মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: ১ (জ্যাসন কামিংস)
চেন্নাইয়িন এফসি: ০
কলকাতা: এ বলে আমায় দেখ, আবার ও বলে আমায় দেখ। এক বার এ লিগ টেবিলের শীর্ষে তো পরের বার ও লিগ টেবিলের শীর্ষে। এ বারের আইএসএল-এ মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট আর বেঙ্গালুরু এফসি-র কথা বলা হচ্ছে। এক বার বেঙ্গালুরু এফসি টেবিলের শীর্ষে চলে যায় তো পরের বার মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শীর্ষে চলে যায়। এ বার শীর্ষে যাওয়ার পালা ছিল মোহনবাগানের। ঠিক তা-ই হল। জ্যাসন কামিংসের গোলে চেন্নাইয়িন এফসিকে হারিয়ে বেঙ্গালুরুকে টপকে গেল মোহনবাগান এবং চলে গেল টেবিলের শীর্ষে।
শনিবার সল্ট লেকের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আরও একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার লক্ষ করা গেল। এ দিনের ম্যাচে মোহনবাগান গোল পেল ম্যাচের ৮৬ মিনিটে। আইএসএলের ইতিহাসে এর আগে অন্তত তিন বার মোহনবাগান ৮৫ মিনিট বা তার পরে গোল করে ম্যাচ জিতেছে। এ বারের আইএসএল-এ ২৩ সেপ্টেম্বর নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ৮৭ মিনিটে জ্যাসন কামিংসের গোলে জিতেছিল মোহনবাগান।
২০২২-২৩-এর মরসুমে এ রকম ঘটনা দুটি ম্যাচে ঘটেছিল। নর্থইস্ট ইউনাইটেড ও জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে শুভাশিসের ৮৯ মিনিটের গোলে ও জামশেদপুরের বিরুদ্ধে হুগো বুমৌসের ৯১ মিনিটের গোলে জেতে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
গোল করে কামিংসের উল্লাস। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আইএসএল-এর যে চারটি ম্যাচে মোহনবাগান ম্যাচ শেষ হওয়ার প্রায় শেষ দিকে গোল করে জিতল, তার মধ্যে দুটি ম্যাচই নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে।
কলকাতার যুবভারতীতে খেলা হচ্ছে আর মোহনবাগান জেতেনি, এ রকম ঘটনা ফুটবলের ইতিহাসে আগে কবে ঘটেছে, এই চিন্তা যখন সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মনে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময়েই গোল পেল মোহনবাগান। ম্যাচের ৮৬ মিনিটের মাথায় জ্যাসন কামিংসের গোলে চলতি আইএসএলের ষষ্ঠ জয় তুলে নিল সবুজ-মেরুন বাহিনী।
খাতায়-কলমে এগিয়ে ছিল মোহনবাগান
এ দিনের ম্যাচে খাতায়-কলমে মোহনবাগানের আক্রমণের ধার ছিল বেশি। বল দখলে তারা প্রতিপক্ষের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিল। শতাংশের হিসাবে ৬৪.৪। মোহনবাগানের সফল পাসের হার ৮১%, অন্য দিকে চেন্নাইয়ের ৬৫%। চেন্নাইয়ের গোলে মোহনবাগান শট নিয়েছে ৬টা, আর মোহনবাগানের গোলে চেন্নাই শট নিয়েছে ৩টি। মোহনবাগান কর্নার পেয়েছে ৮টা আর চেন্নাই ৩টি। তবু যেন মোহনবাগানের খেলায় তেমন তেজ ছিল না।
গত বারের লিগ শিল্ডজয়ীরা এ দিন প্রায় শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেললেও সে খেলায় তেমন যেন ঝাঁজ ছিল না। শেষ পর্যন্ত তুরুপের তাসটি খেললেন মোহনবাগানে স্প্যানিশ কোচ খোসে মোলিনা। জ্যাসন কামিংসকে নামালেন ম্যাচের ৭৫ মিনিটে আর ১০ মিনিট পরে গ্রেগ স্টুয়ার্ট। এর পরেই দুই তারকা জয়সূচক গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এবং তাঁদের যৌথ উদ্যোগেই মোহনবাগান গোল পায়।
ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
নির্ধারিত সময়ের মিনিট চারেক আগে গোল
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের মিনিট চারেক আগে দিমিত্রি পেত্রাতোসের জায়গায় মোলিনা নামান গ্রেগ স্টুয়ার্টকে। নেমেই তিনি চেন্নাইয়ের গোল লক্ষ্য করে শট নেন কিন্তু সেই শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল মনবীর, আশিসের পা হয়ে ফের চলে আসে চেন্নাইয়ের বক্সের বাইরে থাকা স্টুয়ার্টের কাছে। স্টুয়ার্ট সেই বল পাস করে দেন কামিংসকে। কামিংস বক্সের মাথা থেকে সোজা চেন্নাইয়ে গোলে শট নেন। বল চেন্নাইয়ের গোলকিপারকে পরাস্ত করে ঢুকে যায় গোলে।
অতিরিক্ত সময়ে মোহনবাগানের গোলের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, গোল আর বাড়েনি। ম্যাচের ৯৩ মিনিটে ফের স্টুয়ার্টের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন কামিংস। কিন্তু এ বার চেন্নাইয়ের বিকাশ ইয়ুমনামের গায়ে লেগে বল গোলের বাইরে চলে যায়। দু’ মিনিট পরে বক্সের ঠিক মাথা থেকে ফের গোলে শট নেন স্টুয়ার্ট। কিন্তু তা বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল গোলে ঠেলেও দেন তিনি। কিন্তু এ বার কামিংস অফসাইডে থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। খেলাতেও যবনিকা পড়ে।
লিগ টেবিলে অবস্থান
এ দিনের ম্যাচের পর মোহনবাগান এবং বেঙ্গালুরু, দুই দলেরই ঝুলিতে ৯টি ম্যাচে ২০টি করে পয়েন্ট এল। কিন্তু গোলপার্থক্যের বিচারে মোহনবাগান টেবিলের শীর্ষে চলে গেল। আর ১০ ম্যাচ থেকে ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে চেন্নাইয়িন এফসি থাকল অষ্টম স্থানে।