুন
আইএসএল: চেন্নাইকে হারিয়ে এবারের অভিযানে জয়ের মুখ দেখল মহমেডান স্পোর্টিং