মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: ২ (বরিস সিং থাঙ্গজাম আত্মঘাতী, গ্রেগ স্টুয়ার্ট) এফসি গোয়া: ০
কলকাতা: প্রথম লেগে যাদের কাছে হেরে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী, শনিবার ফিরতি লেগে সেই দলকেই হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল তারা। আর একই সঙ্গে সৃষ্টি করল ইতিহাস। আইএসএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করে এ বার লিগ পর্ব শেষ করল চ্যাম্পিয়ন দল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সল্ট লেকের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এফসি গোয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে এই প্রথম মোহনবাগান টানা দ্বিতীয় বার আইএসএলের শিল্ড জয় করল।
২৪ ম্যাচ থেকে ৫৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে মোহনবাগান লিগের শীর্ষ স্থানে থাকল। এবং সমসংখ্যক ম্যাচ থেকে ৪৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে দ্বিতীয় স্থানে থেকে এফসি গোয়া গেল প্লে অফে।

জয়ের আনন্দ। গ্রেগ স্টুয়ার্ট, টম অলড্রেড, আলবার্তো রদ্রিগুয়েজ এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
আরও কিছু নজির সবুজ-মেরুনের
এ দিনের জয়ের মধ্যে দিয়ে আরও কিছু নজির গড়ল মেরিনার্স। সবচেয়ে বেশি সময় (৬২৬ মিনিট) গোল না খাওয়ার নজিরও গড়ল তারা। টানা ছ’টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার নজিরও আইএসএলে এই প্রথম গড়ল মোহনবাগান। শনিবার তারা চলতি মরশুমের আইএসএল-এ ১৭ নম্বর জয় পেল। আইএসএল-এ এটাও একটা নজির।
একই সঙ্গে আর একটা নজির গড়ল মোহনবাগান। একই মরশুমে ১১টি হোম ম্যাচে জয়। এটিও আইএসএল-এ নয়া নজির। একের পর এক নজির গড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনীর চ্যাম্পিয়ন হওয়া আইএসএল-এর ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

গোল করে উল্লাস গ্রেগ স্টুয়ার্টের। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
বাগানের দু’টি গোল
এ বারের আইএসএল-এর ফাইনালে যে দু’টি দল আবার মুখোমুখি হতে পারে, সেই মোহনবাগান আর এফসি গোয়া শনিবার সমানে সমানে লড়াই করল। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসল মোহনবাগান। তারা ২-০ গোলে জিতল বটে, তবে এই জয়ের ব্যবধান আরও বেশি হতে পারত যদি না প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে মনবীর সিংয়ের গোলটি দিমিত্রি পেত্রাতোসের হ্যান্ডবলের জন্য বাতিল না হত।

আইএসএল শিল্ড জয়। স্ত্রীয়ের সঙ্গে মোহনবাগানের অধিনায়ক শুভাশিস বোস। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
অবশেষে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে প্রথম গোলের জন্য দ্বিতীয়ার্ধের ৬২ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। তবে এই গোলটি কার্যত এফসি গোয়ার উপহার মোহনবাগানকে। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের আশিক কুরুনিয়ানের সঙ্গে বার বার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন গোয়ার তরুণ মিডফিল্ডার বরিস সিং থাঙ্গজাম। ফলে তাঁরই মনসংযোগে ব্যাঘ্যাত ঘটে এবং ৬২ মিনিটের মাথায় আত্মঘাতী গোল করে বসেন। নিজেদের বক্সের বাইরে থেকে ব্যাক হেড করে গোলকিপার হৃত্বিক তিওয়ারিকে বল দিতে গিয়েছিলেন বরিস। কিন্তু দেখেননি যে গোল ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছেন। তাঁর হেড থেকে বল স্বচ্ছন্দে ঢুকে যায় নিজেদেরই গোলে। মোহনবাগান এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের চার মিনিটের মাথায় প্রায় ফাঁকা মাঠে যখন বল ক্লিয়ার করতে যাচ্ছিলেন এফসি গোয়ার অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন, তখন তাঁর পা থেকে বল ছিনিয়ে নেন পরিবর্ত হিসেবে নামা জেসন কামিংস। কামিংস বল ছিনিয়ে নিয়ে পাঠিয়ে দেন গ্রেগ স্টুয়ার্টের পায়ে। স্টুয়ার্ট বক্সে ঢুকে হৃত্বিককে পরাস্ত করে সোজা গোলে বল ঠেলে দেন। মোহনবাগান এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। মিনিট তিনেক পরেই খেলা শেষ হয়। জয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে যুবভারতীর গ্যালারি।

যুবভারতীর গ্যালারিতে আনন্দের বন্যা। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
প্লে অফে যাওয়ার লড়াই ওড়িশা ও মুম্বইয়ের মধ্যে
আইএসএল টেবিলে প্রথম পাঁচটি স্থানে থাকা দল ইতিমধ্যেই প্লে অফে চলে গিয়েছে। এরা হল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, এফসি গোয়া, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, বেঙ্গালুরু এফসি এবং জামশেদপুর এফসি। ছ’ নম্বর দল হিসাবে কে প্লে অফে যাবে সেই লড়াই ওড়িশা এফসি এবং মুম্বই সিটি এফসি-র মধ্যে। ওড়িশা ২৪ ম্যাচ থেকে ৩৩ পয়েন্ট পেয়ে লিগ অভিযান শেষ করেছে। মুম্বইয়ের সংগ্রহে রয়েছে ২৩ ম্যাচ থেকে ৩৩ পয়েন্ট। আগামী মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু এফসি-র মুখোমুখি হচ্ছে মুম্বই এফসি। সেই ম্যাচে যদি মুম্বই জিতে যায় বা ম্যাচ ড্র হয়, তা হলে তারা ওড়িশাকে পিছনে ফেলে প্লে অফে চলে যাবে। কিন্তু মুম্বই যদি হেরে যায় তা হলে গোলের ব্যবধানের হিসাবে ওড়িশা যাবে প্লে অফে। মঙ্গলবার ছবিটা স্পষ্ট হবে।