বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতা: দ্বন্দ্ব আছে, মতের অমিল আছে আবার ৬০ বছরের পুরনো বন্ধুত্বও আছে। টুটু-পুত্র সৃঞ্জয় এবং অঞ্জন-কন্যা সোহিনীকে ক্লাব প্রশাসনে মেনে নিতেও কোনো অসুবিধা নেই দু’জনের। বস্তুত, শতাব্দীপ্রাচীন মোহনবাগান ক্লাবকে বসু ও মিত্র পরিবারের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারলে সমস্যা থাকত না কিছুই। কিন্তু তা তো সহজে হওয়ার নয়। কারণ, সদস্যরা আছেন। ভোট আছে আবার ভোট জোগাড়ের খেলাও আছে। তার জন্য বিভিন্ন ক্ষমতাবানদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। সেটা না হলে দেবাশিস দত্তকে বলি দিয়ে এতদিনে হয়তো এক হয়ে যেতেন টুটু ও অঞ্জন।কিন্তু কোনো সমঝোতায় নারাজ দুই গোষ্ঠীর দুই সেনাপতি। কারণ তাঁদের দুজনেরই নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
কর্মসমিতির একদল সদস্য অঞ্জন মিত্রর বিরোধিতা করে পদত্যাগ করার পরই অঞ্জনবাবু শক্তিশালী তৃণমূল লবির শরণাপন্ন হন। সেই সুযোগেই অত্যাধিক সক্রিয় হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঠ সচিব থেকে ফুটবল সচিব হন তিনি। তিনি অঞ্জনবাবুকে কথা দিয়েছেন, ভোট হলে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার ক্লাব সদস্যদের ভোটের দায়িত্ব তিনি নেবেন। অন্যদিকে হাওড়ার ভোট এমনিতেই দ্বিধাবিভক্ত। ফলে ভোটের জন্য বাবুনের ওপর নির্ভর করতেই হচ্ছে অঞ্জনকে। কিন্তু বাবুন চাইছেন সম্পূর্ণ টুটু গোষ্ঠীকে ক্লাব থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আগামী দিনে ক্লাবের সচিব হওয়ার। তাই সৃঞ্জয়রা ক্লাবে থাকুক, সেটা তিনি চান না। বাবুনের তোয়াক্কা না করে টুটু বসুর সঙ্গে সমঝোতা করার দিকে এগোলে বাবুন তথা মুখ্যমন্ত্রী যদি বিরক্ত হন, সেই ভয় রয়েছে অঞ্জনের। তার ওপর দেবাশিস দত্তর উপর তাঁর ব্যাপক ক্ষোভও রয়েছে। দেবাশিস যাতে পেছনের দরজা দিয়ে না ঢুকে যেতে পারেন, সেটাও অঞ্জন নিশ্চিত করতে চান। ফলে আপাতত তিনি বাবুনের ওপর নির্ভর করেই চলছেন।
অন্যদিকে সৃঞ্জয়-দেবাশিসরা পদত্যাগ করার সময় জল মাপতে ভুল করেছিলেন। অঞ্জন মিত্র যে তৃণমূলের ছায়া পেয়ে যাবেন, সেটা তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি। এই অবস্থায় একা হয়ে যাওয়া আটকাতে তাঁরা দলে টেনেছেন কর্মসমিতির সিনিয়র পদত্যাগী সদস্য মহেশ টেকরিওয়ালকে। মহেশ টুটুগোষ্ঠীকে সবরকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু তিনি অঞ্জনের সঙ্গে সমঝোতায় নারাজ। তাঁরও নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এই অবস্থায় একা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারছেন না টুটুও। অঞ্জনের অবশ্য মহেশকে মেনে নিতে আপত্তি নেই। তাঁর আপত্তি দেবাশিস দত্ত, অসিত চ্যাটার্জি ও সত্যজিত চ্যাটার্জিকে নিয়ে।
কিন্তু বাবুন ব্যানার্জি মহেশকে মানতে নারাজ। ফলে দুই বাল্যবন্ধুর সমঝোতা হওয়াটা বেশ কঠিন। বাজারে নতুন কোনো ফর্মুলা আসে কিনা সেটাই দেখার।